করোনা ভাইরাসের উৎস খুঁজতে চীনের উহান যাচ্ছে ১০ আন্তর্জাতিক বিজ্ঞানীদের একটি দল। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার বরাত দিয়ে জানিয়েছে বৃটিশ সংবাদ সংস্থা বিবিসি। চীন এ বিষয়ে আপত্তি না করলেও গত কয়েক মাস ধরে এনিয়ে তাদের সঙ্গে দেনদরবার করতে হয়েছে বিশ্ব সংস্থাটির। ধারণা করা হয়, উহানের একটি পশুপাখির বাজার থেকেই প্রথম ছড়িয়েছিল ভাইরাসটি।
এখন এই অনুসন্ধানকে ঘিরে নতুন করে উত্তেজনা তৈরি হয়েছে। চীনের বিরুদ্ধে প্রথমদিকে মহামারি ছড়িয়ে পড়ার খবর চেপে যাওয়ার অভিযোগ করে আসছে ট্রাম্প সরকার। তবে ওই বিজ্ঞানীদের একজন, জার্মানির রবার্ট কচ ইনস্টিটিউটের ফ্যাবিয়ান লীন্ডারৎজ বলছেন, কারো দোষ খোঁজার জন্য তারা এই অনুসন্ধানে যাচ্ছে না। বরং আগামীতে মহামারির বিস্তার রোধের উপায় খুঁজতেই যাচ্ছেন তারা। তিনি বলেন, “এটি সত্যিই দোষী দেশ খুঁজতে যাওয়ার ব্যাপার না। বরং ঠিক কী হয়েছিল, সেটা বোঝার চেষ্টা করছি আমরা। তার ভিত্তিতে আমরা ভবিষ্যতে এর ঝুঁকি কমানোর চেষ্টা করবো।”
তিনি জানান, উহান থেকে ভাইরাসের বিস্তার শুরু হয়েছে কি হয়নি সেটা নয়, বরং ঠিক কখন থেকে ভাইরাসটি ছড়াতে শুরু করে সেটা জানাই লক্ষ্য।
অনুসন্ধান চার থেকে পাঁচ সপ্তাহ চলতে পারে বলে জানান তিনি। ভাইরাসটির ব্যাপক সংক্রমণ শুরুর প্রথমদিকে জানা গিয়েছিল চীনের হুবেই প্রদেশের উহান শহরের ওয়েট মার্কেট নামে পরিচিত পশুপাখির বাজার থেকেই সেটা অন্য প্রাণির দেহ থেকে মানবদেহে ছড়ায়। কিন্তু বিশেষজ্ঞরা এখন মনে করছেন, সেখানে হয়তো ভাইরাসটি বিস্তার লাভ করেছিল।
তারা বলছেন, এমনও হতে পারে ভাইরাস আসলে বহুকাল ধরেই ছিল। কিন্তু শনাক্ত করা যায়নি। গত ডিসেম্বরে যখন উহান সেন্ট্রাল হাসপাতালের ডাক্তার ওয়েনলিয়াং তার সহকর্মীদের নতুন একটি সংক্রামক রোগ সম্ভাব্য বিস্তার নিয়ে সতর্ক করেছিলেন তখন পুলিশের পক্ষ থেকে তাকে মিথ্যা তথ্য ও গুজব ছড়াতে নিষেধ করে দেওয়া হয়েছিল।
তারপর করোনা ভাইরাস ছড়িয়ে পড়ার পর রোগীদের চিকিৎসা দিতে দিতে ফেব্রুয়ারিতে তিনি নিজেই আক্রান্ত হয়ে মারা যান। এপ্রিলের দিকে সন্দেহ ছড়িয়ে পড়ে যে উহানের ল্যাবরেটরি থেকে ভাইরাসটি ছড়িয়ে পড়েছে। এসময় চীনে যুক্তরাষ্ট্রের দূতাবাসে কর্মরতরা এক তারবার্তায় জৈবনিরাপত্তা নিয়ে তাদের শঙ্কিত হয়ে পড়ার কথা বেরিয়ে পড়ে।
সেই সময় যুক্তরাষ্ট্রের জাতীয় গোয়েন্দা সংস্থার পরিচালক বলেন ভাইরাসটা মনুষ্যসৃষ্ট বা জেনেটিকালি মডিফায়েড না, বরং সেটা কি পশুপাখির দেহ থেকে মানবদেহে ছড়িয়েছে নাকি গবেষণাগারের দুর্ঘটনা থেকে ছড়িয়ে পড়েছে তা তারা তদন্ত করে দেখছেন। তখন এসব ধারণাকে ভিত্তিহীন বলে নাকচ করে দেন এবং চীনের নেতারা দেশটির আন্তর্জাতিক ভাবমূর্তি নিয়ে শঙ্কিত হয়ে পড়েন। জানুয়ারি মাসে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার হেলথ এমার্জেন্সি প্রোগ্রামের প্রধান ড. মাইক রায়ান করোনা ভাইরাসের ব্যাপক সংক্রমণ মোকাবেলায় চীনের তৎপরতার প্রশংসা করেন এবং বলেন, বিপদটা বড়, তবে ব্যাপক ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে।
বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা জানায় চীন স্বেচ্ছায় এই ভাইরাসের জেনেটিক কোড সংক্রান্ত তথ্যাদি দিয়ে এর বিস্তারের গতি কমিয়ে দিতে সহায়তা করেছে। তবে যুক্তরাষ্ট্রসহ আরো কিছু দেশ এ বিষয় তথ্য জানাতে চীনের স্বচ্ছতা নিয়ে প্রশ্ন তোলে। মার্চে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার চীনা কার্যালয়ের প্রধান ড. গডেন গ্যালে বিবিসিকে বলেন, করোনার প্রাদুর্ভাব মোকাবেলায় প্রথম দিকে কিছু সীমাবদ্ধতা ছিল। তবে ভবিষ্যতে এটি আরো ভালোভাবে কীভাবে মোকাবেলা করা যায় বিশেষজ্ঞরা সেটি দেখছে।
এ প্রেক্ষিতে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার সমালোচনাও করেন ট্রাম্প। চীনা-কেন্দ্রিক আখ্যায়িত করে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থায় অর্থ দেওয়া বন্ধ করাসহ যুক্তরাষ্ট্রের কর্মীদের প্রত্যাহারেরও কথা বলেন তিনি। তবে পরবর্তী প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন যুক্তরাষ্ট্রের নাগরিকদের বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থায় রাখতে তখন থেকেই বিদেশ নীতি বিষয়ক দল গঠন করে রেখেছেন। বাইডেন আগামী ২০ জানুয়ারিতে দায়িত্ব নেবেন।
আপনার মতামত জানানঃ