চারদিন ধরে নিখোঁজ কুষ্টিয়ার সাংবাদিক হাসিবুর রহমান রুবেল। তাকে ফিরিয়ে দেওয়ার দাবিতে কুষ্টিয়ার সর্বস্তরের সাংবাদিকদের আয়োজনে মানববন্ধন ও প্রতিবাদ সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়েছে। বুধবার বেলা ১২টায় কুষ্টিয়া প্রেসক্লাবের সামনে এ মানববন্ধনে অংশ নেন জেলায় কর্মরত সাংবাদিকরা। হাসিবুর রহমান রুবেলের সন্ধান না পেলে কঠোর আন্দোলনের হুমকি দেওয়া হয়।
প্রতিবাদ সমাবেশে কুষ্টিয়া প্রেসক্লাবের সাবেক সভাপতি ও বাংলাদেশ বার্তা পত্রিকার সম্পাদক আবদুর রশিদ চৌধুরীর সভাপতিত্বে মানববন্ধনে বক্তব্য দেন কুষ্টিয়া প্রেসক্লাবের সহ-সভাপতি ডাক্তার গোলাম মওলা, সাবেক সহ-সভাপতি ও জেলা এডিটরস ফোরামের সভাপতি মুজিবুল শেখ, সাবেক সহ-সভাপতি লুৎফর রহমান কুমার, নির্বাহী সদস্য ও মাইটিভির জেলা প্রতিনিধি আবদুর রাজ্জাক বাচ্চু প্রমুখ।
বক্তারা বলেন, রুবেলকে যত দিন আমরা ফিরে না পাব, তত দিন নানা কর্মসূচি পালন করব। সন্ধান না পেলে কঠোর আন্দোলনে নামব।
কুষ্টিয়া প্রেসক্লাবের নির্বাহী সদস্য হাসান আলীর সঞ্চালনায় প্রতিবাদ সমাবেশে নিখোঁজ সাংবাদিক হাসিবুর রহমান রুবেলের মা ফিরোজা আক্তার, স্ত্রী ইতি খাতুন ও ছোট ভাই মাহাবুব অংশ নেন।
রুবেলকে যত দিন আমরা ফিরে না পাব, তত দিন নানা কর্মসূচি পালন করব। সন্ধান না পেলে কঠোর আন্দোলনে নামব।
গত ৩ জুলাই হাসিবুর রহমান রুবেল রাত ৯টার দিকে কুষ্টিয়া শহরের সিঙ্গার মোড়ে তার পত্রিকা অফিসে থাকা অবস্থায় তার মোবাইলে একটি কল এলে তিনি অফিস পিয়নকে বাইরে থেকে আসছি বলে বের হন। এরপর থেকে তার মোবাইল ফোন বন্ধ পাওয়া যাচ্ছে। তার আর কোনো খোঁজ পাওয়া যায়নি।
হাসিবুর রহমান রুবেল কুষ্টিয়া জেলা রিপোর্টার্স ক্লাবের সাধারণ সম্পাদক, জেলা থেকে প্রকাশিত দৈনিক কুষ্টিয়ার খবর পত্রিকার ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক ও অনলাইন নিউজ পোর্টাল ক্রাইম ভিশন বিডি ডটকমের সম্পাদক হিসেবেও দায়িত্ব পালন করছেন।
কুষ্টিয়া মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) ছাবিরুল আলম জানান, আমরা তাকে খুঁজছি। তার খোঁজ পেতে জোর তৎপরতা চালানো হচ্ছে।
বাংলাদেশে সাংবাদিক নির্যাতন যেন নিত্যদিনের ঘটনা৷ শুধু অপহরণ কিংবা হামলা নয়, প্রচুর মামলারও শিকার হন সাংবাদিকরা৷ ২০২১ সালে শুধু ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে কমপক্ষে ১ হাজার ১৩৪টি মামলা হয়েছে৷ এই মামলাগুলোর বড় একটা অংশ হয়েছে সাংবাদিকদের বিরুদ্ধে৷
মানবাধিকার সংগঠন আইন ও সালিশ কেন্দ্র বলছে, করোনাকালে এবং এর আগে-পরে পেশাগত দায়িত্ব পালনকালে সরকারি কর্মকর্তা, ক্ষমতাসীন দল ও বিভিন্ন প্রভাবশালী ব্যক্তিদের রোষানলে পড়ে হামলা, মামলাসহ নানাভাবে নির্যাতনের শিকার হয়েছেন মোট ২১০ জন সাংবাদিক৷ এর মধ্যে নোয়াখালিতে বোরহান উদ্দিন মোজাক্কির নামে একজন সাংবাদিক নিহত হয়েছেন৷
সংশ্লিষ্ট বিশেষজ্ঞরা বলছেন, যে-ই সুযোগ পাচ্ছে সে-ই সাংবাদিকদের উপর নির্যাতন করছে৷ সেটা যে শুধু সরকারি দলের লোক তা নয়, ব্যবসায়ীরা করছে, অর্থশালীরা করছে৷ আসলে সাংবাদিকদের খবরটি যাদের বিরুদ্ধে যাচ্ছে, তারাই এটা করছে৷
তারা মনে করেন নির্যাতনকারীদের কঠোর শাস্তি হলে বারবার নির্যাতনের ঘটনা ঘটতো না৷
তারা বলেন, বিচারহীনতার সংস্কৃতি এই জন্য সবচেয়ে বেশি দায়ী৷ বিচারের জন্য বছরের পর বছর ঘুরতে হচ্ছে৷ এই যে সাগর-রুনি হত্যাকাণ্ডের ১২ বছরে পুলিশ ৮৯ বার আদালত থেকে সময় নিয়েছে, অথচ খুনিদের ধরতে পারেনি৷ বিচারহীনতার এই সংস্কৃতিটাই সাংবাদিকতা পেশাকে আরো বেশি ঝুঁকিপূর্ণ করে তুলেছে৷
তারা আরও বলেন, যাদের বিরুদ্ধে খবর হচ্ছে, তারাই হামলা করছে৷ যারা অন্যায় করে, দখল করে, ক্ষমতার অপব্যবহার করে, তারাই হামলাকারী৷ আবার নির্দিষ্ট কোনো পেশার সবাই কিন্তু এটা করেন না৷ এই খারাপ মানুষগুলোই সাংবাদিকদের বিরুদ্ধে কথা বলেন৷ আমাদের এখন থেকে শক্তভাবে প্রতিবাদ করতে হবে
এসডব্লিউ/এমএন/কেএইচ/২০২১
আপনার মতামত জানানঃ