বৈশ্বিক করোনা পরিস্থিতিতে বাসা থেকে অফিস বা হোম অফিসের সুযোগ করে দিয়েছে বিভিন্ন বড় বড় প্রতিষ্ঠানগুলো। তবে করোনার প্রকোপ না কমতেই টেক জায়ান্টরা অফিসে ফেরার জন্য তাগাদা দিচ্ছেন। তারা বলছেন, অফিসে এসে কাজ করার কোনও বিকল্প নেই। এরই মধ্যে কিছু প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে চাপ দেওয়া ও অফিসে নিয়ে কাজ করানোর অভিযোগ পাওয়া গেছে। এই অভিযোগ রয়েছে ফেসবুকের বিরুদ্ধেও। অ্যাপল কর্মীদের অফিসে ফেরানোর পরিকল্পনা করছে। গুগল কর্তৃপক্ষ চাইছে কর্মীরা অফিসে এসে কাজ করুক। অন্যদিকে টুইটার হাঁটছে অন্য পথে।
ফেসবুক
করোনা পরিস্থিতিতে ফেসবুক হোম অফিস ও অফিস, দুই পদ্ধতিই চালু রাখে। তবে সম্প্রতি বিভিন্ন দেশে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমটিতে কর্মরত দুই শতাধিক কর্মীর অভিযোগ, তাদের অফিসে নেওয়ার জন্য চাপ দেওয়া হচ্ছে। করোনার পরিস্থিতির শুরু থেকেই হোম অফিস করছিলেন তারা। কর্মীদের জোর করে অফিসে ফেরানো হচ্ছে বলে ফেসবুকের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা মার্ক জাকারবার্গ ও প্রধান পরিচালন কর্মকর্তা শেরিল স্যান্ডবার্গের প্রতি একটি খোলা চিঠিতে এমন অভিযোগ তোলা হয়। সেখানে জানানো হয়, লাভের জন্য ফেসবুক তাদের কর্মীদের অহেতুক ঝুঁকির মধ্যে ফেলে দিচ্ছে। অভিযোগকারীরা কর্তৃপক্ষের কাছে হোম অফিসের মেয়াদ বৃদ্ধি, মহামারিতে ঝুঁকি ভাতাসহ আরও কিছু সুযোগ-সুবিধার দাবি জানান।
এই বিষয়ে ফেসবুকের একজন মুখপাত্র জানান, ফেসবুকে ১৫ হাজার কনটেন্ট রিভিউয়ার্স কাজ করছেন। যাদের অধিকাংশই হোম অফিস করছেন। কিন্তু কিছু গুরুত্বপূর্ণ প্রয়োজনে অফিসে এসে কাজ করার জন্য কর্মীদের চাপ দেওয়া হয়েছে।
অ্যাপল
সম্প্রতি কর্মীদের সঙ্গে ভার্চুয়াল সভায় অ্যাপলের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা (সিইও) টিম কুক অফিসে ফেরার নতুন পরিকল্পনার কথা জানিয়েছেন। তিনি জানান, ২০২১ সালের জুনের আগে সম্ভবত বেশিরভাগ কর্মী অফিসে ফিরেতে পারবে না। ক্যালিফোর্নিয়ার কুপারটিনো ঐতিহাসিকভাবে অফিস কেন্দ্রিক সংস্কৃতি অর্জন করেছে। কোভিড-১৯ ভাইরাসের কারণে লকডাউনে থাকা কর্মীদের বাড়ি থেকে কাজের বিষয়ে সফলতা পাওয়া গেছে। এটি ভবিষ্যতে দূর থেকে কাজ করতে আরও সক্ষম করে তুলবে। তবুও কুক চূড়ান্তভাবে কর্মীদের অফিসে ফিরিয়ে আনার বিষয়ে অনড়।
কর্মীরা জানায়, কুকের মতে সরাসরি অফিসে এসে কাজের কোনও বিকল্প নেই। তবে উৎপাদন কিংবা ফলাফলের কোনও হেরফের ছাড়াই অফিসের বাইরে থেকে কীভাবে কাজ সম্পন্ন করা যায় সে সম্পর্কে কর্মীরা অনেক কিছুই শিখেছে।
গুগল
দীর্ঘ মেয়াদে কর্মীদের কাজের সুযোগগুলো নিয়ে নতুন করে চিন্তা করছে গুগল। বেশিরভাগ কর্মীই পূর্ণকালীন অফিসে ফিরতে চাচ্ছেন না বলেই পুনর্বিবেচনা করছে সার্চ ইঞ্জিন জায়ান্ট মার্কিন প্রতিষ্ঠানটি। সম্প্রতি টাইম ম্যাগাজিনের সঙ্গে এক সাক্ষাৎকারে প্রতিষ্ঠান প্রধান সুন্দার পিচাই বলেছেন, ‘হাইব্রিড’ মডেল নিয়ে কাজ করছে গুগল। অফিস নতুন করে সাজানো এবং বাসা থেকে কাজের আরও দীর্ঘ মেয়াদী পরিকল্পনাও করছে প্রতিষ্ঠানটি।
পিচাই বলেছেন, ‘আমি দেখছি ভবিষ্যত আরও নমনীয় হচ্ছে। আমাদের বিশ্বাস, যখন আপনাকে কঠিন সমস্যা সমাধান করতে হয় এবং নতুন কিছু বানাতে হয় তখন একসঙ্গে থাকা এবং সামাজিক অনুভূতি থাকাটা অনেক গুরুত্বপূর্ণ। আমরা দেখছি না এতে কোনও পরিবর্তন আসছে। তবে আরও নমনীয় এবং হাইব্রিড মডেলে যেতে হবে।’
করোনা মহামারী কাটিয়ে কর্মীদেরকে কীভাবে কর্মক্ষেত্রে ফেরানো যায় সেই বিষয়ে আরও বিস্তারিত পরিকল্পনা করতে শুরু করেছে গুগল। গ্রীষ্মের শুরুতেই কর্মীদের জন্য ২০২১ সালের জুলাই পর্যন্ত বাসা থেকে কাজ করার সুযোগ দেওয়ার কথা জানিয়েছে প্রতিষ্ঠানটি।
টুইটার
অন্যদের চেয়ে কিছুটা ভিন্ন পথে হাঁটছে টুইটার। প্রতিষ্ঠানটি তার কর্মীদের আজীবন বাসা থেকেই অফিস করার সুযোগ দেওয়ার কথা জানিয়েছে। প্রতিষ্ঠানটির প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা (সিইও) জ্যাক ডরসি কর্মীদের পাঠানো এক অফিস মেইলে জানিয়েছেন, গত কয়েক মাসে প্রমাণ হয়েছে যে, আমরা খুব ভালোভাবে বাসা থেকে অফিসের কাজ করতে পারি। ফলে বাসা থেকে করা সম্ভব এই ধরনের কাজের দায়িত্বে থাকা যে কোনও কর্মী চাইলেই তাকে হোম অফিস করার সুযোগ দেবো।
টুইটারের ভাইস প্রেসিডেন্ট জেনিফার ক্রিস্টি জানিয়েছেন, কর্মক্ষেত্র বদলে অফিস থেকে বাসায় কাজ করার ক্ষেত্রে টুইটার শীর্ষে আছে, কিন্তু কর্মীদের অফিসে ফিরিয়ে আনার ক্ষেত্রে শীর্ষে যেতে চাই না।
টুইটারেই এক পোস্টে তিনি লিখেছেন, কর্মক্ষেত্র অফিসের বাইরে নেওয়ার সিদ্ধান্তের ব্যাপারে গর্ববোধ করছি। এতে করে কর্মীরা কাজের ক্ষেত্রে এগিয়ে গেছে। আপনি রান্নাঘর বা অফিস যেখান থেকেই অফিসের কাজ করতে চাইবেন সেটাই দেবো।
অনেকেই বলছেন যে, আগামীতে তথ্যপ্রযুক্তি বিষয়ক অনেক প্রতিষ্ঠানই টুইটারের এই ধরনের পদক্ষেপের অনুসরণ করবে। এটিকে যুগান্তকারী সংবাদ বলছেন অনেকেই। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, কর্মেক্ষেত্র সব সময় অফিসেই হতে হবে, সনাতন এই ধারণা বদলে দিচ্ছে টুইটারের এই সিদ্ধান্ত। বাসা থেকেও যে সমান দায়িত্ব নিয়ে কাজ করা যায়, বরং অনেক ভালো কাজ করা যায় তা নানাভাবে প্রমাণিত। ফলে অফিসে গিয়েই কাজ করার ব্যাপারটি অনিবার্য নয়।
এসডব্লিউ/মিই/নাসি/১১০০
আপনার মতামত জানানঃ