পাকিস্তানের মিডিয়া সমস্ত স্যাটেলাইট টেলিভিশন চ্যানেলে দেশটির সাবেক প্রধানমন্ত্রী ইমরান খানের লাইভ বক্তৃতা সম্প্রচার নিষিদ্ধ করেছে। ইসলামাবাদে এক সমাবেশে ভাষণ দেওয়ার সময় তিনি রাষ্ট্রীয় প্রতিষ্ঠান ও সরকারি কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে মামলা করার হুমকি দেওয়ার কয়েক ঘণ্টা পর এই সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়।
পাকিস্তানের সাবেক প্রধানমন্ত্রী ইমরান খানের বক্তব্য টিভি চ্যানেলে সরাসরি সম্প্রচার নিষিদ্ধ করেছে দেশটির ইলেকট্রনিক মিডিয়া নিয়ন্ত্রক সংস্থা (পেমরা)। এ নির্দেশনা না মানলে নিউজ চ্যানেলগুলোর বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার কথা জানিয়েছে পেমরা। জিও নিউজের আজ রোববারের এক প্রতিবেদনে এসব তথ্য দেওয়া হয়েছে।
আজ জারি করা পেমরার বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, ইমরান খানের বক্তব্য পেমরার নীতিমালার সরাসরি লঙ্ঘন। তবে নতুন বিজ্ঞপ্তি অনুযায়ী যথাযথ পর্যবেক্ষণ ও সম্পাদনার পর ধারণ করা বক্তব্য সম্প্রচার করা যাবে।
তেহরিক-ই-ইনসাফের (পিটিআই) নেতা শাহবাজ গিলকে গত সপ্তাহে রাষ্ট্রদ্রোহের অভিযোগে গ্রেপ্তার করা হয়েছিল। ইমরান খান শনিবার (২০ আগস্ট) একটি জনসমাবেশে ভাষণ দেওয়ার সময় শীর্ষ পুলিশ কর্মকর্তা, একজন নারী ম্যাজিস্ট্রেট, পাকিস্তানের নির্বাচন কমিশন ও রাজনৈতিক বিরোধীদের বিরুদ্ধে তার সহযোগীর সঙ্গে এরূপ আচরণের জন্য মামলা করার হুমকি দিয়েছিলেন।
এ বিষয়ে পেমরা একটি ছয় পৃষ্ঠার বিজ্ঞপ্তি জারি করে বলেছে, ইমরান খান তার বক্তৃতা ও বিবৃতিতে রাষ্ট্রীয় প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে অনবরত ভিত্তিহীন অভিযোগ তুলছেন এবং বিদ্বেষমূলক বক্তব্য দিচ্ছেন।
পেমরার মতে, অধ্যাদেশ ২০২২-এর ধারা ২৭-এর অধীন ইমরান খানের বিরুদ্ধে নিষেধাজ্ঞা জারি করা হয়েছে। বিজ্ঞপ্তিতে ইসলামাবাদের এফ৯ পার্কে ইমরান খানের বক্তৃতা উল্লেখ করা হয়েছে।
বিজ্ঞপ্তিতে আরও বলা হয়, পাকিস্তান তেহরিক-ই-ইনসাফ (পিটিআই) প্রধানের বক্তব্যে দেশের আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে যেতে পারে। কারণ, তিনি তার বক্তৃতায় রাষ্ট্রীয় প্রতিষ্ঠান ও সরকারি কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে দেশের নাগরিকদের ক্রমাগত উসকানি দিচ্ছেন।
সাবেক এই প্রধানমন্ত্রীর বিদ্বেষপূর্ণ বক্তব্য সুয়ো মোটু মামলায় পাকিস্তানের সুপ্রিম কোর্টের রায়ের পরিপন্থী। পেমরা আরও বলছে, ইমরান খানের বক্তব্য লাহোরের উচ্চ আদালতের রায়েরও বিরুদ্ধে।
পেমরার এ নির্দেশনা না মানলে পাকিস্তানের নিউজ চ্যানেলগুলোকে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়ার হুঁশিয়ারিও দেওয়া হয়েছে।
বর্তমানে পিটিআইয়ের যে জনপ্রিয়তা, তাতেই শাসক দলের ভয়। কারণ, দলটির জনপ্রিয়তা অব্যাহত থাকলে আগামী সাধারণ নির্বাচনের বৈতরণি বেশ ভালোভাবে পেরিয়ে যাবেন ইমরান এবং আবার সরকার গঠনে সক্ষম হবেন তিনি। সেটা রুখতে সরকার পিটিআইকে বিভিন্নভাবে কাবু করার চেষ্টা করছে।
এদিকে পাকিস্তানের ইসলামাবাদ ক্যাপিটাল টেরিটরি পুলিশ (আইসিটি) রবিবার (২১ আগস্ট) তেহরিক-ই-ইনসাফের (পিটিআই) চেয়ারম্যান ইমরান খানের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার প্রতিশ্রুতি দিয়েছে। রাজধানী পুলিশের বিরুদ্ধে এক দিন আগে ইমরান খানের জারি করা সতর্কতার প্রতিক্রিয়ায় পুলিশ এই ব্যবস্থা নেওয়ার কথা জানালো।
ইসলামাবাদ পুলিশের পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, কেউ পুলিশকে হুমকি দিলে বা মিথ্যা অভিযোগ করলে আইন অনুযায়ী তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
পাকিস্তানভিত্তিক সংবাদমাধ্যম ডনে বলা হয়েছে, ইমরান সমাবেশে বক্তৃতা দেওয়ার একদিন পরে পুলিশের পক্ষ থেকে একটি বিবৃতি আসে।
সেখানে বলা হয়েছে, ইসলামাবাদ পুলিশ কারো কাছ থেকে তার দলের নেতাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার নির্দেশ নিচ্ছে। কার কাছ থেকে এই নির্দেশ আসছে তা এখনও স্পষ্ট করে জানা যায়নি।
ইমরান খান ইসলামাবাদ পুলিশকে জিজ্ঞেস করেছিল, শাহবাজ গিলকে তারা কী করেছিলো।
এর জবাবে পুলিশ বলেছিলেন, তারা তাদেরকে দেওয়া আদেশ অনুসরণ করেছে মাত্র। শনিবার (২০ আগস্ট) গিলের কথিত নির্যাতনের বিরুদ্ধে সুপ্রিম কোর্টে যাওয়ার পরিকল্পনা ঘোষণা করার সময় তিনি সমাবেশে অংশগ্রহণকারীদের উদ্দেশ্যে এ কথা বলেন।
ইমরান তার দলের প্রতি পাকিস্তান সরকারের ‘পক্ষপাতদুষ্ট’ মনোভাবের বিরুদ্ধে বিচার বিভাগকে সতর্ক করে দিয়ে বলেছেন, এটির পরিণতির জন্য নিজেকে প্রস্তুত করা উচিত।
সাবেক ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী অতিরিক্ত জেলা ও দায়রা জজ জেবা চৌধুরীর বিরুদ্ধেও অভিযোগ করেন। কারণ তিনি রাজধানী পুলিশের অনুরোধে গিলের দুই দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেছিলেন বলে অভিযোগ করেন ইমরান খান।
এই নিয়ে ইমরান খান বলেছিলেন, ‘তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে বলে নিজেকে প্রস্তুত করা উচিত’।
গত জুনে আস্থা ভোটে হেরে ক্ষমতা হারান ইমরান খান। এরপর ইমরান ও তার দলের জন্য বড় চ্যালেঞ্জ ছিল ক্ষমতাসীন পাকিস্তান মুসলিম লীগ-নওয়াজের (পিএমএল-এন) ঘাঁটি পাঞ্জাব প্রদেশের উপনির্বাচন। পিএমএল-এনকে কোণঠাসা করে জয় পায় ইমরানের দল এবং রাজনীতিতে ঘুরে দাঁড়িয়ে উজ্জীবিত হয়ে ওঠেন ইমরান।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, বর্তমানে পিটিআইয়ের যে জনপ্রিয়তা, তাতেই শাসক দলের ভয়। কারণ, দলটির জনপ্রিয়তা অব্যাহত থাকলে আগামী সাধারণ নির্বাচনের বৈতরণি বেশ ভালোভাবে পেরিয়ে যাবেন ইমরান এবং আবার সরকার গঠনে সক্ষম হবেন তিনি। সেটা রুখতে সরকার পিটিআইকে বিভিন্নভাবে কাবু করার চেষ্টা করছে।
এসডব্লিউ/এমএন/কেএইচ/১৮৫৬
আপনার মতামত জানানঃ