রাজধানীর হাজারীবাগ থানাধীন রায়েরবাজার এলাকার একটি বাসা থেকে সোহানা পারভিন তুলি নামে এক নারী সাংবাদিকের ঝুলন্ত লাশ উদ্ধার করেছে পুলিশ।
হাজারীবাগে শেরেবাংলা রোডের একটি ছয়তলা ভবনের দোতলায় ভাড়া থাকতেন তুলি। এ বাসার একটি ঘরে গলায় ফাঁস দেয়া অবস্থায় পাওয়া যায় তার লাশ।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের সাবেক শিক্ষার্থী তুলি ঢাকা সাংবাদিক ইউনিয়ন এবং সাব এডিটরস কাউন্সিলের সদস্য।
তুলি দৈনিক কালের কণ্ঠ, বাংলা ট্রিবিউন এবং আমাদের সময় কাজ করেছেন। সম্প্রতি তিনি অনলাইনে খাবারে ব্যবসা শুরু করেছিলেন বলে জানা গেছে।
হাজারীবাগ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মোক্তারুজ্জামান বলেন, গলায় ওড়না প্যাঁচানো অবস্থায় বৈদ্যুতিক পাখার সঙ্গে ঝুলন্ত অবস্থায় সোহানার লাশ পাওয়া গেছে। প্রাথমিকভাবে দেখে মনে হচ্ছে, তিনি আত্মহত্যা করেছেন। তবে কারণ সম্পর্কে এখন পর্যন্ত কোনো তথ্য পাওয়া যায়নি।
ওসি বলেন, সোহানা শেরেবাংলা সড়কের একটি বাসায় থাকতেন। তার ছোট ভাই একটি বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী। তিনি হাজারীবাগ এলাকাতেই বন্ধুদের সঙ্গে থাকেন। তবে কখনো কখনো তিনি বোনের বাসাতে এসে থাকতেন।
মৃত সোহানার সাবেক সহকর্মী ও বাংলা ট্রিবিউনের একাধিক সাংবাদিক বলেন, তারা দুপুর সাড়ে ৩টার দিকে খবর পেয়ে ঘটনাস্থলে এসেছেন। পুলিশ সাড়ে ৫টার পর লাশ উদ্ধার কাজ শুরু করেছে। কিভাবে মারা গেছে সেটি এখনও নিশ্চিত হওয়া যায়নি।
সহকর্মীরা আরও বলেন, বাসার ভেতরে লাইট জ্বালানো অবস্থায় রয়েছে। এ থেকে ধারণা করা হচ্ছে, শেষ রাতে বা ভোরে মৃত্যুর ঘটনা ঘটতে পারে। তবে তিনি আত্মহত্যা করেছেন নাকি কেউ তাকে হত্যা করেছে- সেটি নিশ্চিত করে বলতে পারেনি কেউ।
সর্বশেষ সোহানা অনলাইন নিউজ পোর্টাল বাংলা ট্রিবিউনের কর্মী ছিলেন বলে জানিয়েছেন তার বন্ধু রোকসানা মিলি। তিনি বলেন, সোহানা বাংলা ট্রিবিউন ছেড়েছেন বেশ কয়েক মাস হয়ে গেছে। তিনি নতুন চাকরি খুঁজছিলেন। তার মা–বাবা থাকেন যশোরে।
সর্বশেষ গতকাল মঙ্গলবার দুপুরে সোহানার সঙ্গে কথা হয়েছিল জানিয়ে রোকসানা মিলি বলেন, স্বাভাবিকভাবেই তার সঙ্গে কথা হয়েছিল। অস্বাভাবিক কিছু মনে হয়নি। পরে আর তার সঙ্গে কথা হয়নি। অন্য এক বন্ধু গতকাল রাত থেকে সোহানার সঙ্গে যোগাযোগের চেষ্টা করছিলেন। যোগাযোগ করতে না পেরে আজ বেলা আড়াইটার দিকে ওই বন্ধু বাসায় এসে দেখেন, ভেতর থেকে দরজা বন্ধ। পরে দরজা ভেঙে দেখা যায়, সোহানা পারভীন বৈদ্যুতিক পাখার সঙ্গে ঝুলে আছেন।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, যে-ই সুযোগ পাচ্ছে সে-ই সাংবাদিকদের উপর নির্যাতন করছে৷ সেটা যে শুধু সরকারি দলের লোক তা নয়, ব্যবসায়ীরা করছে, অর্থশালীরা করছে৷ আসলে সাংবাদিকদের খবরটি যাদের বিরুদ্ধে যাচ্ছে, তারাই এটা করছে৷
তারা মনে করেন নির্যাতনকারীদের কঠোর শাস্তি হলে বারবার নির্যাতনের ঘটনা ঘটতো না৷
তারা বলেন, বিচারহীনতার সংস্কৃতি এই জন্য সবচেয়ে বেশি দায়ী৷ বিচারের জন্য বছরের পর বছর ঘুরতে হচ্ছে৷ এই যে সাগর-রুনি হত্যাকাণ্ডের ১২ বছরে পুলিশ ৮৯ বার আদালত থেকে সময় নিয়েছে, অথচ খুনিদের ধরতে পারেনি৷ বিচারহীনতার এই সংস্কৃতিটাই সাংবাদিকতা পেশাকে আরো বেশি ঝুঁকিপূর্ণ করে তুলেছে৷
এসডব্লিউ/এমএন/কেএইচ/২১৪৪
আপনার মতামত জানানঃ