বিভিন্ন সময়েই আমাদের কর্তাব্যক্তিরা বন সুরক্ষার কথা বলেন। বলেন নতুন বন সৃজনে নানা আয়োজনের কথা। বাস্তবে বনাঞ্চল কমতেই থাকে, বাড়তে থাকে দখলদার ও পাচারকারীর দাপট।
তবে চলতি বছরের মাঝামাঝিতে গণমাধ্যমে প্রকাশিত প্রতিবেদন থেকে জানা যায় যে, দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক) বন বিভাগের বেদখল হওয়া ভূমি উদ্ধারে মাঠে নামছে। জবরদখলকারীদের ব্যাপারে নথিপত্র সংগ্রহ করছে। হতাশার মধ্যে আশা জাগানিয়া সংবাদই বটে।
তবে বন বিভাগের বেদখল ভূমি উদ্ধারে মাঠে নামা দুদকের তেমন একটা গতি পরিলক্ষিত হচ্ছে না।
গত সোমবার পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রণালয়–সংক্রান্ত স্থায়ী কমিটির বৈঠকে মন্ত্রণালয়টি জানিয়েছে, দেশে বর্তমানে বিভিন্ন শ্রেণির মোট বনভূমির পরিমাণ ৪৬ লাখ ৪৬ হাজার ৭০০ একর। এর মধ্যে দুই লাখ ৮৭ হাজার ৪৫২ একর বনভূমি দখলে আছে। মোট ৮৮ হাজার ২১৫ জন দখলকারী দীর্ঘদিন ধরে বিপুল পরিমাণ এই বনভূমির সম্পত্তি দখলে রেখেছেন। তাদের মধ্যে ১৪০ জন দখলকারী ৮২০ দশমিক ৩৪ একর সংরক্ষিত বনভূমি দখল করে শিল্প-প্রতিষ্ঠান এবং কলকারখানা স্থাপন করেছেন।৫ হাজার ৯৮২ জন দখলকারী ১৪ হাজার ১৪৯ দশমিক ১৭ একর সংরক্ষিত বনভূমি জবরদখল করে হাট-বাজার, দোকান, রিসোর্ট/কটেজ, কৃষি ফার্ম ও শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান স্থাপন করেছেন। এছাড়া ৮২ হাজার ৯৩ জন ব্যক্তি ১ লাখ ২৩ হাজার ৬৪৩ দশমিক ৫৫ একর সংরক্ষিত বনভূমি অবৈধ দখল করে ঘরবাড়ি, কৃষি জমি তৈরি করেছেন।
বনভূমি জবরদখল ও গাছপালা কেটে উজাড় করার প্রক্রিয়াটি চলছে নিরন্তরভাবে, বছরের পর বছর ধরে। আর এর সাথে যুক্ত ব্যক্তিরা সমাজের উচ্চ শ্রেনীর অনেক প্রভাবশালী মানুষ, যাদের অনেক সম্পদ আছে, অনেক ভূমি আছে। প্রত্যেকেই রাজনৈতিক প্রভাব বিস্তারকারী রাঘব-বোয়াল। তার সাথে সরকারের যেসব এজেন্সি আছে বিশেষ করে আইনশৃঙ্খলা রক্ষা করার জন্য যারা থাকে পুলিশ এবং অন্যান্য প্রশাসনের একাংশের প্রত্যক্ষ এবং পরোক্ষ সমর্থন নিয়েই তারা এই কাজ করে।
ফরেস্ট ওয়াচ নামের এক আন্তর্জাতিক সংস্থার দেওয়া হিসাব অনুযায়ী, ২০০১ থেকে ২০১৮ সাল পর্যন্ত বাংলাদেশে প্রায় ৩ লাখ ৭৮ হাজার একর বনভূমি উজাড় হয়ে গেছে। বিশেষ উদ্বেগের বিষয় হলো, বনভূমি উজাড় করার এই প্রবণতা কয়েক বছর ধরে ভীষণভাবে বেড়েছে। ফরেস্ট ওয়াচ বলছে, ২০১৪ থেকে ২০১৮ সাল পর্যন্ত পাঁচ বছরেই উজাড় হয়েছে ২ লাখ ৩১ হাজার একর বনভূমি। অর্থাৎ ২০১৪ সালের আগপর্যন্ত ১৩ বছরে যে পরিমাণ বনভূমি উজাড় হয়েছে, তার প্রায় দ্বিগুণ উজাড় হয়েছে সর্বশেষ পাঁচ বছরে। ২০১৮ সালের পরের দুই বছরে হিসাব পাওয়া যায়নি; কিন্তু ধারণা করা যায়, ওই একই হারে বনভূমি উজাড় চলতে থাকলে দেশের বনভূমির পরিমাণ আরও অনেক কমে যাবে।
বনভূমি বেদখল হয়ে যাওয়ার অর্থ শুধু এই নয় যে এভাবে রাষ্ট্রের সম্পত্তি ব্যক্তি–প্রতিষ্ঠানগুলোর দখলে চলে যাচ্ছে। এর অর্থ এটাও যে এইভাবে দেশের বনভূমি উজাড় হয়ে যাচ্ছে এবং তার ফলে প্রাকৃতিক পরিবেশের অপূরণীয় ক্ষতি হচ্ছে। জাতিসংঘের বেঁধে দেওয়া লক্ষ্যমাত্রা অনুযায়ী প্রতিটি রাষ্ট্রে মোট আয়তনের ২৫ শতাংশ বনভূমি থাকতে হবে। কিন্তু বাংলাদেশে বনভূমি উজাড় হতে হতে এখন ১৫ শতাংশের নিচে নেমে এসেছে; অবশ্য এই হিসাব সরকারের বন অধিদপ্তরের। বেসরকারিভাবে ধারণা করা হয়, আমাদের দেশে এখন প্রকৃত বনভূমির পরিমাণ এর চেয়ে কম।
এসডব্লিউ/কেএইচ/১৪৪৫
আপনার মতামত জানানঃ