৫৮১ কোটি টাকার সার আত্মসাতের ঘটনায় মামলা হলেও সাবেক সাংসদ কামরুল আশরাফ খান পোটনকে গ্রেপ্তারে সময় নিচ্ছে দুদক। সরকারি সার সরবরাহ না করে খোলাবাজারে বিক্রি করে কোটি কোটি টাকা আত্মসাৎ করে আসছেন এই ঠিকাদার।
পেশায় ব্যবসায়ী হলেও রাজনীতিকে পুঁজি করে নিয়ন্ত্রণ করছেন সার ব্যবসা। তিনি সরকারি সার নিজের প্রতিষ্ঠানের নামে খোলাবাজারে বিক্রি করছেন। সার আত্মসাতের ঘটনায় অবশেষে দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) জালে আটকা পরতে যাচ্ছেন পোটন।
রবিবার নরসিংদী-২ আসনের সাবেক সাংসদ কামরুল আশরাফ খান পোটনের বিরুদ্ধে ৫৮১ কোটি ৫৮ লাখ নয় হাজার ৬৪ টাকা মূল্যের ৭১ হাজার মেট্রিক টন সার আত্মসাতের ঘটনায় একটি মামলা করেছে দুদক। মামলার বাদি দুদকের উপ-পরিচালক রফিকুজ্জামান।
তবে পোটন প্রকাশ্যে ঘুরলেও এখনও গ্রেপ্তার করা হয়নি তাকে। মামলায় তার মালিকানাধীন পোটন ট্রেডার্সের আরও চারজনকে আসামি করা হয়েছে।
কোথাও পালিয়ে যাওয়ার আগে পোটনকে গ্রেপ্তার করা হবে কিনা এমন প্রশ্নের জবাবে দুদকের সচিব মো. মাহবুব হোসেন জানান, অনুসন্ধানে প্রাপ্ত তথ্যের ভিত্তিতে মামলা হয়েছে। মামলা হওয়ার পর তদন্তকারী কর্মকর্তা আইনের বিধান অনুযায়ী যা করার দরকার তিনি তাই করবেন। যদি তিনি মনে করেন তদন্তপূর্বক আইনি ব্যবস্থা নিবেন তাহলে তিনি সেটাই করবেন।
অনুসন্ধানে জানা গেছে, বাংলাদেশ কেমিক্যাল ইন্ডাস্ট্রিজ করপোরেশন-বিসিআইসির মাধ্যমে বিদেশ থেকে আমদানিকৃত সাতটি জাহাজের ৭১ হাজার ৮০১ ম্যাট্রিক টন ইউরিয়া সার খালাস হয়েছিল ২০২১ সালের নভেম্বর থেকে ২০২২ সালের ১৫ মে’র মধ্যে।
তবে কামরুল আশরাফ খান পোটনের প্রতিষ্ঠান পোটন ট্রেডার্স সেই সারগুলো সরবরাহ না করে আত্মসাৎ করে। পোটনের আত্মসাৎকৃত সারের মূল্য ৫৮১ কোটি ৫৮ লাখ নয় হাজার ৬৪ টাকা। জাহাজ থেকে সারগুলো খালাস হলেও সরকারি গুদামে না পৌছিয়ে অন্যত্র সরিয়ে নেয় পরিবহন ঠিকাদার প্রতিষ্ঠান পোটন ট্রেডার্স।
বহু বছর যাবতই এই পোটনের কাছে জিম্মি হয়ে আছে সার ব্যবসা। আমদানি করা সরকারি-বেসরকারি সার বন্দর থেকে সরকারি গুদামে সরবরাহে পরিবহন ঠিকাদারির নিয়ন্ত্রণও রয়েছে তার হাতেই।
দুদকের মামলা সূত্রে ঢাকা টাইমস জানতে পেরেছে, ২০২১-২০২২ অর্থবছরে জিটুজি চুক্তির আওতায় মধ্যপ্রাচ্যের দেশ সৌদি আরব, কাতার এবং ইউএই থেকে আমদানিকৃত ইউরিয়া সার পরিবহনের বিসিআইসির সঙ্গে মেসার্স পোটন ট্রেডার্স এবং প্রিন্সিপাল ড্রাই বাল্ক শিপিংয়ের মোট ৯০ হাজার ২৪৫ দশমিক ৫৩০ ম্যাট্রিক টন ইউরিয়া সার সংশ্লিষ্ট বিভিন্ন গুদামে সরবরাহ দেওয়ার জন্য মোট ১৩টি স্থানীয় পরিবহনের চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়।
মেসার্স পোটন ট্রেডার্স ১৩টি চুক্তির মধ্যে সাতটি চুক্তির অধীনে পরিবহনকৃত দুই লাখ ১৫ হাজার ৩৭৭ দশমিক ৫৬৬ ম্যাট্রিক টন ইউরিয়া সার বুঝে নিয়ে তার মধ্যে এক লাখ ৪৩ হাজার ৫৭৬ দশমিক ২৫৮ ম্যাট্রিক টন ইউরিয়া সার বিসিআইসির সংশ্লিষ্ট গুদামে সরবরাহ করেন এবং বাকি ৭১ হাজার ৮০১ দশমিক ৩১ ম্যাট্রিক টন ইউরিয়া সার চুক্তির শর্ত মোতাবেক সংশ্লিষ্ট গুদামে সরবরাহ না করে আত্মসাৎ করে।
দুদক জানায়, ট্রানজিটে থাকা পোটন ট্রেডার্সের হিসাব মতে মোট ৬৬ হাজার ২২২ দশমিক ১৮ ম্যাট্রিক টন ইউরিয়া সারের থেকে প্রতিদিন ৩৫০-৪০০ ম্যাট্রিক টন ইউরিয়া সার সরবরাহ করে। কিন্তু বিসিআইসি বলছে তাদের দেওয়া প্রতিশ্রুতি অনুযায়ী প্রতিদিন ৩৫০-৪০০ ম্যাট্রিক টন ইউরিয়া সার সরবরাহ করেননি।
মেসার্স পোটন ট্রেডার্স তাদের প্রতিশ্রুতি ও সরবরাহ সূচি অনুযায়ী ইউরিয়া সার সরবরাহ করতে ব্যর্থ হওয়ায় পরিপ্রেক্ষিতে বিভিন্ন ঘাট ও পয়েন্টে ইউরিয়া সারের মজুদের পরিমাণ নিরূপণ, অবস্থান যাচাই করে।
এ বিষয়ে গত বছরের ১০ নভেম্বর সচিত্র প্রতিবেদেন দাখিলের জন্য বিসিআইসি তিনটি তদন্ত কমিটি গঠন করে এবং পরের মাসের ৭ ও ৮ ডিসেম্বর তদন্ত প্রতিবেদন দাখিল করে। তদন্ত কমিটি মেসার্স পোটন ট্রেডার্সের দেওয়া তথ্য অনুযায়ী খুলনা, নোয়াপাড়াঘাট, শিরোমনি, নগরবাড়ি, বাঘাবাড়ি ঘাট, বরিশালে সরেজমিনে পরিদর্শন করে মোট ৬৬ হাজার ২২২ দশমিক ১৮ ম্যাট্রিক টনের বিপরীতে প্রায় এক হাজার ৩০৭ দশমিক ৯৭৬ ম্যাট্রিক টন সারের অস্তিত্ব খুঁজে পায়।
পোটনের সার আত্মসাতের বিষয়ে দুদকের উপ-পরিচালক (জনসংযোগ) আকতারুল ইসলাম ঢাকা টাইমসকে বলেন, মেসার্স পোটন ট্রের্ডাসের স্বত্ত্বাধিকারী কামরুল আশরাফ খান পোটন বিসিআইসির সাতটি জাহাজের ইউরিয়া সার সরবরাহের জন্য শর্ত সাপেক্ষে চুক্তিবদ্ধ হয়ে চুক্তির শর্ত ভঙ্গ করেন।
চুক্তিকৃত গুদামে বরাদ্দকৃত সার সরবরাহ না করে তার অফিসের কর্মচারী মো. শাহাদত হোসেন নিপু (মহাব্যবস্থাপক), মো. নাজমুল আলম বাদল (জিএম), মো. সোহরাব হোসেন (উত্তরবঙ্গ প্রতিনিধি) এবং মো. আতাউর রহমানের (খুলনা ও নওয়াপাড়া প্রতিনিধি) সহযোগিতায় ৭১ হাজার ৮০১ দশমিক ৩১ ম্যাট্রিক টন সরকারি সার আত্মসাৎ করেন। এছাড়াও উল্লেখিত আত্মসাতকৃত সার ট্রানজিটে রয়েছে বলেও বিসিআইসিকে মিথ্যা তথ্য দেন পোটন।
মামলা হলে আসামি গ্রেপ্তার করা যায় কিনা এমন প্রশ্নের জবাবে আকতারুল ইসলাম বলেন, এজাহার বা মামলা হলে যদি আসামি গ্রেপ্তার করা জরুরি হয় তাহলে দুদক আসামি গ্রেপ্তার করে থাকে।
আপনার মতামত জানানঃ