কুষ্টিয়ায় নিখোঁজের পাঁচ দিন পর সাংবাদিক হাসিবুর রহমান রুবেলের মরদেহ উদ্ধার করেছে পুলিশ।
বৃহস্পতিবার (৭ জুলাই) দুপুর দেড়টার দিকে কুষ্টিয়ার কুমারখালী উপজেলার কুমারখালী পৌরসভার ৮ নম্বর ওয়ার্ডের তেবাড়িয়া গ্রামের গোলাম কিবরিয়া ব্রিজের (নির্মাণাধীন) নিচ থেকে তার অর্ধগলিত মরদেহ উদ্ধার করা হয়।
নিহত রুবেল (৩১) কুষ্টিয়া জেলা রিপোর্টার্স ক্লাবের সাধারণ সম্পাদক, স্থানীয় দৈনিক কুষ্টিয়ার খবর পত্রিকার ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক ও দৈনিক আমাদের নতুন সময় পত্রিকার কুষ্টিয়া জেলা প্রতিনিধি ছিলেন। তিনি কুষ্টিয়া শহরের হাউজিং এ-ব্লক এলাকার মৃত হাবিবুর রহমানের ছেলে।
পুলিশ ও পারিবারিক সূত্রে জানা গেছে, গত রবিবার রাতে কুষ্টিয়া শহরের সিঙ্গার মোড়ে তার পত্রিকা অফিসে ছিলেন। ৯টার দিকে মোবাইল ফোনে একটি কল পাওয়ার পর অফিসের পিয়নকে ‘বাইরে থেকে আসছি’ বলে দ্রুত বেরিয়ে যান। এরপর থেকে তার মোবাইল বন্ধ পাওয়া যায়।
এ ঘটনায় রুবেলের ছোট ভাই ওইদিনই কুষ্টিয়া মডেল থানায় একটি সাধারণ ডায়েরি (জিডি) করেন।
আজ দুপুরে সেতুর নিচে নদীতে লাশ ভেসে ওঠে। পরনের জামা-কাপড় ও মানিব্যাগে থাকা পরিচয়পত্র দেখে তাকে শনাক্ত করা হয়েছে।
নিহতের ছোট ভাই মাহবুর রহমান বলেন, আমার ভাই খুব ভালো মানুষ ছিল। তিনি সাংবাদিকতার পাশাপাশি কাঁচামালের আড়তদারি করতেন। একজন পরোপকারী ছিলেন। আমার ভাইকে কে বা কারা পূর্বপরিকল্পিতভাবে হত্যা করেছে। হত্যাকারীদের দ্রুত গ্রেপ্তার এবং দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবি জানাই।
নিহতের চাচা মিজানুর রহমান মেজর বলেন, সুনির্দিষ্টভাবে কারও বিরুদ্ধে আমাদের অভিযোগ নেই। তাকে পূর্বপরিকল্পিতভাবে হত্যা করা হয়েছে। পুলিশের সহযোগিতা চাই, আমরা মামলা করব। তদন্ত করে আসল ঘটনা বের করে আনবে পুলিশ। হত্যাকারীদের কঠোর শাস্তি দাবি করছি।
কুষ্টিয়া প্রেস ক্লাবের সাধারণ সম্পাদক আনিসুজ্জামান ডাবলু বলেন, রুবেলের মৃত্যুতে গভীর শোক প্রকাশ করছি। রুবেল হত্যাকাণ্ডের সঙ্গে জড়িতদের দ্রুত আইনের আওতায় এনে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবি জানাচ্ছি।
কুষ্টিয়া প্রেসক্লাবের সহ-সভাপতি ডাক্তার গোলাম মওলা বলেন, রুবেল একজন ভালো ছেলে ছিল। পরিবারের পক্ষ থেকে সুনির্দিষ্ট কোনো অভিযোগ এখনো করা হয়নি। আমরা এ হত্যাকাণ্ডের সুষ্ঠু বিচার চাই।
কুমারখালী থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) কামরুজ্জামান তালুকদার জানান, দুপুরে সাংবাদিক হাসিবুর রহমান রুবেলের লাশ উদ্ধার করেছে নৌপুলিশ। বিষয়টি তদন্ত করে দেখা হচ্ছে। এ ঘটনায় এখন পর্যন্ত কাউকে আটক করা যায়নি।
মোবাইল ফোনে একটি কল পাওয়ার পর অফিসের পিয়নকে ‘বাইরে থেকে আসছি’ বলে দ্রুত বেরিয়ে যান। এরপর থেকে তার মোবাইল বন্ধ পাওয়া যায়।
বাংলাদেশে সাংবাদিকদের সুরক্ষা নিয়ে সম্প্রতি উদ্বেগ প্রকাশ করেছে গণমাধ্যম নিয়ে কাজ করা আন্তর্জাতিক সংগঠন আর্টিকেল নাইনটিন।
চলতি বছরের জুন মাসের মধ্যে বাংলাদেশে তিনজন গণমাধ্যমকর্মী খুন হওয়ার ঘটনায় আন্তর্জাতিক মানবাধিকার সংস্থা আর্টিকেল নাইনটিন গভীর শংকা ও উদ্বেগ প্রকাশ করেছে।
সংগঠনটির হিসাব অনুযায়ী, এ বছরের জানুয়ারি থেকে মে মাস পর্যন্ত ১১৮ জন সাংবাদিক আহত ও লাঞ্ছিত হয়েছেন। এছাড়া জুন মাসেই তিন গণমাধ্যমকর্মী খুন হয়েছেন। ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন সংশোধনসহ সাংবাদিক খুন ও নির্যাতনের ঘটনায় বিচার দাবি করেছে আর্টিকেল নাইনটিন।
এক বিবৃতিতে বলেছে, বাংলাদেশে সাংবাদিকদের অধিকার লঙ্ঘন ও হত্যাসহ নির্যাতনের ধারা অব্যাহত। এই প্রবণতা মতপ্রকাশের স্বাধীনতা পরিস্থিতির ক্রমাবনত নাজুক অবস্থা ও বিচারহীনতার পরিস্থিতি নির্দেশ করে।
মানবাধিকার সংগঠন আইন ও সালিশ কেন্দ্র বলছে, করোনাকালে এবং এর আগে-পরে পেশাগত দায়িত্ব পালনকালে সরকারি কর্মকর্তা, ক্ষমতাসীন দল ও বিভিন্ন প্রভাবশালী ব্যক্তিদের রোষানলে পড়ে হামলা, মামলাসহ নানাভাবে নির্যাতনের শিকার হয়েছেন মোট ২১০ জন সাংবাদিক৷ এর মধ্যে নোয়াখালিতে বোরহান উদ্দিন মোজাক্কির নামে একজন সাংবাদিক নিহত হয়েছেন৷
সংশ্লিষ্ট বিশেষজ্ঞরা বলছেন, যে-ই সুযোগ পাচ্ছে সে-ই সাংবাদিকদের উপর নির্যাতন করছে৷ সেটা যে শুধু সরকারি দলের লোক তা নয়, ব্যবসায়ীরা করছে, অর্থশালীরা করছে৷ আসলে সাংবাদিকদের খবরটি যাদের বিরুদ্ধে যাচ্ছে, তারাই এটা করছে৷
তারা মনে করেন নির্যাতনকারীদের কঠোর শাস্তি হলে বারবার নির্যাতনের ঘটনা ঘটতো না৷
তারা বলেন, বিচারহীনতার সংস্কৃতি এই জন্য সবচেয়ে বেশি দায়ী৷ বিচারের জন্য বছরের পর বছর ঘুরতে হচ্ছে৷ এই যে সাগর-রুনি হত্যাকাণ্ডের ১২ বছরে পুলিশ ৮৯ বার আদালত থেকে সময় নিয়েছে, অথচ খুনিদের ধরতে পারেনি৷ বিচারহীনতার এই সংস্কৃতিটাই সাংবাদিকতা পেশাকে আরো বেশি ঝুঁকিপূর্ণ করে তুলেছে৷
তারা আরও বলেন, যাদের বিরুদ্ধে খবর হচ্ছে, তারাই হামলা করছে৷ যারা অন্যায় করে, দখল করে, ক্ষমতার অপব্যবহার করে, তারাই হামলাকারী৷ আবার নির্দিষ্ট কোনো পেশার সবাই কিন্তু এটা করেন না৷ এই খারাপ মানুষগুলোই সাংবাদিকদের বিরুদ্ধে কথা বলেন৷ আমাদের এখন থেকে শক্তভাবে প্রতিবাদ করতে হবে।
এসডব্লিউ/এমএন/কেএইচ/১৯১৬
আপনার মতামত জানানঃ