ইসলাম ধর্মে মাদক গ্রহণ হারাম, আর ইসলাম ধর্মালম্বীদের কাছে পবিত্র স্থান সৌদি আরব। কিন্তু ক্রমেই মাদকের অভয়ারণ্য হয়ে উঠছে দেশটি।
সৌদি আরবের জেদ্দা ইসলামিক পোর্ট দিয়ে পাচার করা ২ লাখ ৪৯ হাজার ৭৭৯ পিস অ্যামফিটামিন বড়ি আটক করেছে দেশটির মাদক দ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তর।
সৌদি প্রেস এজেন্সির (এসপিএ) বরাতে এক প্রতিবেদনে রোববার এমনটাই জানিয়েছে আরব নিউজ।
অ্যামফিটামিনের বড়িগুলো ড্রিলিং-এর সরঞ্জাম মধ্যে লুকানো ছিল। এ ঘটনায় রিয়াদের একজন বাসিন্দাকে আটক করে বিচার বিভাগীয় কর্তৃপক্ষের কাছে হস্তান্তর করা হয়েছে।
এদিকে দেশটির নাজরান এলাকায়, সৌদি সীমান্তরক্ষীরা ২৫ কিলোগ্রাম হাশিশ পাচারের চেষ্টার সময় একজনকে আটক করেছে।
সৌদি কর্তৃপক্ষ বলেছে, তারা জনসাধারণের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে এবং অপরাধ রোধ করতে দেশটিতে মাদক চোরাচালান দমন অব্যাহত রাখবে।
সৌদি গণমাধ্যমগুলো ইদানীং দেশটিতে মাদক বৃদ্ধির বিষয়ে শঙ্কা প্রকাশ করছে।
এক সৌদি কলামিস্ট দেশটির ভেতরে মাদকের চালানের বিষয়টিকে দেখছেন সৌদির বিরুদ্ধে এক উন্মুক্ত যুদ্ধ হিসেবে, যা যেকোনো যুদ্ধের চেয়েও বিপজ্জনক।
এর আগে চলতি মাসেই সৌদি কর্তৃপক্ষ ৪৭ লাখ পিস অ্যামফিটামিন বড়ির (ইয়াবা বানানোর উপাদান) একটি চালান আটক করেছে। দেশটির ইতিহাসে এটিই ছিল সবচেয়ে বড় মাদক উদ্ধারের ঘটনা।
সৌদি আরবের জেদ্দা ইসলামিক পোর্ট দিয়ে পাচার করা ২ লাখ ৪৯ হাজার ৭৭৯ পিস অ্যামফিটামিন বড়ি আটক করেছে দেশটির মাদক দ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তর।
সৌদি আরবের রক্ষণশীল সমাজব্যবস্থার কারণে মাদকাসক্তের সংখ্যা বাড়ছে। ফলে বর্তমানে দেশটির কার্যত শাসক ক্রাউন প্রিন্স মোহাম্মদ বিন সালমান যে অপেক্ষাকৃত মুক্ত সমাজ তৈরি করতে চাচ্ছেন, তা মাদক সেবন কমিয়ে আনতে পারে।
এরই মধ্যে মাদকাসক্তের সংখ্যা বাড়ায় দেশটিতে বেসরকারি মাদক নিরাময় কেন্দ্রের অনুমোদন দেয়া হয়েছে।
সিরিয়ায় চলমান যুদ্ধের কারণে দেশটির রাসায়নিক কারখানাগুলোতে মাদক তৈরি করা হচ্ছে এবং তা বিক্রি করে তোলা হচ্ছে যুদ্ধের খরচ। এই মাদকগুলোরও প্রধান গন্তব্যস্থলও হয়ে উঠছে সৌদি। এ ছাড়া বাইরে থেকেও আসছে মাদক।
সম্প্রতি যুক্তরাষ্ট্রের কোস্টগার্ড ওমান উপসাগরে একটি মাছ ধরার নৌকা থেকে ৩২০ কিলোগ্রাম এমফিটামিন বড়ি এবং তিন হাজার কিলোগ্রাম হাশিশ আটক করেছে।
আরবের সবচেয়ে ধনী এই রাষ্ট্রটিতে ক্যাপটাগন পিল এখন এক নতুন উন্মাদনা। মন ফুরফুরে করার জন্য মাদকসেবীরা এটি গ্রহণ করেন। মূলত এটি আমাদের দেশের বহুল পরিচিত ইয়াবারই আরেকটি রূপ। এই পিল গ্রহণ করলে সহজে ঘুম আসে না এবং মানুষের মাঝে উন্মাদনারও সৃষ্টি করে। সবশেষে এটি স্বাস্থ্যেরও বড় ক্ষতি করে।
জাতিসংঘের মাদক ও অপরাধ বিভাগের তথ্যমতে, ২০১৫ থেকে ২০১৯ সালের মধ্যে মধ্যপ্রাচ্যে যত ক্যাপটাগন পিল উদ্ধার হয়েছে তার অর্ধেকেরও বেশি হয়েছে সৌদি আরব থেকে।
সৌদি সরকার আশঙ্কা করছে, এসব মাদক থেকে সুবিধা পাচ্ছে এই রাজতন্ত্রের বিরোধী সামারিক শক্তি ও সংগঠনগুলো। বলা হচ্ছে, দেশটিতে সব ধরনের মাদক পাচারের ক্ষেত্রে বড় ভূমিকা পালন করছে ইরান সমর্থিত হিজবুল্লাহ গেরিলারা।
এক পরিসংখ্যানে দেখা গেছে, সৌদি আরবে ১২ থেকে ২২ বছর বয়সীদের মধ্যে মাদকের ব্যবহার বাড়ছে। আর দেশটিতে যারা মাদক সেবন করেন, তাদের ৪০ শতাংশই ক্যাপটাগন পিল গ্রহণ করেন।
এই রেকর্ড পরিমাণ মাদক জব্দের বিষয়ে বিশেষজ্ঞরা বলছেন, মাদকের চালান এভাবে বাড়তে থাকায় মধ্যপ্রাচ্যের মাদকের রাজধানী হয়ে উঠেছে সৌদি আরব। মাদকের চাহিদা বাড়তে থাকায় দেশটি সিরিয়া ও লেবাননের চোরাকারবারীদের প্রাথমিক গন্তব্য হয়ে উঠছে।
বিশেষজ্ঞদের পক্ষ থেকে আরও বলা হয়েছে, মাদকের জন্য সবচেয়ে বড় এবং সবচেয়ে লাভজনক আঞ্চলিক গন্তব্যগুলির মধ্যে একটি হয়ে উঠছে সৌদি এবং দিন দিন তা আরও বেড়েই যাচ্ছে।
এসডব্লিউ/এমএন/কেএইচ/২০১২
আপনার মতামত জানানঃ