সিরিয়ার শহর হোমসের কাছে রাস্তানে মাটি খুঁড়ে ১৬০০ বছরের পুরোনো মোজাইকের তৈরি একটি মেঝের সন্ধান পাওয়া গেছে। প্রায় সোয়া তিন হাজার বছর আগে সংঘটিত ট্রোজান যুদ্ধের দৃশ্যপট চিত্রিত রয়েছে এই মোজাইকে।
সিরিয়ার জাদুঘর ও পুরাকীর্তির মহাপরিচালক এবং খনন ও প্রত্নতাত্ত্বিক গবেষণার দায়িত্বে থাকা হুমাম সাদ বুধবার বলেছেন, আগে সন্ধান পাওয়া এ ধরনের মোজাইকগুলোর মধ্যে এটি প্রাচীনতম নয়, কিন্তু এটিই এখন পর্যন্ত পাওয়া সবচেয়ে পূর্ণাঙ্গ। আগের মোজাইকগুলোতে এত বিস্তারিত নকশা পাওয়া যায়নি। নানা বিষয়ের মধ্যে এই মোজাইকে ট্রোজান যুদ্ধের দৃশ্যপট তুলে ধরা হয়েছে।
মোজাইকটি প্রায় ২০ মিটার লম্বা এবং ছয় মিটার চওড়া। সিরিয়ার উত্তরাঞ্চলের হোমসের রাস্তানে একটি ভবনের নীচে এই মোজাইকের সন্ধান পাওয়া গেছে। গৃহযুদ্ধে বিধ্বস্ত সিরিয়ায় বিদ্রোহীদের শক্ত ঘাঁটি হিসেবে পরিচিত রাস্তান, এখানে তুমুল যুদ্ধ সংঘটিত হয়েছে। কয়েক বছর ধরে যুদ্ধ চালিয়ে ২০১৮ সালে সিরীয় সরকার হোমস পুনরুদ্ধার করে।
রোমান পুরাণের সমুদ্রের দেবতা নেপচুন ও তার ৪০ উপপত্নীকেও চিত্রিত করা হয়েছে মোজাইকে।
যেভাবে মিলল
যুদ্ধবিধ্বস্ত সিরিয়ার তৃতীয় বড় শহর হোমসের রাস্তানে সম্প্রতি প্রত্নতাত্ত্বিক খনন কাজ চালানো হয়। সিরিয়ার যাদুঘর ও প্রত্নতত্ত্ব বিভাগের তরফে যৌথভাবে চলছিল এই খনন কাজ। খুঁড়তে খুঁড়তে মাটির গভীরে বিরাট একটি মেঝের সন্ধান পান তারা।
অধ্যাপক হুমাম সাদ জানিয়েছেন, ১ হাজার ৩০০ স্কোয়ার ফুটের ওই মেঝেটির নির্মাণ হয়েছিল চতুর্থ শতাব্দীতে। অর্থাৎ প্রায় ১৬০০ বছরের আগে তৈরি করা হয়েছিল এই মেঝে। তবে এর নির্মাণকালের সময় আরও নিশ্চিতভাবে জানতে কার্বন টেস্টিং করা হবে বলেও জানিয়েছেন তিনি।
১ হাজার ৩০০ স্কোয়ার ফুটের ওই মেঝেটির নির্মাণ হয়েছিল চতুর্থ শতাব্দীতে।
কাদের তৈরি এই বিরাট মেঝে?
অধ্যাপক হুমাম সাদের দাবি, রোমানদের হাতেই এই মেঝে তৈরি হয়েছিল। তবে এটি ঘরের মধ্যে নাকি স্নানাগারে — কোথায় রাখা ছিল, তা স্পষ্ট করে বলতে পারেননি তিনি।
বিরাট এই মেঝেটি একটি পুরনো বাড়ির তলায় চাপা পড়া অবস্থায় ছিল বলে জানিয়েছেন তিনি। অধ্যাপক সাদের কথায়, “অসংখ্যা খোপ কাটা ওই মেঝেতে মোজাইক করা রয়েছে। রংবেরঙের ছোট ছোট অথচ খুব ছুঁচলো পাথর দিয়ে এই মোজাইকের কাজ করা হয়েছে। এই কাজের জন্য হাফ ইঞ্চি লম্বা পাথর ব্য়বহার করা হয়েছে।” শিল্পকীর্তির দিক থেকে এর গুরুত্ব অপরিসীম বলেই জানিয়েছেন তিনি।
খননকাজ চালিয়ে যাওয়ার সিদ্ধান্ত
বেশ কয়েক বছর আগে একটি বাড়ির নিচে এই মোজাইকের কিছু অংশ আবিষ্কৃত হয়েছিল। তখন সেখানে লড়াই চলছি। বিদ্রোহীরা সুড়ঙ্গ তৈরি করার সময় মোজাইকের অংশবিশেষ আবিষ্কৃত হয়।
প্রত্নতাত্ত্বিক সাদ বার্তা সংস্থা এপিকে বলেছেন, পুরোনো যে বাড়িটির তলায় মেঝেটি চাপা পড়েছিল সেটি কি ধরনের বাড়ি ছিল সেটা আমরা এখনও বুঝতে পারছি না। আমাদের খনন কাজ এখনও শেষ হয়নি। কাজ চালিয়ে যাওয়া হবে।
ধারণা করা হচ্ছে যে মোজাইকটি আসলে আরও বড় হতে পারে।
চলতে থাকা গৃহযুদ্ধে সিরিয়ার অনেক গুরুত্বপূর্ণ প্রত্নতাত্ত্বিক নিদর্শন ধ্বংস ও লুটপাট করা হয়েছে। এর সবচেয়ে বড় উদাহরণ রয়েছে সিরিয়ার ঐতিহ্যবাহী শহর পালমিরায়। ২০১৫ সালের মে মাসে রোমান সভ্যতার নিদর্শন বহনকারী পালমিরার নিয়ন্ত্রণ নেই জঙ্গিগোষ্ঠী ইসলামিক স্টেট। ধর্মীয় প্রসঙ্গ টেনে এরপর সেখানকার গুরুত্বপূর্ণ প্রত্নতাত্ত্বিক নিদর্শন ধ্বংস করে দেয় তারা।
গত ১১ বছর ধরে যুদ্ধ চলছে সিরিয়া। যুদ্ধের মধ্যে বহু প্রত্নতাত্ত্বিক নিদর্শন সিরিয়া থেকে লুঠ হয়ে গিয়েছে বলে দাবি করেছে সেখানকার সরকার। ২০১৬-র পর কিছুটা শান্তি ফিরেছে মধ্য প্রাচ্যের এই দেশে। তার পর থেকেই ফের প্রত্নতাত্ত্বিক নিদর্শন উদ্ধারে মন দিয়েছে সিরিয়ার সরকার।
এসডব্লিউ/এমএন/কেএইচ/১৬৩৩
আপনার মতামত জানানঃ