নওগাঁর সাপাহার সীমান্তবর্তী পুনর্ভবা নদী থেকে এক বাংলাদেশি যুবকের গুলিবিদ্ধ মরদেহ উদ্ধার করেছে পুলিশ। বাংলাদেশি যুবকের মৃত্যু বিএসএফের গুলিতে হয়েছে বলে অভিযোগ উঠেছে।
বুধবার (৬ জুলাই) সকালে মরদেহটি উদ্ধার করা হয়।
নিহত ব্যক্তি হলেন, উপজেলার পাতাড়ী দক্ষিণপাড়া গ্রামের জোহাত আলীর ছেলে রমজান আলী।
স্থানীয়রা জানান, রোববার রাতে আট জনের একটি দল ওপারে গরু আনতে যায়। ভারতে প্রবেশের পর বিএসএফ সদসরা তাদের ধাওয়া করলে অন্যরা ফিরে এলেও রমজান গুলিবিদ্ধ হয়ে মারা যান।
সাপাহার থানার ওসি মাহমুদ জানান, রোববার রাত ১০টা থেকে নিখোঁজ ছিলেন রমজান। মঙ্গলবার বিকেলে পুনর্ভবা নদীতে তার মরদেহ ভাসতে দেখে স্থানীয়রা থানায় জানান। পুলিশ গিয়ে মরদেহ হেফাজতে নেয়।
ওসি আরও জানান, মরদেহের সুরতহালে পিঠের বাম পাশে একটি গুলির চিহ্ন পাওয়া গেছে। মরদেহ ময়নাতদন্তের জন্য নওগাঁ সদর হাসপাতাল মর্গে পাঠানো হয়েছে।
সীমান্ত হত্যার সংখ্যা শূন্যতে আনা এবং সীমান্তরক্ষী বাহিনীর প্রাণঘাতী অস্ত্রের ব্যবহার বন্ধের বিষয়ে বাংলাদেশ ও ভারত— দুই দেশই সম্মত হয়েছে কয়েক বছর আগে। এরপরও সেটা বন্ধ হয়নি। বরং বেড়েছে।
এ বিষয়ে নওগাঁ-১৬ বিজিবি ব্যাটালিয়নের অধিনায়ক লেফটেন্যান্ট কর্নেল আসাদুজ্জামান বলেন, মরদেহ উদ্ধারের খবর শুনেছি। এ ক্ষেত্রে বিএসএফের সংশ্লিষ্টতা থাকলে বিজিবির পক্ষ থেকে পদক্ষেপ নেয়া হবে।
নানা সময়ে বর্ডার গার্ড বাংলাদেশ (বিজিবি) ও ভারতীয় সীমান্তরক্ষী বাহিনী বিএসএফের শীর্ষ পর্যায়ের সম্মেলনে সীমান্তে নন-লিথ্যাল উইপন (প্রাণঘাতী নয়) অস্ত্র ব্যবহারের সিদ্ধান্ত হয়। সীমান্ত হত্যা শূন্যের কোঠায় নামিয়ে আনার ব্যাপারে সদিচ্ছার কথাও বলেন নীতিনির্ধারকরা। এমনকি উভয় দেশের মধ্যে রাজনৈতিক পর্যায়ের আলোচনায়ও সীমান্ত হত্যা শূন্যে নামিয়ে আনতে প্রতিশ্রুতি দিয়েছিল ভারত; কিন্তু বাস্তবে তার প্রতিফলন খুব কমই চোখে পড়ছে। সম্প্রতি বাংলাদেশ-ভারত সীমান্তে হত্যার ঘটনা উদ্বেগ বাড়িয়ে তুলেছে।
সীমান্ত হত্যার সংখ্যা শূন্যতে আনা এবং সীমান্তরক্ষী বাহিনীর প্রাণঘাতী অস্ত্রের ব্যবহার বন্ধের বিষয়ে বাংলাদেশ ও ভারত— দুই দেশই সম্মত হয়েছে কয়েক বছর আগে। এরপরও সেটা বন্ধ হয়নি। বরং বেড়েছে।
বাংলাদেশ-ভারত যদিও বন্ধুরাষ্ট্র, তবুও এ দুই দেশের সীমান্তে রাষ্ট্রীয় হত্যা হয় গোটা বিশ্বের মধ্যে সবচেয়ে বেশি। তবে এই গুলির ঘটনা একতরফা। বাংলাদেশের সীমান্তরক্ষী বাহিনীর পক্ষ থেকে ভারতীয় কোনো নাগরিক গুলিবিদ্ধ না হলেও ভারতের পক্ষ থেকে নিয়ম করেই গুলি চালিয়ে বাংলাদেশি নাগরিকদের হত্যা করা হচ্ছে।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, কেবল রাজনৈতিক ইচ্ছাশক্তিই সীমান্তে হত্যার সংখ্যা হ্রাস করতে পারে। গোটা দেশের আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিশ্লেষকরা এ প্রশ্নে একমত যে, কেবল ভারতের রাজনৈতিক নেতৃত্বকে বাংলাদেশের সরকার বাধ্য করতে পারলেই সীমান্ত হত্যা বন্ধ করা সম্ভব হতে পারে।
তারা মনে করেন, সীমান্ত হত্যার পেছনেও ঐতিহাসিক রাজনৈতিক সন্দেহ রয়েছে। ভারত ছোট দেশকে সব সময় ছোট করেই রাখতে চায়। তাই সীমান্ত হত্যাসহ বিভিন্ন সমস্যা সমাধান হচ্ছে না। বাংলাদেশ ও ভারতের সম্পর্ক শুধু কাগজে কলমে। তাই ভারতের ক্ষমতাসীনদের মধ্যে বাংলাদেশকে দাবিয়ে রাখার প্রবণতা লক্ষ্য করা যায়।
এসডব্লিউ/এমএন/কেএইচ/১৮২৮
আপনার মতামত জানানঃ