তীব্র তাপদাহে নাকাল হয়ে পড়েছে ভারত ও পাকিস্তানের বিভিন্ন অঞ্চলের মানুষ।উত্তর ভারতজুড়ে দাবদাহ আরও তীব্র হয়েছে। গতকাল রোববার রাজধানী দিল্লি ও উত্তর প্রদেশে ৪৯ ডিগ্রি সেলসিয়াস বা তারও বেশি তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়। দেশটির আবহাওয়া অফিস থেকে কয়েকটি রাজ্যে দেওয়া হয়েছে ধুলি ও বজ্রঝড়ের পূর্বাভাস। এ অবস্থায় রাজধানী দিল্লিবাসীকে ঘরে থাকার আহ্বান জানানো হয়েছে।
এদিকে আবহাওয়া অফিস কেরালা রাজ্যজুড়ে ভারী বৃষ্টির পূর্বাভাস ও পাঁচ জেলায় রেড অ্যালার্ট জারি করেছে।
রাজস্থানের মতো মরুভূমি এলাকায় ‘রেড অ্যালার্ট’ জারি করতে বাধ্য হয়েছে রাজ্য সরকার। রাজ্যটির ধোলপুর জেলায় গত শনিবার সর্বোচ্চ ৪৮ দশমিক ৫ ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছে। দেশটির আবহাওয়াবিদরা জানিয়েছেন, সামনের দিনগুলোতে তাপমাত্রা আরও বাড়বে।
পাকিস্তানের অবস্থা আরও ভয়াবহ। দেশটির সিন্ধু প্রদেশের জ্যাকোবাবাদে তাপমাত্রা ৫১ ডিগ্রি সেলসিয়াস পর্যন্ত রেকর্ড করা হয়েছে।তীব্র দাবদাহে দুই দেশেই মানুষের মৃত্যুর খবরও পাওয়া যাচ্ছে। খবর এনডিটিভি ও জিও নিউজের।
সিন্ধু প্রদেশের তিনটি শহরে শনিবার তাপমাত্রা ৫০ ডিগ্রি সেলসিয়াসেরও বেশি ছিল। এ ছাড়া প্রদেশের নবাবশাহ শহরে ৫০ দশমিক ৫ ও মহেঞ্জোদারো শহরে ৫০ ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছে।
তীব্র দাবদাহে পুড়ছে ভারতের রাজধানী দিল্লি, উত্তরপ্রদেশ, মধ্যপ্রদেশ ও হরিয়ানার বিভিন্ন অঞ্চল। অন্যদিকে দেশটির সর্বদক্ষিণাঞ্চলীয় রাজ্য কেরালায় প্রবল বর্ষণ চলছে। ইতোমধ্যে ওই রাজ্যের ৫ জেলায় জারি করা হয়েছে ভারি বর্ষণজনিত সতর্কতা।
ভারতের আবহাওয়া দপ্তরের (আইএমডি) বরাত দিয়ে এক প্রতিবেদনে দেশটির সংবাদমাধ্যম এনডিটিভি জানিয়েছে, রোববার রাজধানীতে তাপমাত্রা পৌঁছেছে ৪৯ ডিগ্রি সেলসিয়াসে। দিল্লির উত্তরপশ্চিমাঞ্চলীয় শহর মুঙ্গেশপুর ও দক্ষিণপশ্চিমাঞ্চলীয় শহরে তাপমাত্রা ছিল যথাক্রমে ৪৯ দশমিক ২ এবং ৪৯ দশমিক ১ ডিগ্রি সেলসিয়াস।
এই দিন সফদরজং ব্যতীত দিল্লির অধিকাংশ অঞ্চলে তাপমাত্রা ছিল ৪৭ ডিগ্রি সেলসিয়াসের ওপরে। সফদরজংয়ে রোববার তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছে ৪৫ দশমিক ৬ ডিগ্রি সেলসিয়াস।
তবে দিল্লির অন্যান্য অংশের চেয়ে কম থাকলেও রোববার চলতি মৌসুমের সর্বোচ্চ তাপমাত্রা দেখেছে সফদর জং।
এই পরিস্থিতিতে দিল্লির বাসিন্দাদের খুব জরুরি প্রয়োজন ব্যাতীত ঘরের বাইরে বের না হওয়ার আহ্বান জানিয়েছে আইএমডি।
দিল্লি ছাড়াও ভারতের উত্তরপ্রদেশ, মধ্যপ্রদেশ, রাজস্থান ও হরিয়ানার ওপর দিয়ে বয়ে যাচ্ছে তীব্র তাপপ্রবাহ। রোববার এসব রাজ্যের অনেক অঞ্চলে তাপমাত্রার পারদ ৪৭ ডিগ্রি সেলসিয়াসের ঘর ছাড়িয়ে গেছে।
তীব্র গরমের পাশপাশি ধুলিঝড়ের শঙ্কা রয়েছে বলেও আভাস দিয়েছে আবহাওয়া দপ্তর। আইএমডি কর্মকর্তারা জানিয়েছেন সোম-মঙ্গলবার দিল্লির কিছু অংশ, উত্তরপ্রদেশের পশ্চিমাংশ, হরিয়ানা ও পাঞ্জাবে তাপপ্রবাহজনিত কারণে ধুলিঝড় দেখা দিতে পারে।
এদিকে, ভারতের উত্তরাঞ্চলীয় বিভিন্ন রাজ্য যখন পুড়ছে তীব্র তাপপ্রবাহে, সেসময় কেরালা শুরু হয়েছে মুষলধারে বর্ষণ। রোববার কেরালা ও লাক্ষাদ্বীপে যথাক্রমে ৫২ দশমিক ২ ও ৫৭ দশমিক ৭ মিলিমিটার বৃষ্টি রেকর্ড করা হয়েছে।
পাকিস্তানের অবস্থা আরও ভয়াবহ। দেশটির সিন্ধু প্রদেশের জ্যাকোবাবাদে তাপমাত্রা ৫১ ডিগ্রি সেলসিয়াস পর্যন্ত রেকর্ড করা হয়েছে।তীব্র দাবদাহে দুই দেশেই মানুষের মৃত্যুর খবরও পাওয়া যাচ্ছে।
ইতোমধ্যে কেরালার ৫ জেলায় ভারি বর্ষণজনিত সতর্কতা জারি করা হয়েছে। এসব জেলা হলো— এরনাকুলাম, ইদুক্কি, থ্রিসুর, মালাপ্পুরাম ও কোজিকোড়।
আবহাওয়া দপ্তরের রেকর্ড অনুযায়ী, রোববার এরনাকুলোমে বৃষ্টি হয়েছে ১২২ দশমিক ২ মিলিমিটার, যা এ মৌসুমে স্বাভাবিক বর্ষণের তুলনায় ১৩ গুণ বেশি।
দাবদাহে পুড়ছে পাকিস্তান
পাকিস্তানজুড়ে গরমজনিত বিভিন্ন রোগে মৃত্যুর খবর জানিয়েছে দেশটির সংবাদমাধ্যম জিও নিউজ। বিশেষ করে সিন্ধু ও পাঞ্জাব প্রদেশে মারাত্মক দাবদাহ শুরু হয়েছে। কর্মকর্তারা বলছেন, শনিবার সিন্ধুর জ্যাকোবাবাদের সর্বোচ্চ তাপমাত্রা ছিল ৫১ ডিগ্রি সেলসিয়াস। প্রদেশটির অন্যান্য স্থানের পরিস্থিতিও একই। প্রদেশটির বাসিন্দাদের কেউ কেউ বলছেন, দীর্ঘায়িত খরা ও নিরাপদ পানীয়র সংকটে নিরুপায় হয়ে গরম থেকে বাঁচতে দূষিত পানি পান করতে বাধ্য হচ্ছেন তাঁরা।
পাকিস্তানের আবহাওয়া বিভাগ জানিয়েছে, সিন্ধু প্রদেশের তিনটি শহরে গতকালও তাপমাত্রা ৫০ ডিগ্রি সেলসিয়াস বা এর বেশি ছিল। এদিন জ্যাকোবাবাদে তাপমাত্রা ছিল ৫১ ডিগ্রি সেলসিয়াস। এ ছাড়া প্রদেশের নবাবশাহ শহরে ৫০ দশমিক ৫ ও মহেঞ্জোদারো শহরে ৫০ ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছে। এদিকে প্রাদেশিক রাজধানী করাচিতে গতকাল ছিল বছরের দ্বিতীয় উষ্ণতম দিন। এদিন করাচির তাপমাত্রা ৪২ দশমিক ৮ ডিগ্রি সেলসিয়াস ছাড়িয়ে যায়।
এর আগে দেশটির আবহাওয়া বিভাগের পূর্বাভাসে বলা হয়েছিল, ১২ থেকে ১৫ মে দাবদাহ আরও বাড়তে পারে। আবহাওয়া বিভাগের দেওয়া তথ্য অনুযায়ী, দেশের বেশির ভাগ অংশে দাবদাহ চলছে। আবহাওয়া দপ্তর থেকে সতর্ক করে বলা হয়, দাবদাহের কারণে শিশু ও প্রবীণেরা সবচেয়ে ভোগান্তিতে পড়বেন।
পাঞ্জাবের অনেক শহরে দিনের বেলার তাপমাত্রা অসহনীয় হয়ে উঠেছে। স্বাস্থ্য বিভাগের কর্মকর্তারা বলছেন, এমন দাবদাহের মধ্যে লাহোরের অনেক মানুষকে ঘরের বাইরে থাকতে হয়। পানিস্বল্পতার কারণে তারা নানা রোগে আক্রান্ত হচ্ছেন। দাবদাহের কারণে অসুস্থ হয়ে পড়া অনেককে হাসপাতালেও ভর্তি হতে হচ্ছে। ইসলামাবাদের ন্যাশনাল ইনস্টিটিউট অব হেলথ সতর্ক করেছে, দেশের বিভিন্ন অংশে উচ্চ তাপমাত্রায় হৃদ্রোগ ও পানিবাহিত রোগীর ঝুঁকি বাড়তে শুরু করেছে।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, জলবায়ু পরিবর্তন প্রশমন ও জ্বালানি দক্ষতা সংক্রান্ত নীতিমালা প্রণয়নে মানুষের আচরণ ও অভ্যাসগত বিষয়কে আমলে নেয়া প্রয়োজন। উল্লেখ্য যে, প্রযুক্তিগত পরিবর্তনের তুলনায় মানুষের আচরণগত পরিবর্তন আনার জন্য যে বিনিয়োগ প্রয়োজন তা একেবারেই কম। কিন্তু অভ্যাস ও আচরণগত পরিবর্তনের প্রতিদান এবং কো-বেনিফিটস অনেক বেশী।
তারা বলেন, কভিড-১৯ এর কারণে আমাদের জীবনযাত্রায় যে আমূল পরিবর্তন এসেছে তা থেকে শিক্ষা নিয়ে জলবায়ু পরিবর্তন প্রশমন ও জ্বালানি দক্ষতা সংক্রান্ত নীতিমালা প্রণয়নে আচরণ ও অভ্যাসগত পরিবর্তনকে বিবেচনায় নেয়া যেতে পারে। ভেবে দেখা যেতে পারে, কী ধরনের সামাজিক প্রণোদনা মানুষের আচরণ ও অভ্যাসগত পরিবর্তনকে ত্বরান্বিত করতে পারে?
এ কথা অনস্বীকার্য যে, আমরা যদি টেকসই উন্নয়নের লক্ষ্য অর্জন করতে চাই কিংবা বৈশ্বিক তাপমাত্রা বৃদ্ধি নিয়ন্ত্রন করতে চাই, আচরণ এবং অভ্যাসগত পরিবর্তন আনার কোনো বিকল্প নেই। তবে অবশ্যই মাথায় রাখতে হবে, আচরণ ও অভ্যাসগত পরিবর্তন প্রযুক্তি নির্ভর জ্বালানি ও জলবায়ু পরিবর্তন সম্পর্কিত নীতিমালার পরিপূরক হিসেবে কাজ করবে। কিন্তু কখনোই তা প্রযুক্তি নির্ভর নীতিমালার বিকল্প নয়।
তারা বলেন, পরিবেশের ভারসাম্য রক্ষা ও তাপমাত্রা স্বভাবিক রাখতে বৃক্ষ রোপণ বৃদ্ধিতে মানুষের মাঝে সচেতনতা তৈরি করতে হবে। বনদস্যুদের হাত থেকে বনাঞ্চল রক্ষায় কঠোর আইন প্রণয়ন করতে হবে। অপরিকল্পিত বনাঞ্চল নিধনে সামাজিক আন্দোলন গড়ে তুলতে হবে। উদ্যোগ নিতে হবে পরিবেশ ও উষ্ণতা স্বভাবিক রেখে পৃথিবীকে মানুষের বসবাসের উপযোগী করে তুলতে।
এসডব্লিউ/এমএন/কেএইচ/১৪৩৫
আপনার মতামত জানানঃ