দীর্ঘদিনের বৈরী সম্পর্ক কাটিয়ে ইসরায়েলের সঙ্গে সম্পর্কোন্নয়নে তোড়জোড় শুরু করেছে তুরস্ক। ইসরায়েলের সঙ্গে ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক গড়তে ইতোমধ্যে তেল আবিবে রাষ্ট্রদূত নিয়োগ করেছে দেশটি। তবে এমন প্রেক্ষাপটে প্রশ্ন উঠেছে কট্টর অবস্থান নেওয়া তুরস্ক কেন আবার ইসরায়েলের সঙ্গে সম্পর্ক স্বাভাবিক করতে চাচ্ছে?
মার্কিন গণমাধ্যম আল-মনিটর জানিয়েছে, ইসরায়েলের সঙ্গে সম্পর্ক স্বাভাবিক করতে গবেষক উফুক উলুতাসকে রাষ্ট্রদূত করে তেল আবিবে পাঠিয়েছে তুরস্ক।
সংবাদ প্রতিবেদনে আরও বলা হয়েছে, উলুতাস পেশাদার কূটনীতিক নন। তিনি তুরস্কের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের গবেষণা বিভাগের প্রধান। এর আগে তিনি সরকারদলীয় ‘থিঙ্ক ট্যাংক’এর নেতৃত্ব দিয়েছিলেন।
সেই ‘থিঙ্ক ট্যাংক’এর ওয়েবসাইটে বলা হয়েছে, উলুতাস জেরুসালেম হিব্রু বিশ্ববিদ্যালয়ে হিব্রু ভাষা ও মধ্যপ্রাচ্যের রাজনীতির ওপর পড়ালেখা করেছেন।
সূত্র আল-মনিটরকে আরও জানিয়েছে, ‘খুবই মার্জিত’ ও ‘ভীষণ ফিলিস্তিনপন্থি’ উলুতাসকে দুই দেশের মধ্যে চলমান ‘অত্যন্ত খারাপ কূটনৈতিক সম্পর্ককে’ আবার ভালোর দিকে নিয়ে যেতে কঠোর পরিশ্রম করতে হবে।
ট্রাম্প প্রশাসনের চাপে ও বাণিজ্যিক-ভূরাজনৈতিক সুবিধা পেতে চলতি বছরে এখন পর্যন্ত মধ্যপ্রাচ্য ও আফ্রিকার চার আরব রাষ্ট্র ইসরায়েলের সঙ্গে সম্পর্ক স্বাভাবিক করার চুক্তি করেছে।মধ্যপ্রাচ্যে অতীতের যে কোনো সময়ের চেয়ে বর্তমানে সুবিধাজনক অবস্থানে রয়েছে ইসরায়েল। আবার একইভাবে অতীতের যে কোনো সময়ের তুলনায় মধ্যপ্রাচ্য চাপের মধ্যে রয়েছে তুরস্ক।
অনেক বিশ্লেষক মনে করছেন, ইসরায়েলে নতুন রাষ্ট্রদূত পাঠানোর সিদ্ধান্তের পেছনে হয়তো আন্তর্জাতিক চাপ ও দেশের অর্থনৈতিক দূরাবস্থা থেকে মুক্তি পাওয়ার বিষয়টি কাজ করতে পারে।
এছাড়া, যুক্তরাষ্ট্রে প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে জয় পেয়েছেন জো বাইডেন। তার প্রশাসন মানবাধিকার ও গণতন্ত্র নিয়ে অধিক সক্রিয় হয়ে উঠবে। এ নিয়ে চিন্তিত এরদোয়ান প্রশাসন। পাশাপাশি, সিরিয়া, লিবিয়া ও ককেশাস অঞ্চলে তুরস্কের প্রভাব হটিয়ে দেবে বাইডেন প্রশাসন এমন আশঙ্কাও রয়েছে।
আল-জাজিরাকে জনস হপকিনস বিশ্ববিদ্যালয়ের সহকারী অধ্যাপক লিসেল হিনৎজ এ নিয়ে বলেন, এরদোয়ান নিজেকে মুসলিমদের কথিত নেতা হিসেবে উপস্থাপন করতে চান। মুসলিমদের এ আবেগকে কাজে লাগিয়ে তিনি দেশে ও দেশের বাইরেও জনপ্রিয়তা পেয়েছেন। আবার তিনিই এখন অর্থনৈতিক দূরাবস্থা থেকে বের হয়ে আসতে ইসরায়েলের সঙ্গে সম্পর্কোন্নয়নের চেষ্টা করছেন। এটিকেও হয়ত তিনি তুরস্কের বিজয় বলেই তুলে ধরবেন।
তুরস্কের কূটনীতিকরাও একই কথা বলছেন। ভূমধ্যসাগরের পরিস্থিতি নিয়ে তুরস্ক বাইরে খুব শক্ত কথা বললেও তারা নিজেদের দুর্বলতা সম্পর্কে জানে। আন্তর্জাতিক অঙ্গনে তুরস্ক এখন অনেকটাই একা হয়ে পড়েছে। অর্থনীতিও আর সমর্থন দিচ্ছে না। আরব রাষ্ট্রগুলোও ইসরায়েলের দিকে ঝুঁকছে আবার তুরস্কের সঙ্গেও আরবদের সম্পর্ক তলানিতে পৌঁছেছে। বিশ্লেষকরা বলছেন, তাই স্বাভাবিকভাবেই এখন ইসরায়েলের সঙ্গে সম্পর্কোন্নয়নে বাধ্য হচ্ছে তুরস্ক।
উল্লেখ্য, ২০১৮ সালে প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প ইসরাইলের মার্কিন দূতাবাস তেল আবিব থেকে জেরুজালেমে সরিয়ে নিলে বিক্ষোভে ফেটে পড়ে ফিলিস্তিনিরা। অবরুদ্ধ গাজা উপত্যকায় বিক্ষোভরত ফিলিস্তিনিদের ওপর প্রাণঘাতী হামলা চালায় ইসরাইলি বাহিনী।
ওই হামলার পর ২০১৮ সালের মে মাসে ইসরাইল থেকে নিজেদের রাষ্ট্রদূত প্রত্যাহার করে নেয় তুরস্ক।
এসডব্লিউ/কেএইচ/১৫২২
আপনার মতামত জানানঃ