ইসরায়েলের দখলকৃত ফিলিস্তিনের পশ্চিমতীরে এক সমকামী ফিলিস্তিনি যুবককে শিরশ্ছেদে হত্যা করা হয়েছে। ২৫ বছর বয়সী এই যুবককে হত্যার ঘটনায় এক সন্দেহভাজনকে গ্রেপ্তার করেছে ফিলিস্তিনি পুলিশ। ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম বিবিসি এ খবর জানিয়েছে।
ইসরায়েলের এলজিবিটিকিউ (নারী ও পুরুষ সমকামী, উভকামী ও রূপান্তরকামী) গোষ্ঠীগুলো জানিয়েছে, শিরশ্ছেদের শিকার যুবক আহমদ আবু মারহিয়া ইসরায়েলে আশ্রয় খুঁজছিলেন। সমকামী হওয়ার কারণে তাকে হুমকি দেওয়া হচ্ছিল।
হত্যাকাণ্ডের ঘটনাস্থলের ভিডিও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়েছে। এতে হত্যাকাণ্ডের মোটিভ নিয়ে প্রশ্ন ওঠছে। তবে পুলিশ বলছে, নিশ্চিতভাবে এখনও কিছু বলা যাচ্ছে না।
বিবিসির প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, পশ্চিম তীরের হেবরন শহরের বাসিন্দা আহমদ আবু মারহিয়া গত দুই বছর আগেই পরিবার পরিজন ছেড়ে ইসরায়েলে পাড়ি জমান এবং সেখানকার সমকামীদের আশ্রয়ে থাকা শুরু করেন। হেবরনে থাকাকালে বিভিন্ন মাধ্যম থেকে টানা হুমকি আসার কারণেই ইসরায়েলে গিয়েছিলেন; সেখানকার সমকামী অধিকার আন্দোলনেও যোগ দেন তিনি।
কিন্তু ইসরায়েলে যাওয়ার পরও বিপদমুক্ত হননি আবু মারহিয়া। সেখানেও হুমকি পাচ্ছিলেন। এ কারণে সম্প্রতি ইসরায়েল ছেড়ে ইউরোপে যাওয়ার চেষ্টা করছিলেন তিনি।
আবু মারহিয়ার ইসরায়েলি বন্ধুরা বিবিসিকে জানিয়েছেন, প্রাণনাশের হুমকি থাকা সত্ত্বেও পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে দেখা করতে ও কাজের সূত্রে প্রায়ই হেবরন যেতেন আবু মারহিয়া। কয়েক দিন আগে তিনি ইসরায়েল থেকে হেবরনের উদ্দেশে রওনা হন। কিন্তু তার পর থেকেই কোনো খোঁজ পাওয়া যাচ্ছিল না তার।
মারহিয়ার বন্ধু-বান্ধবদের উদ্ধৃতি দিয়ে ইসরায়েলি সংবাদমাধ্যম জানিয়েছে, তাকে অপহরণ করে পশ্চিম তীরে নিয়ে যাওয়া হয়েছিল।
তবে মারহিয়ার পরিবার বলছে, হেবরনে তিনি নিয়মিত পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে সাক্ষাৎ করা এবং কাজের জন্য যেতেন। হত্যার কারণ হিসেবে সমকামিতার যে অভিযোগ করা হচ্ছে তা গুজব বলে দাবি করেছে পরিবারটি।
ফিলিস্তিন এবং ইসরায়েলের সামাজিক ও ধর্মীয়ভাবে সবচেয়ে রক্ষণশীল এলাকাগুলোতে সমকামিতা স্বীকৃত নয়।
ফিলিস্তিন রাষ্ট্র সমকামীদের অধিকার প্রদানের ক্ষেত্রে তেমন একটা মাথা ঘামায়না। নারীদের মধ্যকার সমকাম রাষ্ট্রীয় আইনে অবৈধ না হলেও পুরুষ-পুরুষ যৌন সংসর্গ বা প্রেম নিষিদ্ধ। গাজাতে সমকামিতা আইনগতভাবে অবৈধ তবে পশ্চিম তীরে নয়।
সংবাদমাধ্যমের খবরে বলা হয়েছে, মানবিক কারণে অনুমতি পেয়ে তিনি বাড়ি থেকে পালিয়েছিলেন। কানাডায় যাওয়ার আশা ছিল তার।
এই ঘটনা আমাদের সমাজ, মূল্যবোধ, প্রথা ও মৌলিক মনুষ্যত্বের সকল রেড লাইন অতিক্রম করে গিয়েছে।
ইসরায়েলের সমকামী অধিকার আন্দোলনকর্মী নাতালি ফারাহ বিবিসিকে বলেন, ‘আবু মারহিয়া আমার খুব ভালো বন্ধু ছিল এবং তাকে হারানোর বেদনায় পুরো (সমকামী) কমিউনিটি কাঁদছে।’
তার প্রতি শোক প্রকাশ করা হয়েছে ফিলিস্তিনেও। ইসরায়েলের বেতার সংবাদমাধ্যম কারামা রেডিওর এক প্রতিবেদনে আহামাদ আবু মারহিয়ার হত্যাকাণ্ড সম্পর্কে বলা হয়েছে, ‘এই ঘটনা আমাদের সমাজ, মূল্যবোধ, প্রথা ও মৌলিক মনুষ্যত্বের সকল রেড লাইন অতিক্রম করে গিয়েছে।’
ইসরায়েলে বর্তমানে প্রায় ৯০ জন ফিলিস্তিনি নিজেদের এলজিবিটি পরিচয় দিয়ে রাজনৈতিক আশ্রয়ে বসবাস করছেন। জুলাই মাস থেকে তাদের কাজে অনুমতি দেওয়া হয়েছে।
ফিলিস্তিনে এলজিবিটি জনগণকে বৈষম্য বা হয়রানির হাত থেকে রক্ষা করে এমন কোনও নির্দিষ্ট, এককভাবে নাগরিক অধিকার আইন নেই। ফিলিস্তিনে যে শত্রুতাবাদের মুখোমুখি হয়েছে তার কারণে শত শত সমকামী ফিলিস্তিনি ইসরায়েলে পালিয়ে গেছে বলে জানা গেছে। যেসব অঞ্চল বা ইসরায়েলের মধ্যে বিরোধ রয়েছে, তাদের আশ্রয়ের আইন অযোগ্য হওয়ার কারণে ইসরায়েলীয় কর্তৃপক্ষের দ্বারা তারা গৃহবন্দি বা নির্বাসনের শিকার হয়েছে।
এসডব্লিউ/এমএন/কেএইচ/১৩৪৬
আপনার মতামত জানানঃ