মহামারির কারণে এরই মধ্যে ‘ওয়ার্ক ফ্রম হোম’ বা বাসায় বসে অফিসের কাজ বেশ জনপ্রিয় হয়ে উঠেছে। উন্নত বিশ্বে আগেও এর চল ছিল। কিন্তু অনন্যোপায় হওয়ার পর এই ধরনকেই স্থায়ী করার কথা ভাবছেন অনেক উদ্যোক্তা। বলা হচ্ছে, এর ফলে ব্যয়বহুল অফিস স্থাপন ও এর ব্যবস্থাপনা চালানোর আর প্রয়োজন হবে না। ফলে অনেক খরচ বেঁচে যাবে।
অনেকে অবশ্য কর্মস্থল এবং সহকর্মীদের কাছ থেকে বেশি দিন আর দূরে থাকতেও চাচ্ছেন না। যুক্তরাষ্ট্রের হার্ভার্ড ইউনিভার্সিটির জরিপের বিষয় ছিল এটিই। জরিপের ফলাফলে দেখা গেল, অনেক কর্মজীবী অফিসে ফিরতে চান না। বরং ঘরে (বা অফিস থেকে দূরে) থেকে কাজ করায় বেশি স্বাচ্ছন্দ্য বোধ করেন। এমনকি করোনাকাল পেরোনোর পরও এভাবেই কাটাতে চান।
অন্তত এক বছর ধরে ঘরে থেকে কাজ করছেন, এমন দেড় হাজার কর্মজীবী ওই জরিপে অংশ নেন। তাদের ৮১ শতাংশ হয় অফিসে ফিরে কাজ করতে চান না, কিংবা মিশ্র পদ্ধতি কাজ চালাতে চান। মিশ্র বলতে কখনো অফিসে, কখনো বাসায় থেকে কাজ। মাইক্রোসফট যেমন ভবিষ্যতে সপ্তাহে তিন দিন অফিসে গিয়ে কাজ করার নিয়ম চালুর কথা ভাবছে।
হার্ভার্ডের জরিপে অংশ নেওয়া ৬১ শতাংশ কর্মজীবী সপ্তাহে দুই বা তিন দিন অফিসে গিয়ে কাজ করতে চান। আর ২৭ শতাংশ কাজের জন্য অফিসেই ফিরতে চান না বলে জানিয়েছেন। কেবল ১৮ শতাংশ পূর্ণকালীন কাজের জন্য অফিসে ফিরতে চান।
উপরন্তু, প্রতি তিন অংশগ্রহণকারীর একজন বলেছেন, ঘরে থেকে কাজ করায় তাদের কাজের গতি এবং মান দুটোই আগের বছরের চেয়ে বেড়েছে। তা ছাড়া, ঘরে থেকে কাজ করলে কাজে মনোযোগও বেশি দিতে পারছেন তারা। সহকর্মীদের সঙ্গে সমন্বয়, তাদের সাহায্য চাওয়া এবং সার্বিকভাবে নেতৃত্ব অক্ষুণ্ন থাকছে বলে জানিয়েছেন অর্ধেক কর্মী।
গুগল বলে দিয়েছে, আগামী ২০২১ সাল পর্যন্ত তাদের সিংহভাগ কর্মী নাকি বাড়িতে বসেই অফিসের কাজ সম্পাদন করতে পারবেন। টুইটারের সিইও জ্যাক ডরসি তো চান, কর্মীদের স্থায়ীভাবে বাসায় রেখেই কাজ করাতে। এমনকি করোনাকাল চলে যাওয়ার পরও এভাবেই ওয়ার্ক ফ্রম হোম চালু রাখার পক্ষে তিনি।
যুক্তরাষ্ট্রের মতো দেশে এই প্রবণতা কয়েক বছর ধরেই বাড়ছে। জনশুমারি থেকে জানা যায়, ২০০০ সালে দেশটিতে মাত্র ৩ শতাংশ কর্মী ঘরে বসে কাজ করতেন। ২০১৭ সালে তা ছিল ৫ শতাংশ। ২০১৮ সালেই ঘরে বসে কাজ করার সুযোগ পাওয়া কর্মীর সংখ্যা বেড়ে দাঁড়িয়েছিল ২৯ শতাংশে।
বিশ্বের প্রধান আর্থিক কর্মকর্তাদের ওপর চালানো এক জরিপে দেখা গেছে, তারা চাইছেন, মোট কর্মশক্তির ২০ শতাংশকে বাড়িতে বসে কাজ করাতে। গবেষণা প্রতিষ্ঠান গার্টনারের ওই জরিপে দেখা গেছে, মূলত খরচ বাঁচাতেই এ সিদ্ধান্ত নিতে চান বিশ্বের বড় বড় কোম্পানির প্রধান কর্মকর্তারা।
ফোর্বস ম্যাগাজিনের এক নিবন্ধে বলা হয়েছে, কোভিড-১৯ পরিস্থিতির কারণে নতুন অর্থনৈতিক মন্দার মুখোমুখি পুরো বিশ্ব। এমন পরিস্থিতিতে স্বাস্থ্যবিধি মেনে সব কর্মীর কাজ করানোর মাধ্যমে প্রতিষ্ঠান টিকিয়ে রাখতেই ওয়ার্ক ফ্রম হোম ধারণা আত্তীকরণের কথা ভাবা হচ্ছে। এতে একদিকে যেমন সামাজিক দূরত্ব রক্ষা করা সম্ভব হবে, অন্যদিকে অফিসের পরিচালন ব্যয় কমিয়ে আনা যাবে।
তবে সমালোচকেরা বলছেন, বাসায় বসে কাজ করার এই সুবিধা বড় বড় শহরে হয়তো করা সম্ভব হবে। কিন্তু প্রত্যন্ত এলাকার চাকুরেদের এই সুবিধা দেওয়া কঠিন। আবার উন্নত দেশগুলো যত সহজে এটি বাস্তবায়ন করতে পারবে, উন্নয়নশীল ও অনুন্নত দেশগুলোর পক্ষে তা করা বেশ কঠিন হয়ে পড়বে।
জার্মানির গ্রিন পার্টির নেতা রবার্ট হ্যাবেক বলেন, হোম অফিসের বেশকিছু অসুবিধাও রয়েছে কিন্তু৷ বাসায় আপনি যা ইচ্ছে তাই খেতে পারছেন ফলে ওজন বাড়ছে যা স্বাস্থ্যের জন্য মোটেই সুখকর নয়!
এদিকে বাইরে ঝলমলে সুন্দর রোদ সেখানে লোভনীয় ব্যালকনি বা বাগান রেখে ঘরের ভেতরে বসে অফিস করা বেশ কঠিন ৷ আরেকদিকে পাশের বাসায় নানা কাজ চলছে, দেয়ালে ড্রিল মেশিনের বিকট শব্দে অফিসের কাজে মনোযোগে ব্যাঘাত ঘটছে৷ তাছাড়া বাসার থাকার ফলে যেমন নিজের বাচ্চাদের দেখাশোনা করতে পারছেন, আবার ওদের নিয়ে ঝামেলাও সইতে হচ্ছে৷ আর পোষা কুকুর থাকলে তো ঝামেলা আরো বেশি৷ তবে যাদের পরিবার বা কুকুর কিছুই নেই তারা হোম অফিসের কারণে নিঃসঙ্গ বোধ করেন৷ বাসার বাইরে বের না হওয়ায় অনেকে ‘‘বোর” ফিল করছেন ফলে শরীর – মন দুটোই খারাপ করছে৷
এ বিষয়ে অর্থনীতিবিদ এবং মনোবিজ্ঞানী অধ্যাপক রুথ স্টক-হমবুর্গ করোনা সংকটে মানসিক ফিটনেস নিয়ে একটি গবেষণার কাজ করছেন৷ তিনি প্রটেস্টান্ট প্রেস সার্ভিসকে বলেন, ‘‘ গবেষণার প্রাথমিক ফলাফল হচ্ছে ‘বোর আউট’৷ বা সংকটকালীন সময়ে অফিসে শেখার সুযোগ কমে যাওয়া, হতাশা, উদ্বেগের মতো কারণগুলো মানুষের কার্ডিওভাসকুলার এবং ইমিউন সিস্টেমকে দুর্বল করতে পারে৷”
এসডব্লিউ/এমএন/ এফএ/১৬০০
State watch সকল পাঠকদের জন্য উন্মুক্ত সংবাদ মাধ্যম, যেটি পাঠকদের অর্থায়নে পরিচালিত হয়। যে কোন পরিমাণের সহযোগীতা, সেটি ছোট বা বড় হোক, আপনাদের প্রতিটি সহযোগীতা আমাদের নিরপেক্ষ সাংবাদিকতার ক্ষেত্রে ভবিষ্যতে বড় অবদান রাখতে পারে। তাই State watch-কে সহযোগীতার অনুরোধ জানাচ্ছি।
[wpedon id=”374″ align=”center”]
আপনার মতামত জানানঃ