আজ বুধবার (১৫ জুন) সকাল থেকে কুমিল্লা সিটি করপোরেশন নির্বাচনের ভোটগ্রহণ শুরু হয়েছে। সকাল ৮টা থেকে ভোটগ্রহণ শুরু হয়েছে। চলবে বিকেল ৪টা পর্যন্ত। এই ভোট নিয়ে ইতিমধ্যেই তৈরি হয়েছে অভিযোগ।
বহুলপ্রত্যাশিত এ ভোট কাজী হাবিবুল আউয়ালের নেতৃত্বাধীন নির্বাচন কমিশনের (ইসি) প্রথম পরীক্ষা। কুমিল্লা সিটির ভোটকে কেন্দ্র করে সব ধরনের ব্যবস্থা গ্রহণ করেছে ইসি। বেশ কঠোর মনোভাব পোষণ করতেও দেখা গেছে ইসিকে। এটিকে ইসির সক্ষমতা ও গ্রহণযোগ্যতা প্রমাণের বড় সুযোগ বলে মনে করছেন নির্বাচন সংশ্লিষ্টরা। ফলে, ইসির জন্য এ নির্বাচন একটি চ্যালেঞ্জ।
তবে ভোটগ্রহণ চলাকালীন এ সময়ে ১৯ নং ওয়ার্ডের কিছু ভোটার দাবি করেছেন, নেউরা এম আই উচ্চ বিদ্যালয় ভোটকেন্দ্রে যে ইভিএম ব্যবহার করা হচ্ছে তাতে শুধুমাত্র ‘নৌকা’ প্রতীক দেখানো হচ্ছে।
এই অভিযোগের পরিপ্রেক্ষিতে বিচার বিভাগীয় ম্যাজিস্ট্রেট ওমর ফারুক বিষয়টি খতিয়ে দেখতে কেন্দ্র পরিদর্শন করেন।
তবে তার দাবি অনুযায়ী, সংশ্লিষ্ট প্রিজাইডিং অফিসার নাজমুল আমিন তাকে পরিদর্শনে বাধা দেন এবং তাকে বুথে প্রবেশ করতে দেননি।
কেন্দ্র থেকে বের হওয়ার সময় সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপকালে তিনি বলেন, “আমি ভোটারদের দাবির সত্যতা যাচাই করতে এখানে এসেছি।”
তিনি আরও বলেন, আমি ভোটকেন্দ্রে ঢুকে ইভিএম দেখতে চাইলে প্রিসাইডিং অফিসার আমাকে বাধা দেন। আমাকে অবিলম্বে চলে যেতে বলা হয়।
আজকের ভোটে ১ লাখ ১৭ হাজার ৯২ জন নারীসহ ভোটার মোট ২ লাখ ২৯ হাজার ৯২০ জন। এ নির্বাচনে ৫ জন মেয়র প্রার্থী, ১০৮ জন কাউন্সিলর প্রার্থী এবং ৩৮ জন নারী কাউন্সিলর প্রার্থী প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন।
কুমিল্লার পুলিশ সুপার ফারুক আহমেদ জানান, ১০৫টি কেন্দ্রে ১০৫টি মোবাইল টিম থাকবে। এছাড়া বুধবার প্রায় ৫০ জন নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট নির্বাচনী দায়িত্ব পালন করবেন।
পাশাপাশি নির্বাচনে ইভিএম জটিলতা ও ধীরগতির কারণে বিভিন্ন কেন্দ্রে ভোটারেরা ভোট দিতে সমস্যার সম্মুখীন হচ্ছেন বলে অভিযোগ করেছেন স্বতন্ত্র মেয়রপ্রার্থী ঘড়ি প্রতীকের মনিরুল হক সাক্কু।
স্বতন্ত্র এ মেয়রপ্রার্থী জানিয়েছেন, ইভিএমের জটিলতা ও ধীরগতির কারণে যত সংখ্যক ভোটার রয়েছেন, তারা শেষপর্যন্ত ভোট দিতে পারবেন কি না, এ নিয়ে তার শঙ্কা রয়েছে।
কেন্দ্রের বিদ্যুৎ-সংযোগ বন্ধ রাখার অভিযোগ
বিদ্যুৎ না থাকায় কুমিল্লা সিটি করপোরেশনের ২৭ নম্বর ওয়ার্ডের চৌয়ারা ইসলামিয়া ফাজিল মাদ্রাসা কেন্দ্রে ভোট গ্রহণ প্রায় বন্ধ রয়েছে। মেঘাচ্ছন্ন পরিবেশের কারণে ভোটকক্ষের ভেতরে আলো কম। বিদ্যুৎ না থাকায় ভোটারের পরিচয় যাচাই, ইভিএমে প্রতীক চিহ্নিত করার ক্ষেত্রে সমস্যা হচ্ছে। বিশেষ করে বয়স্ক ভোটারদের সমস্যায় পরতে হচ্ছে।
চৌয়ারা ইসলামিয়া ফাজিল মাদ্রাসার মূল ভবনে ভোট কেন্দ্র। এই ভবনে বিদ্যুৎ সংযোগ নেই। এর ঠিক পাশেই মাদ্রাসার মৌলভি কলিমুদ্দিন খন্দকার প্রশাসনিক ভবন। প্রিসাইডিং কর্মকর্তার কার্যালয় এই ভবনে। ভোটকেন্দ্রের পাশের এই ভবনে বিদ্যুৎ সংযোগ রয়েছে।
এই ওয়ার্ডের বর্তমান কাউন্সিলর আবুল হাসান অভিযোগ করেন, ইচ্ছাকৃতভাবে এমন পরিস্থিতি তৈরি করা হয়েছে। তিনি প্রথম আলোকে বলেন, পাশাপাশি দুই ভবন। কিন্তু ভোটকেন্দ্রে বিদ্যুৎ নেই। এই ওয়ার্ডের আরেক কাউন্সিলর প্রার্থী সাইফুল হক চৌধুরী এই মাদ্রাসার শিক্ষক। বিদ্যুৎ-সংযোগ নিয়ে সমস্যা করছে।
ওয়ার্ডের আরেক কাউন্সিলর প্রার্থী সাইফুল হক চৌধুরী এই মাদ্রাসার শিক্ষক। তিনি বলেন, ‘আবুল হাসানের অভিযোগ সত্য নয়। আমি কেন্দ্রের আশপাশেও নেই।’ এই ওয়ার্ডে কাউন্সিলর প্রার্থী পাঁচজন।
ইভিএমে বিদ্যুৎ-সংযোগ ছাড়াও ভোট নেওয়া যায়। কিন্তু মেঘাচ্ছন্ন পরিবেশের কারণে ভোটকক্ষ অন্ধকার। ভোট শুরুর পর প্রথম ঘণ্টায় এই কেন্দ্রে ভোট পড়ে ২৩১টি। ৯টা ১০ মিনিটে বিদ্যুৎ চলে যায়। এর পর থেকে ভোট নেওয়া প্রায় বন্ধ রয়েছে। এই কেন্দ্রে মোট ভোটার ২ হাজার ২৮ জন।
এই কেন্দ্রে সকাল আটটায় ভোট দিতে আসেন ৬৫ বছর বয়সী লুৎফা বেগম। সকাল ১০টা পর্যন্ত দাঁড়িয়ে থেকেও তিনি ভোট দিতে পারেননি। অসুস্থ বোধ করায় ভোট না দিয়েই চলে যান। লুৎফা প্রথম আলোকে বলেন, ‘এতক্ষণ দাঁড়ায় ভোট দিতে পারলাম না। বিশৃঙ্খল অবস্থা চলছে।’
কুমিল্লা নির্বাচনেও সরকার প্রভাব বিস্তার করছে
সরকার কুমিল্লা নির্বাচনেও প্রভাব বিস্তার করছে বলে অভিযোগ তুলে বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেছেন, ‘কুমিল্লা নির্বাচনে বিএনপি অংশগ্রহণ না করলেও নির্বাচন কমিশনের কাছে অনেকের মধ্যে আশা ছিল যে, তারা একটি অবাধ ও নিরপেক্ষ নির্বাচনের চেষ্টা করবে। কিন্তু সে আশা পূরণ করতে পারেনি নির্বাচন কমিশন।’
বুধবার সকাল সাড়ে ১০টার দিকে ঠাকুরগাঁওয়ের নিজ বাড়িতে সাংবাদিকদের সঙ্গে মতবিনিময়কালে এসব কথা বলেন তিনি।
কুমিল্লা সিটি করপোরেশন নির্বাচনে আওয়ামী লীগের প্রার্থী আরফানুল হক রিফাতের পক্ষে ভোটের প্রচার চালাচ্ছেন বাহার- এমন একটি অভিযোগ এনে রিটার্নিং কর্মকর্তার কাছে অভিযোগ দিয়েছিলেন বিএনপির বহিষ্কৃত নেতা মনিরুল হক সাক্কু। এরপর গত ৮ জুন বাহারকে কুমিল্লা ছাড়তে বলে নির্বাচন কমিশন।
কিন্তু বাহার কুমিল্লা না ছেড়ে আদালতে যান। হাইকোর্ট ১৫ জুন ভোটের দিন পর্যন্ত কমিশনের সেই নির্দেশ স্থগিত করে, ফলে বাহারের এলাকায় থাকতে দৃশ্যত কোনো বিধিনিষেধ নেই। এতে নির্বাচন কমিশনের অসহায়ত্ব প্রকাশ হয়েছে বলে মনে করেন মির্জা ফখরুল।
তিনি বলেন, ‘অনেকেই মনে করেছিল সরকারও হয়তো নির্বাচন কমিশনের কিছুটা গ্রহণযোগ্যতা সৃষ্টি করতে তারা বরাবর যেটা করে আসছে, প্রভাব বিস্তার করে নির্বাচন নিজেদের নিয়ন্ত্রণে আনা- এটা হয়তো করবে না। কিন্তু আনফরচুনেটলি কোনোটাই হয়নি। এ কারণেই আজকে সরকারি দলের এমপি সেখানে অবস্থান করছেন। নির্বাচন কমিশন থেকে তাকে চিঠি দেয়ার পরেও তিনি সেখান থেকে বের হননি এবং এটার জন্য গোটা নির্বাচন কমিশন অসহায়ত্ব প্রকাশ করেছে।’
নিরপেক্ষ সরকার ছাড়া সুষ্ঠু নির্বাচন সম্ভব না দাবি করে বিএনপির মহাসচিব বলেন, ‘এই ঘটনা থেকে প্রমাণিত হয়ে গেছে যে, শুধু কুমিল্লা সিটি করপোরেশন নির্বাচন নয়, গোটা বাংলাদেশের নির্বাচন ব্যবস্থাকে এই সরকার নিজেদের নিয়ন্ত্রণে নিয়েছে। নির্বাচন যে প্রতিষ্ঠান, সে প্রতিষ্ঠান তারা ধ্বংস করে ফেলেছে। নির্বাচনকালীন সময়ে যদি নিরপেক্ষ সরকার না থাকে, তাহলে নির্বাচন কমিশিনে যেই থাকুক তাকে দিয়ে কখনো সুষ্ঠু নির্বাচন সম্ভব না।’
এসডব্লিউ/এসএস/১৪৩৭
আপনার মতামত জানানঃ