চাঁপাইনবাবগঞ্জের শিবগঞ্জ সীমান্ত দিয়ে বাংলাদেশের ভেতরে অনুপ্রবেশ করে মো. এসলাম আলী (৬৫) নামে এক কৃষককে পেটানোর অভিযোগ উঠেছে ভারতীয় সীমান্তরক্ষী বাহিনীর (বিএসএফ) বিরুদ্ধে।
ঘটনাটি বুধবার (১২ অক্টোবর) দুপুরে ঘটলেও বৃহষ্পতিবার (১৩ অক্টোবার) সকালে বর্ডার গার্ড বাংলাদেশ (বিজিবি) বিষয়টি নিশ্চিত করেছে।
আহত কৃষক উপজেলার মনাকষা ইউনিয়নের শিংনগর মোড়ল পাড়া গ্রামের এরফান আলীর (মৃত) ছেলে এসলাম আলী (৭০)। এ ঘটনায় স্থানীয়দের মাঝে ক্ষোভ বিরাজ করছে। ঘটনার প্রতিবাদ জানিয়ে বিএসএফকে চিঠি দিয়েছে বর্ডার গার্ড বাংলাদেশ (বিজিবি)।
স্থানীয় এক ব্যবসায়ী নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, বুধবার দুপুর ২টার দিকে নিজের পাটখেতে কাজ করছিলেন এসলাম আলী। এ সময় দৌলতপুর ক্যাম্পের ছয়-সাত জন বিএসএফ সদস্য বাংলাদেশের সীমানায় প্রবেশ করে রাইফেলের বাঁট এবং লাঠি দিয়ে পিটিয়ে তার এক হাত এবং আরেক হাতের আঙ্গুল ভেঙে দেয়। তাকে এলোপাতাড়ি পিটিয়ে ফেলে রেখে চলে যায় তারা। বিষয়টি স্থানীয়রা দেখতে পেয়ে এসলাম আলীকে উদ্ধার করে প্রথমে শিবগঞ্জ উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে যায়। সেখানে প্রাথমিক চিকিৎসা দিয়ে উন্নত চিকিৎসার জন্য রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে স্থানান্তর করা হয়। বর্তমানে তিনি সেখানেই চিকিৎসাধীন।
হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় আহত কৃষক এসলাম জানান, জেলার শিবগঞ্জ উপজেলার মাসুদ পুর সীমান্তের অধীনে বুধবার দুপুরে বাংলাদেশ ভূখণ্ডের দশবিঘি এলাকায় নিজের জমিতে পাট কাটতে গিয়েছিলেন এসলাম। এসময় সীমান্তের ওপাড়ের ভারতের সভাপুর ক্যাম্পের বিএসএফ সদস্যরা বাংলাদেশের সীমান্তে অনুপ্রবেশ করে রাইফেলের বাট দিয়ে তার মাথায় ও হাতে আঘাত করতে থাকে।
পরে স্বজনরা তাকে উদ্ধার করে প্রথমে শিবগঞ্জ উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ও পরে রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে (রামেক) ভর্তি করেন।
এ ব্যাপারে জানতে চাইলে মনাকষা ইউনিয়ন পরিষদের ৯ নং ওয়ার্ডের ইউপি সদস্য (মেম্বার) সেরাজুল ইসলাম বলেন, ‘বিএসএফ প্রায়ই বাংলাদেশে ঢুকে কৃষকদের নির্যাতন করছে। এরই ধারাবাহিকতায় কৃষক এসলামকে নির্যাতন করেছে। একজন বৃদ্ধ মানুষকে অন্যায়ভাবে মেরে দুই হাত ভেঙে দিয়েছে। বিষয়টি অত্যন্ত দুঃখজনক।’
বিএসএফ প্রায়ই বাংলাদেশে ঢুকে কৃষকদের নির্যাতন করছে। এরই ধারাবাহিকতায় কৃষক এসলামকে নির্যাতন করেছে। একজন বৃদ্ধ মানুষকে অন্যায়ভাবে মেরে দুই হাত ভেঙে দিয়েছে। বিষয়টি অত্যন্ত দুঃখজনক।’
শিবগঞ্জ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) চৌধুরী জোবায়ের আহমেদ বলেন, ‘সীমান্তে বৃদ্ধকে নির্যাতনের বিষয়টি লোকমুখে শুনেছি। বিজিবি সদস্যরা ব্যবস্থা নেবে।’
বাংলাদেশের সীমানায় প্রবেশ করে বৃদ্ধকে পিটিয়ে আহত করার তথ্য নিশ্চিত করেছেন ৫৩ বিজিবি ব্যাটালিয়নের অধিনায়ক লেফটেন্যান্ট কর্নেল মোহাম্মদ সুরুজ মিয়া। তিনি বলেন, ‘ঘটনার পরপরই আহত ব্যক্তির পরিবারের মাধ্যমে বিষয়টি জানতে পারে বিজিবি। পরে বিজিবি আহত ব্যক্তির ছেলেকে নিয়ে ঘটনাস্থল পরিদর্শন করে। সেই সঙ্গে টহল জোরদার করা হয়েছে সীমান্তে।’
এ ব্যাপারে বিএসএফকে কড়া প্রতিবাদ জানানো হয়েছে এবং এ ঘটনার ব্যাখ্যা চেয়ে পতাকা বৈঠকের আহ্বান জানানো হয়েছে বলেও জানান বিজিবি কর্মকর্তা সুরুজ মিয়া।
এর আগে ঠাকুরগাঁওয়ের রাণীশংকৈল ধর্মগড় সীমান্তে বাংলাদেশের অভ্যন্তর থেকে এক যুবককে তুলে নিয়ে বর্বর নির্যাতনের পর ছেড়ে দিয়েছে ভারতীয় সীমান্ত রক্ষাকারী বাহিনী (বিএসএফ)। গত ৬ অক্টোবর নির্যাতনের শিকার ওই যুবককে রাণীশংকৈল স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স হাসপাতালে ভর্তি করেন তার স্বজনরা।
স্বজন ও স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, বৃহস্পতিবার দুপুরবেলা আল আমিনসহ কয়েকজন ধর্মগড় সীমান্তের ৩৭২/৩ নম্বর সীমান্ত পিলারের বাংলাদেশ অভ্যন্তরের পাশ দিয়ে ঘাস কাটার জন্য প্রবেশ করে। এসময় ভারতের শ্রীপুর ক্যাম্পের টহলদল আল আমিনকে শুন্য রেখা থেকে বিএসএফ সদস্যরা আটক করে ভারতের ভেতর নিয়ে যায়। সেখানে বিএসএফ সদস্যরা বুট দিয়ে শরীরের বিভিন্ন অংশে খোচায় এবং বেধড়ক মারপিট করে। পরে বিএসএফ সদস্যরা গুরুতর অবস্থায় সীমান্তের কাছে ফেলে যায়।
নানা সময়ে বর্ডার গার্ড বাংলাদেশ (বিজিবি) ও ভারতীয় সীমান্তরক্ষী বাহিনী বিএসএফের শীর্ষ পর্যায়ের সম্মেলনে সীমান্তে নন-লিথ্যাল উইপন (প্রাণঘাতী নয়) অস্ত্র ব্যবহারের সিদ্ধান্ত হয়। সীমান্ত হত্যা শূন্যের কোঠায় নামিয়ে আনার ব্যাপারে সদিচ্ছার কথাও বলেন নীতিনির্ধারকরা। এমনকি উভয় দেশের মধ্যে রাজনৈতিক পর্যায়ের আলোচনায়ও সীমান্ত হত্যা শূন্যে নামিয়ে আনতে প্রতিশ্রুতি দিয়েছিল ভারত; কিন্তু বাস্তবে তার প্রতিফলন খুব কমই চোখে পড়ছে। সম্প্রতি বাংলাদেশ-ভারত সীমান্তে হত্যার ঘটনা উদ্বেগ বাড়িয়ে তুলেছে।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, কেবল রাজনৈতিক ইচ্ছাশক্তিই সীমান্তে হত্যার সংখ্যা হ্রাস করতে পারে। গোটা দেশের আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিশ্লেষকরা এ প্রশ্নে একমত যে, কেবল ভারতের রাজনৈতিক নেতৃত্বকে বাংলাদেশের সরকার বাধ্য করতে পারলেই সীমান্ত হত্যা বন্ধ করা সম্ভব হতে পারে।
তারা মনে করেন, সীমান্ত হত্যার পেছনেও ঐতিহাসিক রাজনৈতিক সন্দেহ রয়েছে। ভারত ছোট দেশকে সব সময় ছোট করেই রাখতে চায়। তাই সীমান্ত হত্যাসহ বিভিন্ন সমস্যা সমাধান হচ্ছে না। বাংলাদেশ ও ভারতের সম্পর্ক শুধু কাগজে কলমে। তাই ভারতের ক্ষমতাসীনদের মধ্যে বাংলাদেশকে দাবিয়ে রাখার প্রবণতা লক্ষ্য করা যায়।
এসডব্লিউ/এমএন/কেএইচ/১৭৩৯
আপনার মতামত জানানঃ