দেশে এখন মুসলমানের সংখ্যা ৯১ শতাংশ। সনাতন ধর্মাবলম্বী ৭ দশমিক ৯৫ শতাংশ। ২০১১ সালের জনশুমারিতে হিন্দু ছিল ৮ দশমিক ৫৪ শতাংশ। বৌদ্ধধর্মাবলম্বী ছিল শূন্য দশমিক ৬১ শতাংশ। আগের শুমারিতে ছিল শূন্য দশমিক ৬২ শতাংশ।
২০১১ সালের জনশুমারির চেয়ে এবারের জনশুমারিতে হিন্দু জনসংখ্যা কমল দশমিক ৫৯ শতাংশ।
আজ বুধবার রাজধানীর বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্রে বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর (বিবিএস) প্রথম ডিজিটাল ‘জনশুমারি ও গৃহগণনা ২০২২’-এর প্রাথমিক প্রতিবেদন প্রকাশ করা হয়। সেখানে এক অনুষ্ঠানে প্রতিবেদনের বিভিন্ন দিক তুলে ধরেন বিবিএসের প্রকল্প পরিচালক দিলদার হোসেন।
প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়, হিন্দু জনসংখ্যা ৮ দশমিক ৫৪ শতাংশ থেকে কমে ৭ দশমিক ৯৫ শতাংশ, বৌদ্ধ জনসংখ্যা শূন্য দশমিক ৬২ থেকে কমে শূন্য দশমিক ৬১ শতাংশ, খ্রিস্টান জনসংখ্যা শূন্য দশমিক ৩১ থেকে কমে শূন্য দশমিক ৩০ শতাংশ এবং অন্যান্য ধর্মের জনসংখ্যা শূন্য দশমিক ১৪ থেকে কমে শূন্য দশমিক ১২ শতাংশে নেমে এসেছে।
স্বাধীন দেশে প্রথম জনশুমারি হয় ১৯৭৪ সালে। তখন হিন্দু জনসংখ্যা ছিল ১৩ দশমিক ৫ শতাংশ। এরপর আরও চারটি জনশুমারি হয়েছে। সর্বশেষ ২০১১ সালের জনশুমারিতে দেখা গেছে, দেশের মোট জনসংখ্যার ৮ দশমিক ৫৪ শতাংশ হিন্দু।
বিবিএসের ২০১১ সালের জনশুমারি ও গৃহগণনা প্রতিবেদনে দেশে হিন্দু জনসংখ্যা কমে যাওয়ার দুটি কারণ উল্লেখ করা হয়। প্রথমত, হিন্দুদের আউট মাইগ্রেশন হচ্ছে, অর্থাৎ হিন্দুরা দেশ ছাড়ছে। দ্বিতীয়ত, হিন্দু জনগোষ্ঠীর মধ্যে মোট প্রজনন হার বা টোটাল ফার্টিলিটি রেট তুলনামূলক কম। অর্থাৎ হিন্দু দম্পতিরা তুলনামূলকভাবে কম সন্তান জন্ম দেন।
প্রাথমিক প্রতিবেদনে দেখা গেছে, জনসংখ্যার বার্ষিক গড় বৃদ্ধির হার ১ দশমিক ২২। ২০১১ সালের জনশুমারিতে জনসংখ্যার গড় বৃদ্ধির হার ছিল ১ দশমিক ৩৭। জনসংখ্যার ঘনত্ব বেড়ে দাঁড়িয়েছে ১ হাজার ১১৯ জন। ২০১১ সালের শেষ জনশুমারিতে যা ছিল ৯৭৬ জন। সাক্ষরতার হার বেড়ে হয়েছে ৭৪ দশমিক ৬৬। আগের শুমারিতে ছিল ৫১ দশমিক ৭৭ শতাংশ।
সারা দেশে গত ১৫ জুন একযোগে শুরু হয় জনশুমারি ও গৃহগণনা কার্যক্রম। গত ২১ জুন জনশুমারি শেষ হওয়ার কথা থাকলেও উত্তর-পূর্বাঞ্চলের জেলায় বন্যা শুরু হওয়ায় এসব জেলায় শুমারি কার্যক্রম ২৮ জুন পর্যন্ত চলে।
জনগণনা অনুযায়ী হিন্দু জনগোষ্ঠীর হার ও সংখ্যা কমে যাওয়ার কারণ
১৯৫১ সালে হিন্দু জনগোষ্ঠীর হার ছিল ২২.০%। ১৯৬১ সালে ১৮.৫%। ১৯৭৪ সালে ১৩.৫%। ১৯৮১ সালে ১২.১%। ১৯৯১ সালে ১০.৫%। ২০০১ সালে ৯.২%। ২০১১ সালে ৮.৫৪% ২০২২ সালে ৭.৯৫%।
বাংলাদেশে আগের আদমশুমারি অনুযায়ী জনসংখ্যা ছিল ১৪ কোটি ৯৭ লক্ষ। ২০২২ এর রিপোর্ট অনুযায়ী বাংলাদেশের বর্তমান জনসংখ্যা প্রায় ২ কোটি বেড়ে হয়েছে ১৬ কোটি ৫১ লক্ষ ৫৮ হাজার ৬১৬ জন। তার মধ্যে নারীদের সংখ্যা ৮ কোটি ৩৩ লক্ষ এবং পুরুষদের সংখ্যা ৮ কোটি ১৭ লক্ষ। পাশাপাশি তৃতীয় লিঙ্গের সংখ্যা ১২ হাজার ৯২৯ জন।
সাম্প্রতিক প্রতিবেদনে জানানো হয়েছে, গত এক বছরে বাংলাদেশের জনসংখ্যা বেড়েছে প্রায় ২কোটি ১১ লক্ষ। রিপোর্ট অনুযায়ী বাংলাদেশে গত ৫০ বছরে জনসংখ্যা বেড়েছে দ্বিগুণের বেশি।
কিন্তু হিন্দুদের ক্ষেত্রে একেবারে উল্টো। উপরন্তু হিন্দুদের সংখ্যা কমেছে প্রায় ৭৫ লক্ষের বেশি। ৫০ বছর আগে বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরো অনুযায়ী, হিন্দুদের সংখ্যা ছিল ২কোটি ২লক্ষ ১৯হাজার। তাহলে প্রশ্ন হল, এত পরিমাণ সংখ্যাক হিন্দু কোথায় গেল?
২০১০ সালে একবার গুঞ্জন উঠেছিল বাংলাদেশে হিন্দুদের সংখ্যা বেড়েছে। কিন্তু তার হিসাব খাতায়-কলমে সরকারি ভাবে পাওয়া যায়নি। সারা পৃথিবীতে হিন্দু জনসংখ্যার বিচারে প্রথমে রয়েছে ভারত, দ্বিতীয় নেপাল এবং তৃতীয় স্থানে রয়েছে বাংলাদেশ। সেখানে বাংলাদেশেই হিন্দুর সংখ্যা দিনের পর দিন কমছে।
২০১১ সালে বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরো তাদের আদমশুমারি এবং গৃহগণনা প্রতিবেদনে হিন্দু জনসংখ্যা কমে যাওয়ার পিছনে দুটি কারণ উল্লেখ করেছিল। তার মধ্যে প্রথমটি ছিল দেশত্যাগ। দলে দলে হিন্দুরা দেশ ত্যাগ করছেন।
আর দ্বিতীয় কারণটি হল, হিন্দু জনগোষ্ঠীর মধ্যে প্রজনন হার অনেকটা কম। হিন্দু দম্পতিরা কম সন্তান জন্ম দেন। অনেকেই আছেন যারা নিজেদের মাতৃভূমি বাড়িঘর ভিটেমাটি ছেড়ে অন্য দেশে চলে যেতে বাধ্য হন। তার অন্যতম কারণ হলো অত্যাচার। যার জলজ্যান্ত প্রমাণ দূর্গা পুজোর সময় পাওয়া গিয়েছিল। এছাড়াও প্রায় সময় সোশ্যাল মিডিয়ার মাধ্যমে ভাইরাল ভিডিওতে দেখতে পাওয়া যায়।
স্বাধীন বাংলাদেশের প্রথম আদমশুমারি হয়েছিল ১৯৭৪ সালে। তখন বাংলাদেশের মোট জনসংখ্যা প্রায় ৭ কোটি ৬৩ লক্ষের মধ্যে হিন্দুদের সংখ্যা ছিল প্রায় ১ কোটি ৩লক্ষ। ৫০ বছরের আগে সময় আর সম্প্রতি সময়ের যদি তুলনা করা হয় তাহলে হিন্দু জনসংখ্যা প্রচুর পরিমাণে কমে গিয়েছে। ২০১১ সালে যা ছিল ৮.৫৪ শতাংশ, ২০২২ এ এসে তা হয়েছে ৭.৯৫ শতাংশে। অপরদিকে সামান্য কমেছে বৌদ্ধ আর খ্রিস্টান ধর্মাবলম্বীদের হার।
এসডব্লিউ/এসএস/০৭৩০
আপনার মতামত জানানঃ