পশ্চিমবঙ্গের রাজ্য বিধানসভা নির্বাচনকে ঘিরে এখন চওড়া হচ্ছে তৃণমূলের ভাঙন। বহু নেতা-কর্মী এখন তৃণমূল ছেড়ে পা বাড়িয়েছেন বিজেপির দিকে। জল্পনা চলছে, মমতার ওপর বিক্ষুব্ধ হয়ে এবার তৃণমূলের বহু সাংসদ, বিধায়ক, মন্ত্রী ও নেতা দল ছাড়ার উদ্যোগ নিয়েছেন।
মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের নেতৃত্বাধীন তৃণমূল কংগ্রেসের উল্লেখযোগ্য সংখ্যক নেতার দলত্যাগের কারণে ক্রমেই তিনি সঙ্গীহারা হচ্ছেন বলে মনে করা হচ্ছে। ভারতীয় জনতা পার্টি (বিজেপি) পশ্চিমবঙ্গে তৃণমূল কংগ্রেসে ভাঙন ধরিয়ে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে বিপাকে ফেলছেন বলে অভিমত অনেকের। এ ধারা এখনও অব্যাহত রয়েছে বলে ভারতীয় সংবাদমাধ্যমের সূত্রে জানা গেছে।
মমতার সবচে বড় ধাক্কাটি আসে মুকুল রায়ের তৃণমুল ছাড়ার ঘটনা থেকে। তৃণমূল কংগ্রেসে মমতার পরে দ্বিতীয় গুরুত্বপূর্ণ ছিলেন নেতা মুকুল রায়। লোকসভা নির্বাচনের বেশ আগে মুকুল রায় তৃণমুল ছেড়ে বিজেপিতে যোগ দেন।
মুকুল রায়ের বিজেপিতে যোগ দেওয়ার পর, তৃণমুল থেকে নির্বাচিত সাংসদ পদ ত্যাগ করে বিজেপিতে গিয়ে আবারও সাংসদ হয়েছেন সৌমিত্র খা, এরপর তৃণমূলের বিধায়ক পদ ত্যাগ করে অর্জুন সিং বর্তমানে বিজেপির লোকসভার সাংসদ, তৃণমূলের বিধায়ক পদ ত্যাগ করে নীতীশ প্রামাণিক বর্তমানে বিজেপির সাংসদ। এরপর বিজেপিতে যোগ দিয়েছেন কলকাতার সাবেক মেয়র, রাজ্যের মন্ত্রী ও মমতার এক সময়ের ঘনিষ্ঠজন শোভন চট্টপাধ্যায়। বিধায়ক পদ ত্যাগ করা আরেক নেতা অনুপম হাজরাও এখন বিজেপির কেন্দ্রীয় নেতা। মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের রাজনৈতিক উল্লম্ফন যে আন্দোলনের নেতাদের মাধ্যমে তারা যখন তার পাশ থেকে সরে যাচ্ছেন তখন রাজনৈতিকভাবে সঙ্গীহীন হওয়ার প্রশ্নটি বারবার সামনে আসছে বলে মনে করছেন অনেকে।
তৃণমুল ছেড়ে যাওয়া সবথেকে বড় নাম সাবেক পরিবহণমন্ত্রী শুভেন্দু অধিকারী। তৃণমুলের তালিকা থেকে যখন একে একে শীর্ষ নেতাকর্মীরা নিজেদের সরিয়ে নিচ্ছিলেন, তাদের সাথে যদি পরিকল্পনামন্ত্রী(সাবেক) ও বিধায়ক শুভেন্দুর নাম আসে তবে সেটা মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের জন্য চরম ক্ষতিকর হবে বলেই বিশ্লেষকরা মনে করেছিলেন।
গত ২৭ নভেম্বর মন্ত্রিসভা থেকে পদত্যাগ করেন শুভেন্দু অধিকারী। আর ১৫ই ডিসেম্বর বুধবার তিনি ছাড়েন তৃণমূল বিধায়কের পদ। আর গত্যকাল (১৯ ডিসেম্বর) ভারতের পশ্চিমবঙ্গের মেদিনীপুরে কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রী ও বিজেপি’র অন্যতম শীর্ষ নেতা অমিত শাহের জনসভায় তিনি বিজেপিতে যোগ দিয়েছেন। শুধু শুভেন্দু অধিকারী নয়, তার সাথে যোগ দিয়েছে ছয় জন তৃণমূল কংগ্রেসের ছয়জন সাংসদ ও বিধায়ক। এই ঘটনায় রাজ্য রাজনৈতিক অঙ্গনে তীব্র আলোড়ন সৃষ্টি হয়েছে।
রাজ্যের সাবেক মন্ত্রী শুভেন্দু বিজেপিতে যোগ দিয়েই কড়া সমালোচনা করেন তৃণমূলের। তৃণমূল নেত্রী এবং পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে কটাক্ষ করে শুভেন্দু বলেন, ‘‘আমি যখন করোনা আক্রান্ত হয়েছিলাম তখন দলের কেউ আমার খোঁজ নেয়নি। তখন অমিত শাহ আমার খোঁজ নিয়েছেন। অথচ দলের জন্য আমি কি না করেছি, আমি তাদের জন্য অকৃতদার থেকেছি।”
আরো বলেন, ‘‘তৃণমূলের ব্যক্তি কেন্দ্রিকতায় আমার আত্মসম্মানে ঘা লেগেছে। মুকুল রায় আমাকে বলেছিলেন, আত্মসম্মান হারিয়ে দলে থাকিস না।
তিনি বলেন, ‘‘অনেকে বলছেন আমি মায়ের সঙ্গে বিশ্বাসঘাতকতা করেছি। আমার মা গায়েত্রী দেবী। আর এ দেশ আমার মা। আর কেউ আমার মা নন। আমি মনে প্রাণে চাই কলকাতা ও দিল্লিতে এক সরকারই থাকুক। মোদীর হাতে বাংলাকে তুলে না দিলে রাজ্যের সর্বনাশ হবে।”
তারপরই তিনি ‘তোলাবাজ ভাইপো হঠাও’ বলে মমতা ব্যানার্জির ভাইপো, সাংসদ অভিষেক ব্যানার্জির বিরুদ্ধে স্লোগান দিয়ে উঠেন।
পশ্চিমবঙ্গের মূখ্যমন্ত্রী তৃনমূল নেত্রী মমমতা ব্যানার্জীর সঙ্গে তিস্তা ইস্যু নিয়ে দীর্ঘদিন ধরেই বাংলাদেশের সাথে মন কষাকষি চলছিল। তিস্তা ইস্যুকে কেন্দ্র করে বাংলাদেশিদের জনমন থেকে গেছেন মমতা। জনমনে ক্ষোভ, মমতা ইচ্ছে করেই বাংলাদেশের হিস্যা আটকে রেখেছে। তৃণমুল ছেড়ে শীর্ষ স্থানীয় নেতাকর্মীদের দলে দলে পদত্যাগ এবং বিজেপিতে যোগদানে বাংলাদেশিদের মনে নতুন আশার সঞ্চয় হয়েছে। অনেকেই মনে করছেন, পশ্চিমবঙ্গে বিজেপি ক্ষমতায় এলে বাংলাদেশ তার ন্যায্য পাওয়া আদায় করে নিতে পারবে।
আপনার মতামত জানানঃ