১৬ ডিসেম্বর বাংলাদেশের বিজয় দিবস। ১৯৭১ সালের যুদ্ধে এ দিনই বিজয় ছিনিয়ে আনেন মুক্তিযোদ্ধারা। সীমান্তবর্তী দেশ ভারত ছিল ওই যুদ্ধে বাংলাদেশের মিত্র। কিন্তু বিজয়ের ৪৯ বছর পূর্তি দিবসের শুরুতে সেই ভারতের কাছ থেকেই এলো দুঃসংবাদটি। ভোরের আলো ফুটতেই যখন দেশের প্রতিটি অঞ্চলে আয়োজন চলছিল বিজয়ের আনন্দ উদযাপনের, ঠিক তখনই ভারতীয় সীমান্তরক্ষী বাহিনীর (বিএসএফ) গুলিতে প্রাণ হারালেন এক বাংলাদেশি তরুণ।
উত্তরাঞ্চলের সীমান্তবর্তী জেলা লালমনিরহাটের পাটগ্রাম উপজেলার শ্রীরামপুর গ্রামের সীমান্তের ওপারে ভারতের রতনপুর গ্রামে এ গুলির ঘটনা ঘটেছে। নিহত ওই তরুণের নাম জাহিদুল ইসলাম (১৯)। তিনি শ্রীরামপুর ইউনিয়নের মধ্য ইসলামপুর গ্রামের দুলাল হোসেনের ছেলে। বিএসএফের গুলিতে জাহিদুল ইসলাম নিহত হওয়ার বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন শ্রীরামপুর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান আবুল হাশেম।
বর্ডার গার্ড বাংলাদেশ (বিজিবি) ও স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, শ্রীরামপুর ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান আবু হাসেম, ৬ নম্বর ওয়ার্ড সদস্য তমিজ উদ্দিন ও নিহতের চাচা আব্দুল হাকিম জানান, ভোরে শ্রীরামপুর সীমান্তের ৮৫২ নম্বর মেইন পিলার ও সাব পিলার ৫ নম্বর এলাকা দিয়ে ভারতীয় গরু ব্যবসায়ীদের সহায়তায় বাংলাদেশি গরু পারাপারকারীদের ৭/৮ জনের একটি দল ভারত থেকে গরু আনতে যায়।
এ সময় বিএসএফের কৌশিক ক্যাম্প ও রতনপুর ক্যাম্পের মাঝামাঝি সীমান্তে পৌঁছলে ভারতের ১৪০ রাণীনগর বিএসএফ ব্যাটালিয়নের রতনপুর ক্যাম্পের টহল দলের সদস্যরা তাদের লক্ষ্য করে গুলি ছোড়ে বলে তারা জানান। এতে গুলিবিদ্ধ হয়ে ঘটনাস্থলেই মারা যান জাহিদুল ইসলাম। এ সময় গুলিতে দুজন আহত হন। প্রাথমিকভাবে আহত দুজনের পরিচয় জানা যায়নি।
বিএসএফ জাহিদুলের লাশ ময়নাতদন্তের জন্য ভারতের মেখলিগঞ্জ থানা-পুলিশের কাছে হস্তান্তর করেছে। সেখানে লাশের ময়নাতদন্ত সম্পন্ন হলে পরে তার লাশ ফেরত পাঠানো হবে। এ বিষয়ে বিএসএফকে পতাকা বৈঠকের আহবান করা হয়েছে বলে জানা গেছে। সীমান্তে বিএসএফের গুলিতে একজন নিহত হওয়ার বিষয়টি স্বীকার করেছেন ৬১ বিজিবি রংপুর ব্যাটালিয়নের শমসেরনগর কোম্পানি কমান্ডার সুবেদার আজহারুল।
এর আগে গত ১০ ডিসেম্বর ২০২০ ভোরে শ্রীরামপুর ইউনিয়ন সীমান্তে বিএসএফের গুলিতে আবু তালেব (৩২) নামের এক যুবক আহত হন। পরে আহত অবস্থায় তাকে উদ্ধার করে রংপুরের একটি বেসরকারি ক্লিনিকে পাঠানো হয়। চিকিৎসাধীন অবস্থায় গত শনিবার রাতে তিনি মারা যান। তার বাড়িও একই ইউনিয়নের ডাঙ্গিরপাড় গ্রামে।
উল্লেখ্য, বাংলাদেশ-ভারত যদিও বন্ধুরাষ্ট্র, তবুও এ দুই দেশের সীমান্তে রাষ্ট্রীয় হত্যা হয় গোটা বিশ্বের মধ্যে সবচেয়ে বেশি। তবে এই গুলির ঘটনা একতরফা। বাংলাদেশের সীমান্তরক্ষী বাহিনীর পক্ষ থেকে ভারতীয় কোনো নাগরিক গুলিবিদ্ধ না হলেও ভারতের পক্ষ থেকে নিয়ম করেই গুলি চালিয়ে বাংলাদেশি নাগরিকদের হত্যা করা হচ্ছে।
সীমান্তে হত্যা বন্ধ করার লক্ষ্য নিয়ে ২০১৮ সালের এপ্রিলে একটি দ্বিপাক্ষিক চুক্তি হয় দুই দেশের মধ্যে। সেখানে সীমান্ত অতিক্রমের ঘটনায় প্রাণঘাতী অস্ত্রের ব্যবহার না করতে একমত হয় দুই দেশ। কিন্তু ভারত তা লঙ্ঘন করে চলেছে অব্যাহতভাবে। এমনকি দুই দেশের বন্ধুত্বের স্মারক এই বিজয় দিবসেও ভারতীয় বাহিনী হত্যা থেকে বিরত থাকেনি।
চলতি ২০২০ সালের প্রথম ছয় মাসে সীমান্তে ভারতীয় সীমান্তরক্ষীদের গুলি ও নির্যাতনে বাংলাদেশি নাগরিকদের মৃত্যুর ঘটনা গত বছরের তুলনায় বেড়েছে বলে জানিয়েছে মানবাধিকার সংগঠন আইন ও সালিশ কেন্দ্র, আসক। তাদের দেয়া তথ্য বলছে, জানুয়ারি থেকে জুন মাস পর্যন্ত সীমান্তে ২৫ জন বাংলাদেশি নাগরিক নিহত হয়েছেন, যাদের মধ্যে ২১ জনেরই মৃত্যু হয়েছে ভারতীয় সীমান্তরক্ষী বাহিনী বা বিএসএফের সেনাদের সরাসরি গুলিতে।
এসডাব্লিউ/পিএ-বিডি/আরা/২২২০
আপনার মতামত জানানঃ