যখন সর্বনাশ হয়, তখন কিছু মানুষের পৌষমাসও চলে। যার আরো একবার প্রমাণ মিললো সিরিয়ায় ভূমিকম্প বিপর্যয়ের পর। হাহাকারের মধ্যে জেল থেকে পালাল ২০ জনের বেশি খতরনাক আইএস জঙ্গি।
ইসলামিক স্টেট গ্রুপের সদস্যদের একটি সূত্র এএফপিকে জানিয়েছে, উত্তর-পশ্চিম সিরিয়ার একটি কারাগারে ২০ জন বন্দি বিদ্রোহ করে সেখান থেকে পালিয়েছে। তুর্কি সীমান্তের কাছে রাজো শহরের মিলিটারি পুলিশ কারাগারে প্রায় ২ হাজার বন্দি রয়েছে, তাদের মধ্যে প্রায় ১৩০০ আইএস যোদ্ধা বলে সন্দেহ করা হচ্ছে। কারাগারে কুর্দি নেতৃত্বাধীন বাহিনীর সদস্যরাও রয়েছে।
রাজো কারাগারের কর্মকর্তা বলেছেন, ”ভূমিকম্প আঘাত হানার পর রাজো ক্ষতিগ্রস্ত হয় এবং বন্দিরা বিদ্রোহ শুরু করে। কারাগারের কিছু অংশের নিয়ন্ত্রণ তাদের হাতে চলে যায়। প্রায় ২০ জন বন্দি পালিয়ে গেছে, যারা আইএস জঙ্গি বলে ধারণা করা হচ্ছে।”
প্রসঙ্গত, ৭.৮-মাত্রার ভূমিকম্পের পর কয়েক ডজন আফটারশক এই অঞ্চলকে বিধ্বস্ত করে দিয়েছে।
কারাগারের দেয়াল এবং দরজায় ফাটল দেখা গেছে। বৃটেনভিত্তিক সিরিয়ান অবজারভেটরি ফর হিউম্যান রাইটস ওয়ার মনিটর বলেছে যে তারা পালিয়ে গেছে কিনা তা যাচাই করতে পারেনি, তবে নিশ্চিত সেখানে একটি বিদ্রোহ চলছিলো।
এর আগে সিরিয়ার প্রাক্তন রাজধানী রাকায় একটি নিরাপত্তা কমপ্লেক্সে হামলা চালিয়ে রাজোর কারাগার থেকে সহকর্মী জিহাদিদের মুক্তির দাবি জানিয়েছিল আইএস। ডিসেম্বরের হামলায় ওই এলাকা নিয়ন্ত্রণকারী কুর্দি নেতৃত্বাধীন নিরাপত্তা বাহিনীর ছয় সদস্য নিহত হন।
সিরিয়ার সংঘাত ২০১১ সালে শান্তিপূর্ণ প্রতিবাদের নির্মম দমনের মাধ্যমে শুরু হয়েছিল এবং বিদেশী শক্তি ও বিশ্বব্যাপী জিহাদিদের আকর্ষণের কেন্দ্রে পরিণত হয়েছিলো।
যার জেরে দেশের প্রায় অর্ধ মিলিয়ন মানুষ নিহত হয়েছেন এবং সংঘাতের জেরে দেশটির জনসংখ্যার প্রায় অর্ধেক তাদের বাড়িঘর ছেড়ে তুরস্কে আশ্রয় নিতে বাধ্য হয়েছে।
উল্লেখ্য, সোমবারের ভূমিকম্পে তুরস্ক ও সিরিয়ায় সোমবার তিনটি ভূমিকম্প আঘাত হানার ২৪ ঘণ্টার মধ্যে প্রায় সাড়ে ৪ হাজার মানুষ নিহত হয়েছেন। আরও হাজার হাজার আহত হয়েছেন। ধ্বংসস্তুপে আটকে পড়াদের সন্ধানে বিভিন্ন অঞ্চলে উদ্ধার অভিযান চলছে।
তুরস্কে সংগঠিত ভয়াবহ ভূমিকম্পে প্রাণহানির সংখ্যা লাফিয়ে বাড়ছে। তুরস্ক ও সিরিয়ায় এখন পর্যন্ত ৪ হাজার ৩৬৫ জনের প্রাণহানির খবর পাওয়া গেছে। এর মধ্যে তুরস্কেই মারা গেছেন ২ হাজার ৯২১ জন। আর সিরিয়ায় এক হাজার ৪৪৪ জনের মৃত্যুর খবর পাওয়া গেছে। দুই দেশে আহত হয়েছেন ১৭ হাজারের বেশি মানুষ।
তুরস্কের দুর্যোগ ও জরুরি ব্যবস্থাপনা কর্তৃপক্ষের বরাত দিয়ে বার্তা সংস্থা আনাদোলু এজেন্সি জানিয়েছে, তুরস্কে মৃতের সংখ্যা কয়েক ঘণ্টার ব্যবধানে ২ হাজার ৩৭৯ থেকে বেড়ে ২ হাজার ৯২১ জনে পৌঁছেছে।
তুরস্কের ভাইস প্রেসিডেন্ট ফুয়াত ওকতাই বলেছেন, তুরস্কের ১০টি প্রদেশে ১৪ হাজার ৪৮২ জন আহত হয়েছেন এবং ৭ হাজার ৮৪০ জনকে উদ্ধার করা হয়েছে। প্রায় ৩ লাখ ৩৮ হাজার মানুষ বিশ্ববিদ্যালয়ের ডরমেটরি ও অন্যান্য স্থানে আশ্রয় নিয়েছেন।
সিরিয়ায় সর্বশেষ এক হাজার ৪৪৪ জনের মৃত্যুর খবর নিশ্চিত হওয়া গেছে। দুই দেশ মিলিয়ে মৃতের সংখ্যা ৪ হাজার ৩৬৫ জনে পৌঁছেছে।
এদিকে, ভূমিকম্পে ঘরবাড়ি বিধ্বস্ত হওয়ায় তীব্র ঠান্ডার মধ্যে বহু মানুষকে খোলা আকাশের নিচে রাত কাটাতে হয়েছে। আগুন জ্বালিয়ে শীত নিবারণে অনেক মানুষকে জটলা হয়ে বসে থাকার ছবিও তুলে এনেছে আন্তর্জাতিক সংবাদমাধ্যমগুলো।
এসডব্লিউএসএস/২০৩৫
আপনার মতামত জানানঃ