বিশ্বব্রহ্মাণ্ডের একের পর এক রহস্য উন্মোচন করে চলেছে শক্তিশালী যন্ত্র হাবল টেলিস্কোপ। হাবল টেলিস্কোপ পৃথিবীর বায়ুমণ্ডলের ওপর ভাসমান অবস্থায় মহাকাশের নির্ভেজাল দৃশ্য পর্যবেক্ষণ করছে। এমন কিছু ঘটনা সেটির চোখে পড়ছে, যা পৃথিবী থেকে দেখা অসম্ভব। মহাকাশের এ চোখ বিশ্বব্রহ্মা-ের লুকানো সৌন্দর্য আমাদের চোখের নাগালে নিয়ে এসেছে এবং আমাদের দৃষ্টিভঙ্গি বদলে দিয়েছে।
এবার যেমন জানা গেল মহাবিস্ফোরণের (বিগ ব্যাং) মাধ্যমে সৃষ্টির পর থেকেই প্রতিনিয়ত প্রসারিত হচ্ছে মহাবিশ্ব। শুধু তাই নয়, নানা গবেষণায় সম্প্রসারণের গতিবেগ সম্পর্কেও ধারণা দেন তারা। হাবল স্পেস টেলিস্কোপের মাধ্যমে তারা মহাবিশ্বের সম্প্রসারণের এই গতিবেগ সম্পর্কে নিশ্চিত হয়েছেন।
সম্প্রতি ‘অ্যাস্ট্রোফিজিক্যাল জার্নাল লেটারস’ এ বিষয়টি নিয়ে প্রতিবেদন প্রকাশ করা হয়। নাসার জ্যোতির্বিজ্ঞানীদের দাবি, হাবল স্পেস টেলিস্কোপের মাধ্যমে তারা মহাবিশ্বের সম্প্রসারণের এই গতিবেগ সম্পর্কে নিশ্চিত হয়েছেন।
বিজ্ঞানীরা বলছেন, মহাবিস্ফোরণের (বিগ ব্যাং) মাধ্যমে সৃষ্টির পর থেকেই প্রতিনিয়ত প্রসারিত হচ্ছে মহাবিশ্ব। নানা গবেষণায় সম্প্রসারণের গতিবেগ সম্পর্কেও ধারণা পাওয়া গেছে সম্প্রতি যুক্তরাষ্ট্রের মহাকাশ গবেষণা সংস্থা নাসা জানিয়েছে, বিজ্ঞানীদের অনুমানের চেয়ে প্রায় ৯ শতাংশ বেশি দ্রুতগতিতে প্রসারিত হচ্ছে মহাবিশ্ব।
জনস হপকিন্স ইউনিভার্সিটির পদার্থ ও জ্যোতির্বিজ্ঞানের অধ্যাপক এবং নোবেলজয়ী বিজ্ঞানী অ্যাডাম রেইসের নেতৃত্বে গবেষক দল পৃথিবীর কাছের ছায়াপথের ৭০টি নক্ষত্রের ওপর গবেষণা চালায়। তারা নক্ষত্রগুলোর বিচ্ছুরিত আলো, উজ্জ্বলতা প্রভৃতি বিষয় নিয়ে বিস্তর গবেষণা করেন।
টেলিস্কোপ হাবল কক্ষপথে ঘূর্ণায়মান একেকটি নক্ষত্রকে ৯০ মিনিট করে পর্যবেক্ষণ ও বিভিন্ন সময়ের ছবি তুলে রাখে। গবেষণায় পাওয়া তথ্যকে প্রায় নির্ভুল বলে উল্লেখ করেছেন অধ্যাপক রেইস। পাশাপাশি মহাকাশ নিয়ে গবেষণায় আরও নতুন নতুন পদ্ধতি অবলম্বনের প্রতি গুরুত্ব দেন তিনি। তার মতে, অত্যাধুনিক তত্ত্ব ও যন্ত্রের ব্যবহারে মহাবিশ্ব সম্পর্কে আরও বেশি জানা সম্ভব হবে।
২০২০ সালে এডউইন পি হাবল এবং জর্জেস লেমাইত্রে বলেছিলেন আমাদের নিজেদের বাইরের ছায়াপথগুলো স্থির নয়। আর নাসার এক ব্লগ পোস্টে বলা হয়েছিল, ছায়াপথগুলো আমাদের থেকে ক্রমশ দূরে সড়ে যাচ্ছে। টেলিস্কোপ হাবল কক্ষপথে ঘূর্ণায়মান একেকটি নক্ষত্রকে ৯০ মিনিট করে পর্যবেক্ষণ ও বিভিন্ন সময়ের ছবি তুলে রাখে।
গবেষণায় পাওয়া তথ্যকে প্রায় নির্ভুল বলে উল্লেখ করেছেন অধ্যাপক রেইস। পাশাপাশি মহাকাশ নিয়ে গবেষণায় আরও নতুন নতুন পদ্ধতি অবলম্বনের প্রতি গুরুত্ব দেন তিনি। তার মতে, অত্যাধুনিক তত্ত্ব ও যন্ত্রের ব্যবহারে মহাবিশ্ব সম্পর্কে আরও বেশি জানা সম্ভব হবে।
হাবল টেলিস্কোপ পৃথিবীর বায়ুমণ্ডলের উপর ভাসমান অবস্থায় মহাকাশের নির্ভেজাল দৃশ্য পর্যবেক্ষণ করছে। এমন কিছু ঘটনা সেটির চোখে পড়ছে, যা পৃথিবী থেকে দেখা অসম্ভব। মহাকাশের এই চোখ বিশ্বব্রহ্মাণ্ডের লুকানো সৌন্দর্য আমাদের চোখের নাগালে নিয়ে এসেছে এবং আমাদের দৃষ্টিভঙ্গি বদলে দিয়েছে। এবার জানা যাক, মহাবিশ্ব সম্পর্কে।
মহাবিশ্ব কী?
নাসার মতে, মহাবিশ্ব একটি বড়-খোলা জায়গা। আপনি-আমি এই মহাবিশ্বে আছি। যে বিষয়গুলো আপনি দেখতে পাচ্ছেন না, সেগুলোও এর মধ্যে আছে। এর মধ্যে সবচেয়ে বড় নক্ষত্ররাও আছে, যেমন সূর্য। এমনকি পৃথিবীর ক্ষুদ্রতম জিনিসগুলোও মহাবিশ্বের অংশ, যেমনঃ এমিবা, এন্টামিবা। আমরা আসলে জানি না মহাবিশ্ব কত বড়!
মহাবিশ্বই সবকিছু। এর মধ্যে রয়েছে সকল স্থান, এবং সকল পদার্থ এবং শক্তি যা মহাকাশে রয়েছে। ঘড়ির কাটা ঘোরা এমনকি সময়ও এই মহাবিশ্বের মধ্যে অন্তর্ভুক্ত এবং অবশ্যই, এটি আপনার নিজেকেও অন্তর্ভুক্ত করে।
মহাবিশ্বের বয়স কত?
অনেকে বলেন যে, মহাবিশ্বের বয়স প্রায় ১৩.৮ বিলিয়ন বছর বলে মনে হয়। প্রাচীনতম নক্ষত্রের বয়স এবং মহাবিশ্বের প্রসারের হার পরিমাপ করে বিজ্ঞানীরা এই সমীকরণটি দিয়েছেন।
তারা গ্যালাক্সি থেকে আলোতে যে ডপলার শিফট হয় তা পর্যবেক্ষণ করে দেখতে পায় যে, গ্যালাক্সিগুলো পৃথিবীর কাছ থেকে এবং একে অপরের কাছ থেকে দূরে সরে যাচ্ছে। অদূর ভবিষ্যতে ছায়াপথগুলো এত দূরে থাকবে যে পৃথিবী থেকে তাদের আলো দেখা যাবে না।
অন্য ভাবে বলতে গেলে, পদার্থ, শক্তি এবং মহাবিশ্বের সমস্ত কিছু এখনকার চেয়ে বেশি আঁটসাঁট ছিল। তারা আগে কাছাকাছি ছিল, এখন দূরে চলে যাচ্ছে।
মহাবিশ্বের জন্ম নিয়ে বেশি ভাবার দরকার নেই। মহাবিশ্বের কোন অস্তিত্বই ছিল না। মহাকাশের কোনো অস্তিত্ব ছিল না। সময় মহাবিশ্বের অংশ এবং তাই এর কোন অস্তিত্ব ছিল না। সময়ও শুরু হয়েছিল বিগ ব্যাং দিয়ে। সময়ের সাথে সাথে মহাবিশ্ব ধারণাটি গঠিত হয় এবং তার সাথে সাথে মহাকাশ ধারণাটি ও গঠিত হয়।
মহাবিশ্ব কী দিয়ে তৈরি?
মহাবিশ্বে সব ধরণের শক্তি এবং পদার্থ রয়েছে। মহাবিশ্বের পদার্থের বেশিরভাগই হাইড্রোজেনের পরমাণুর মত, যা শুধুমাত্র একটি প্রোটন এবং একটি ইলেক্ট্রন দিয়ে তৈরি। একসাথে অনেক ট্রিলিয়ন পরমাণু মিলে একটি ধূলিকণা তৈরি হয়, যা মহাবিশ্বের একটি বেসিক উপাদান। এছাড়াও কয়েক টন কার্বন, সিলিকা, অক্সিজেন, বরফ এবং কিছু ধাতু একসাথে, মিলে একটি গ্রহাণু তৈরি হয়। অথবা তেত্রিশ লক্ষ ত্রিশ হাজার হাইড্রোজেন এবং হিলিয়ামের মিক্সারে একটি সূর্যের সমান নক্ষত্র তৈরি হয়ে যায়।
গ্যালাক্সি, তারার ক্লাস্টার, গ্রহ, বামন গ্রহ, চাঁদ, রিং, রিংলেট, ধূমকেতু, উল্কাপিণ্ড, পাতালপুরীর পানি, পাথর, সিরিফ এই সবকিছু মিলেই মহাবিশ্ব গঠিত। এছাড়াও হোম গ্যালাক্সি, মিল্কি ওয়েতে কমপক্ষে ১০০ বিলিয়ন নক্ষত্র রয়েছে এবং কমপক্ষে ১০০ বিলিয়ন ছায়াপথ রয়েছে। এই সব কিছুই মহাবিশ্বের অংশ।
এককথায় বলতে গেলে মহাবিশ্ব অনেকগুলো ‘ডার্ক ম্যাটার আর ডার্ক এনার্জির সমন্বয়ে গঠিত’ যা আজ অবধি কেউ খোলাসা ভাবে বুঝতে পারেনি। আমরা কল্পনাও করতে পারিনা আরো কত ধরণের রহস্য লুকিয়ে আছে এই মহাবিশ্বের মাঝে।
মহাবিশ্ব কি ধ্বংস হতে পারে?
বিশ্বখ্যাত পদার্থবিজ্ঞানী স্টিফেন হকিং সতর্ক করে বলেছেন মহাবিশ্বকে নিশ্চিহ্ন করে দেওয়ার ক্ষমতা রয়েছে ঈশ্বর কণাখ্যাত হিগস বোসন কণার।
হকিং দাবি করেছেন, উচ্চশক্তি স্তরে হিগস বোসন কণা ভারসাম্যহীন হয়ে উঠতে পারে। এই কণা অস্থিতিশীল অবস্থায় এলে তা ‘ধ্বংসাত্মক ভ্যাকুয়াম অবক্ষয়’ তৈরি করতে পারে, যাতে স্থান ও কাল নিশ্চিহ্ন হয়ে যাওয়ার আশঙ্কা থাকে। এ ধরনের পরিস্থিতিতে কোনো আগেভাগে কোনো বিপদসংকেত টের না-ও পাওয়া যেতে পারে।
স্টারমাস নামের একটি বই সম্পর্কে তথ্য জানাতে গিয়ে ঈশ্বর কণার সর্বনাশা বৈশিষ্ট্যের কথা জানান এই বিজ্ঞানী।
হকিং দাবি দাবি করেন, ১০০ বিলিয়ন গিগা-ইলেকট্রন ভোল্টসের বেশি শক্তি অর্জন করলে হিগস বোসন কণা ‘মেগা-স্ট্যাবল’ বা সর্বোচ্চ সুস্থিতিশীল অবস্থায় পৌঁছায়। এ কণা এরপর দুশ্চিন্তার কারণ হয়ে দাঁড়াতে পারে।
অবশ্য হিগস বোসন কণা থেকে কবে নাগাদ এ ধরনের মহাবিপর্যয়ের সৃষ্টি হতে পারে, তার কোনো সময় উল্লেখ করেননি। তবে এ ধরনের কণা যেন অতিশক্তি অর্জন না করে সে বিপদের কথা ভাবার পরামর্শ তার। ২০১২ সালে সার্নের গবেষকেরা হিগস বোসন কণা উদ্ভাবন করেন।
এসডব্লিউ/এসএস/১৮০৭
আপনার মতামত জানানঃ