একটা সময় পর্যন্ত বিশ্বাস করা হত গরিলা, শিম্পাঞ্জি কিংবা বানরের থেকেই বিবর্তিত হয়েছে মানুষ। শ্রেণিবিভাগের জনক কার্ল লিনিয়াসের তত্ত্ব মেনেই এই গোত্রবিন্যাস। তবে আশির দশকে বদলে যায় আধুনিক মানুষের ইতিহাস। পরিচিত হয়ে ওঠে ‘হোমিনিনি’ কথাটি।
প্রাণীবিদ্যার এই বিশেষ শাখার মধ্যেই অবস্থান আজকের মানুষ ‘হোমো সেপিয়েন্স’ এবং তার পূর্বপুরুষ নিয়ান্ডারথাল, হোমো ইরগ্যাস্টার এবং হোমো ইরেকটাসের।
২০১৩ সালে এই তালিকাতেই যুক্ত হয়েছিল আরও একটি নাম। হোমো নালেদি। এই বিশেষ ‘হোমিনিনি’ প্রজাতিটিকেই আধুনিক মানুষের নিকটতম পূর্বপুরুষ হিসাবে চিহ্নিত করলেন গবেষকরা।
নিয়েনডার্থালরা আজ থেকে ৩৫ হাজার বছর আগেও ঘুরে বেরিয়েছে পৃথিবীতে। ইউরোপে, মধ্য এবং পূর্ব আফ্রিকায় আর্কাইভ হোমো সেপিয়েন্স নামে এদের উদ্ভব হয়েছিল দশ লক্ষ বছর আগে। তার আগে ছিল হোমো সেপিয়েন্সের আরও এক পূর্বপুরুষ ‘হোমো ইরেকটাস’। তবে হোমো নালেদি ও আর্কাইভ হোমো সেপিয়েন্সরা অনেক-অনেক বেশি উন্নত ছিল হোমো ইরেকটাসের চেয়ে।
শুরু থেকেই জানা যাক। ২০১৩ সাল। দক্ষিণ আফ্রিকার রাইজিং স্টার পর্বতশ্রেণীর গুহায় মানুষের পূর্বপুরুষদের দেহাবশেষের অনুসন্ধানে নেমেছিলেন জীবাশ্মবিদ ডঃ লি বার্জার। লক্ষ্য ছিল, হোমো নিয়ান্ডারথাল কিংবা হোমো ইরেকটাসের সম্পর্কে আরও বিষদ তথ্য আহরণ।
তবে সেই অনুসন্ধানের মোড় ঘুরিয়ে দিল একটি গণকবর। রাইজিং স্টারের ভার্জিন কেভে সেবার হদিশ মিলেছিল দেড় হাজারেরও বেশি কঙ্কালের। যার মধ্যে অন্ততপক্ষে ১৫টি পূর্ণ দেহের কাঠামো খুঁজে পান গবেষকরা।
তবে এই কঙ্কালগুলির বিশ্লেষণে যে তথ্য উঠে আসে তা রীতিমতো চমকে দেওয়ার মতোই। না, নিয়ান্ডারথাল নয় এই মানব প্রজাতি। তাদের মাথার খুলি নিয়ানডারথালের থেকে অনেকটা ছোটো। অথচ, কাঁধের দৈর্ঘ্য, হাত ও পায়ের গঠন হুবহু আধুনিক মানুষের মতোই। গড় উচ্চতা ছিল পাঁচ ফুটের কাছাকাছি।
এই জাতীয় দেহের গঠন ইঙ্গিত দেয়, অনায়াসেই উঁচু জায়গায় উঠতে সক্ষম ছিল এই প্রজাতি। তা পাহাড়ই হোক কিংবা গাছ। এই বিশেষ প্রজাতিটিকে ২০১৫ সালে চিহ্নিত করা হয় হোমো নালেদি হিসাবে।
তারপর আরও এগিয়েছে গবেষণা। একাধিক বিশ্লেষণ হয়েছে সংশ্লিষ্ট মানব প্রজাতিটির দেহাবশেষ নিয়ে। সম্প্রতি ডঃ বার্জার এবং শিকাগো বিশ্ববিদ্যালয়ের নৃতত্ত্ববিদদের একাংশের গবেষণায় উঠে এল ‘হোমিনিনি’-র এই প্রজাতিটিই আসলে মানুষের নিকটতম পূর্বপুরুষ।
উল্লেখ্য, শুধু শারীরিক গঠনের জন্যই নয়। আজকের মানুষের সঙ্গে সঙ্গে রীতিমতো মিল ছিল তাদের আচার আচরণের।
গবেষকদের মত, হোমো ইরেকটাসের চেয়ে বুদ্ধিমত্তায় উন্নত ছিল হোমো নালেদি প্রজাতি। ফলে, বিবর্তনবাদের ইতিহাস থেকে বলা যায় তাদের আগমন হয়েছিল হোমো ইরেকটাসের পরে। ৩ লক্ষাধিক বছর আগে এদের আগমন হয় পৃথিবীতে।
কিন্তু কীভাবে হারিয়ে গেল এই নালেদিরা? গবেষকদের অনুমান, এখানেও দায়ী ছিল গোষ্ঠীদ্বন্দ্ব। জলবায়ু ও আবহাওয়া পরিবর্তনের সঙ্গে ক্রমশ অন্যান্য মানব প্রজাতির সঙ্গে সংঘাত বাড়ে নালেদিদের। দেখা দেয় বাসস্থান সমস্যা।
আজ থেকে আনুমানিক দু’লক্ষ বছর আগে পৃথিবী থেকে অস্তিত্ব মুছে যায় তাদের। যদিও, এরও প্রায় ৬৫ হাজার বছর পর পর্যন্ত অস্তিত্ব বজায় রেখেছিল নিয়ান্ডারথাল। হোমো হাইডেলবার্গ জেনেসিস বা আকাইম হোমো সেপিয়েন্স বা হোমো নিয়েনডার্থালদের চেয়েও বেশি প্রাচীন এই হোমো নালেদিরাই আমাদের উন্নত পূর্বপুরুষ।
এসডব্লিউ/এসএস/১৩৪৫
আপনার মতামত জানানঃ