ফিলিস্তিনের ভূখণ্ড থেকে ইসরায়েলের দক্ষিণাঞ্চলের আশকেলন শহর লক্ষ্য করে রকেট হামলার জবাবে গাজা উপত্যকায় বিমান হামলা শুরু করেছে ইসরায়েল। তুলনামূলকভাবে ওই অঞ্চল কয়েক মাস ধরে শান্ত থাকার পর অশান্ত হয়ে উঠল।খবর আলজাজিরা
তবে ফিলিস্তিনি মিডিয়া বলছে, গাজার কৃষি জমিতে হামলা চালিয়েছে ইসরায়েল। শনিবার (১৮ জুন) কৃষি জমিতে বিমান হামলা চালানো হয়। তবে এই হামলায় হতাহতের সংখ্যা এখন পর্যন্ত জানান যায় নিবলে প্রতিবেদনে বলা হয়েছে।
ফিলিস্তিনের গণমাধ্যমের খবরে বলা হয়েছে, শনিবার গাজা উপতক্যার একটি কৃষি এলাকায় ইসরায়েলের বিমান হামলা হয়েছে। তবে গাজা উপত্যকার ক্ষমতাসীন শাসকগোষ্ঠী হামাসের সামরিক স্থাপনা লক্ষ্য করে বিমান হামলা চালানো হয়েছে বলে দাবি করেছে ইসরায়েলি বাহিনী।
এক বিবৃতিতে ইসরায়েলের সেনাবাহিনী বলেছে, রকেট হামলার জবাবে ইসরায়েলের প্রতিরক্ষা বাহিনীর বিমান গাজা উপত্যকায় হামাসের বেশ কয়েকটি লক্ষ্যবস্তুতে আঘাত হেনেছে। তবে ইসরায়েলি হামলায় গাজা উপত্যকায় কোনও হতাহত হয়েছে কিনা তাৎক্ষণিকভাবে তা জানা যায়নি।
এছাড়া এই হামলার ব্যাপারে হামাসের পক্ষ থেকেও তাৎক্ষণিকভাবে কোনও প্রতিক্রিয়া পাওয়া যায়নি। পাশাপাশি উপতক্যার অন্য কোনও গোষ্ঠী আশকেলন শহরে হামলার দায় স্বীকার করেনি।
ইসরায়েল-অধিকৃত পশ্চিম তীরের জেনিনে সামরিক অভিযানের একদিন পর গাজায় এই বিমান হামলা হয়েছে। ওই অভিযানে অন্তত ৩ ফিলিস্তিনি নিহত এবং আরও ১০ জন আহত হন। এছাড়া শুক্রবার ইসরায়েলি একটি পর্যবেক্ষণ বেলুন উত্তর গাজা উপত্যকায় বিধ্বস্ত হয়।
ফিলিস্তিনি সংবাদ সংস্থা ওয়াফা জেনিনে ইসরায়েলি সামরিক অভিযানে নিহতদের পরিচয় প্রকাশ করেছে। এতে বলা হয়েছে, জেনিনে অভিযানে নিহতরা হলেন বারা লাহলুহ (২৪), ইউসুফ সালাহ (২৩) এবং লাইথ আবু সুরুর (২৪)।
হামাস বলেছে, নিহতদের মধ্যে তাদের একজন সদস্যও আছেন। অন্যদিকে উপত্যকার আরেক গোষ্ঠী ফিলিস্তিনি ইসলামিক জিহাদ জেনিনে অভিযানে নিহতরা তাদের সদস্য বলে দাবি করেছে।
এর আগে, ইসরায়েল-ফিলিস্তিন আন্তঃসীমান্ত রকেট হামলার সর্বশেষ ঘটনা ঘটেছিল এপ্রিলে। ওই সময় গাজা উপত্যকায় যুদ্ধবিমান থেকে হামলা চালায় ইসরায়েল। পরে ইসরায়েলের সামরিক বাহিনী জানায়, হামাসের একটি অস্ত্র উৎপাদন কারখানায় হামলা চালানো হয়েছে।
ইসরায়েল-অধিকৃত পশ্চিম তীরের জেনিনে সামরিক অভিযানের একদিন পর গাজায় এই বিমান হামলা হয়েছে।
ফিলিস্তিনের স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় বলেছে, চলতি বছরে ইসরায়েলি সৈন্যরা ৬০ জনের বেশি ফিলিস্তিনিকে হত্যা করেছে। বেশিরভাগ ফিলিস্তিনিকে অভিযানের সময়ই ইসরায়েলি সৈন্যরা হত্যা করে। অন্যদিকে, গত মার্চ মাস থেকে এখন পর্যন্ত ফিলিস্তিনি হামলায় ইসরায়েলে অন্তত ১৯ জন নিহত হয়েছে।
গত মাসে ইসরায়েলি সামরিক বাহিনীর অভিযানের খবর পরিবেশনের সময় আলজাজিরার সাংবাদিক শিরিন আবু আকলেহকে হত্যা করে ইসরায়েলে সৈন্যরা। যখন তাকে গুলি করে হত্যা করা হয় তখন ‘প্রেস’ লেখা জ্যাকেট পরেছিলেন তিনি।
এদিকে বিষণ্নতায় ভুগছে ফিলিস্তিনের অবরুদ্ধ গাজার শিশুরা। এ সংখ্যা একশ কিংবা দুইশ নয়; হাজার হাজার। প্রতি পাঁচটি শিশুর চারটিই মানসিক অবসাদ, বিষণ্নতা, ভয় ও আতঙ্ক নিয়ে বড় হচ্ছে।
নতুন এক গবেষণা রিপোর্টে বলা হয়েছে, বর্তমানে উপত্যকার ৮০ শতাংশ শিশুই মানসিক অবসাদে আক্রান্ত।
ফিলিস্তিনের কট্টর ইসলামপন্থী সংগঠন হামাসের সদস্যরা গাজার নিয়ন্ত্রণ নেওয়ায় ২০০৭ সালের জুনে ইসরায়েল গাজা অবরোধ করে। ইসরায়েল ও মিশর গাজা উপত্যকা থেকে মানুষজনের যাতায়াত ও প্রয়োজনীয় পণ্যের আনা নেওয়া কঠোরভাবে নিয়ন্ত্রণ করে থাকে।
গাজা হচ্ছে ফিলিস্তিনের এমন একটি এলাকা, যা পশ্চিম তীর থেকে বিচ্ছিন্ন। এই এলাকাটি ৪১ কিলোমিটার বা ২৫ মাইল দীর্ঘ এবং ১০ কিলোমিটার চওড়া। একদিকে ভূমধ্যসাগর, তিন দিকে ইসরায়েল ও দক্ষিণ দিকে মিশরের সিনাই সীমান্ত।
ফিলিস্তিনি স্বাধীনতাকামী সংগঠন হামাস ২০০৬ সালে অনুষ্ঠিত ফিলিস্তিনি সাধারণ নির্বাচনে জয়লাভ করে। পরে অপর প্রভাবশালী সংগঠন ফাতাহর সঙ্গে নির্বাচন নিয়ে প্রতিদ্বন্দ্বিতার জেরে পশ্চিম তীর থেকে ফাতাহ হামাসের নেতাকর্মীদের বের করে দিলে গাজার নিয়ন্ত্রণ নেয় সংগঠনটি। তখন থেকেই মিশর ও ইসরায়েল যৌথভাবে গাজার ওপর অবরোধ আরোপ করে।
গাজা উপত্যকার অবরোধ মূলত শুরু হয় ২০০৭ সালের জুনে। এর ফলে গত ১৫ বছরে ভূমধ্যসাগরপাড়ের ছোট্ট ভূ-খণ্ডটির অর্থনীতি ব্যাপকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। অবরোধের কারণে এখানকার অধিবাসীদের চলাচল সীমিত হয়ে পড়েছে। যার ফলে এখানকার শিশুদের জীবনে মারাত্মক প্রভাব ফেলেছে।
মাত্র কয়েক বর্গকিলোমিটার আয়তনের এ উপত্যকায় রীতিমতো গাদাগাদি করে বসবাস করে প্রায় ২০ লাখ মানুষ। এর জনসংখ্যার ৪৭ শতাংশই বর্তমানে শিশুকিশোর।
সেভ দ্য চিলড্রেনের রিপোর্টে বলা হয়েছে, এখানকার প্রায় ৮ লাখ শিশুকিশোরই অবরোধের বাইরের জীবন কেমন তা দেখেনি। এর মধ্যে তাদের আবার এমনসব পরিস্থিতির মুখে পড়তে হয়, যা যেকোনো মুহূর্তে তাদের জীবন কেড়ে নিতে পারে।
সেভ দ্য চিলড্রেনের রিপোর্টে আরও ভয়ানক তথ্য উঠে এসেছে। আর তা হলো, উপত্যকার শিশুদের অর্ধেকই কোনো না কোনো সময় আত্মহত্যা করার কথা ভাবছে। শুধু তাই নয়, প্রতি পাঁচজন শিশুর মধ্যে তিনজন নিজের ক্ষতি করার চেষ্টা করছে।
এসডব্লিউ/এমএন/কেএইচ/১৯৩৪
আপনার মতামত জানানঃ