প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থীদের ‘সরকারি গুন্ডা’র ভয় দেখালেন চট্টগ্রামের বাঁশখালী উপজেলায় আওয়ামী লীগের মনোনীত একজন চেয়ারম্যান প্রার্থী।
চট্টগ্রামের বাঁশখালী উপজেলার ১১ নং পুঁইছড়ি ইউনিয়ন পরিষদের নৌকা প্রতীকের চেয়ারম্যান প্রার্থী জাকের হোসেন চৌধুরী বাচ্চু বলেছেন, ‘আমি সরকারি দলের লোক, আমার তো সরকারি গুন্ডা আছে। আছে না? লাইসেন্সধারী! এরা কি এদের কাজ করবে নাকি আমি নির্দেশ দিলে আমার কাজ করবে?’
সোমবার (৩০ মে) বিকেলে পুঁইছড়ি প্রেমবাজারে নির্বাচনী পথসভায় দেওয়া বক্তব্যে এসব কথা বলেন তিনি।
জাকের হোসেনের বক্তব্যের একটি ভিডিও ফেসবুকে ছড়িয়ে পড়েছে। ৩৯ সেকেন্ডের ওই ভিডিওতে এলাকার পরিস্থিতি নিয়েও নানা কথা বলেছেন তিনি। প্রেমবাজার এলাকা একসময় ডাকাতের অভয়ারণ্য ছিল বলেও বক্তৃতায় উল্লেখ করেন তিনি।
পুঁইছড়ি ইউনিয়নের বর্তমান চেয়ারম্যান সুলতানুল গনি চৌধুরী এবার নির্বাচন করছেন না। জাকের হোসেন আওয়ামী লীগের মনোনয়ন পেলেও দল থেকে দুজন প্রার্থী হয়েছেন। তারা হলেন ফরহাদুল আলম চৌধুরী ও মেহাম্মদ তারেকুর রহমান।
প্রেমবাজার এলাকায় ওই নির্বাচনী সভায় মাইকে বক্তব্য দেন জাকের হোসেন। তার পেছনে নৌকা প্রতীকের ব্যানার ছিল। চেয়ারম্যান প্রার্থীর পাশে চেয়ারে বসা ছিলেন দক্ষিণ জেলা আওয়ামী লীগের নেতা খোরশেদুল আলম।
সেই ভিডিওতে জাকির হোসেন বাচ্চুকে বলতে শোনা যায়, ‘আমি আপনাদের আশ্বস্ত করতে চাই, আপনারা শান্তিপূর্ণভাবে ভোট দিতে পারবেন। এখানে যত বড় গুন্ডা হোক, যত বড় পয়সাওয়ালা হোক, বিন্দুমাত্র বিশৃঙ্খলা করতে পারবে না। আমি সরকারি দলের লোক। আমার তো সরকারি গুন্ডা আছে। আছে না? লাইসেন্সধারী! এরা কি এদের কাজ করবে নাকি আমি নির্দেশ দিলে আমার কাজ করবে? এখানে এত হুমকি-ধমকি ভয়-টয় আপনারা করবেন না। এগুলো আপনারা জানেন। আপনারা ভালোভাবে জানেন, এই এলাকায়, এই প্রেমবাজারে একসময় ডাকাতের অভয়ারণ্য ছিল। রাতে ডাকাতি করে দিনে এখানে জুয়া খেলত, এরা আওয়ামী লীগের নামধারী ছিল বলে। ওই সময়ে আওয়ামী লীগ নামধারী কিছু টোকাই ছিল।’
আমি সরকারি দলের লোক। আমার তো সরকারি গুন্ডা আছে। আছে না? লাইসেন্সধারী! এরা কি এদের কাজ করবে নাকি আমি নির্দেশ দিলে আমার কাজ করবে? এখানে এত হুমকি-ধমকি ভয়-টয় আপনারা করবেন না।
এ ব্যাপারে রির্টানিং কর্মকর্তা মেহেদী হাসান সংবাদমাধ্যমকে বলেন, পুঁইছড়িতে নৌকা প্রতীকের প্রার্থীর একটি ভিডিও আমরা পেয়েছি। নির্বাচনী সভায় তার দেওয়া বক্তব্যের বিষয়ে তাকে আজ মঙ্গলবার কারণ দর্শানোর নোটিশ দেওয়া হয়েছে। বক্তব্য সন্তোষজনক না হলে তার বিরুদ্ধে আইনগত পদক্ষেপ নেওয়া হবে।
সম্প্রতি চট্টগ্রামের পটিয়া উপজেলার ছনহরা ইউপির উপ-নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থীকে হুমকি দেন নৌকা প্রতীকের প্রার্থী মামুনুর রশিদ রাসেল। গত শুক্রবার (২৭ মে) বিকেলে ছনহরা ইউনিয়নের আলমদারপাড়া বায়তুশ শরফ মসজিদ প্রাঙ্গণে তার বাবা প্রয়াত বীর মুক্তিযোদ্ধা শামসুল আলমের স্মরণসভায় প্রতিদ্বন্দ্বী স্বতন্ত্র চেয়ারম্যান প্রার্থী আবদুর রশিদ দৌলতীকে উদ্দেশে ক্ষমতাসীন দলের এ প্রার্থী বলেন, রশিদ দৌলতীকে তিনি বুড়ো আঙুল দেখাতে পারতেন। রশিদ দৌলতী এখনো তাকে (রাসেলকে) চিনতে পারেননি। তিনি কিন্তু তাকে (রশিদকে) ছাড়বেন না। আঞ্চলিক ভাষায় দেওয়া তার ওই বক্তব্যের ১ মিনিট ৫৩ সেকেন্ডের একটি ভিডিও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়ে।
এর পরদিনই গত শনিবার (২৮ মে) বাঁশখালী উপজেলার চাম্বল ইউপি নির্বাচনে নৌকা প্রতীকের প্রার্থী মুজিবুল হক চৌধুরী এক নির্বাচনী সভায় প্রকাশ্যে ঘোষণা দিয়ে বলেন, ভোটকেন্দ্রে ইভিএম না থাকলে রাতেই সব ভোট নিয়ে নিতেন। ভোটকেন্দ্রে ইভিএমের বাটন টিপতে না পারলে টিপে দেওয়ার জন্য নিজের লোক রাখবেন। আঞ্চলিক ভাষায় দেওয়া তার ওই বক্তব্যের ৪১ সেকেন্ডের একটি ভিডিও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে তোলপাড় তোলে।
এরই মধ্যে সোমবার নিজের পক্ষে ‘সরকারি গুন্ডা’ থাকা নিয়ে বক্তব্য দিয়ে ব্যাপক আলোচনা-সমালোচনার মুখে পড়লেন পুঁইছড়ির ইউপি নির্বাচনে নৌকার প্রার্থী জাকের হোসেন চৌধুরী বাচ্চু।
সংশ্লিষ্ট বিশেষজ্ঞরা জানান, এবারের নির্বাচনকে ঘিরে সরকারদলীয় প্রার্থী ও নেতাকর্মীরা কেন্দ্র দখল, ভোট চুরি করার কৌশল, নৌকায় ভোট না দিলে এলাকা ছাড়ার হুমকি প্রকাশ্যেই দিয়ে যাচ্ছে। এতে দেশের সার্বিক এক পরিস্থিতি উঠে আসে। দেশের নির্বাচন, গণতন্ত্র যে সঠিক প্রক্রিয়ায় আগাচ্ছে না তারই নমুনা হিসাবে এসব তুলে ধরতে চান বিশেষজ্ঞরা।
তারা বলেন, অনেক স্থানেই সরকারদলীয় নেতাকর্মীদের বিরুদ্ধে প্রকাশ্যে নৌকায় সিল মারা, আগের রাতেই ভোট দিয়ে ফেলার অভিযোগসহ ভোট না দিলে রাতে ঘুমাতে না দেওয়ার হুমকি, ভোট না দিতে ঘর থেকে বের না হওয়ার হুমকিসহ আরো অনেক অভিযোগ রয়েছে। সরকারদলীয় নেতাদের এমন ভোট চুরি করার কৌশল আর ভোট না দিলে হুমকি দেওয়ার ফলে দেশে নির্বাচনী পরিবেশ নষ্ট হয়ে গেছে বলে দাবি করেন সংশ্লিষ্ট বিশেষজ্ঞরা।
এসডব্লিউ/এমএন/কেএইচ/২৩১৩
আপনার মতামত জানানঃ