রাঙ্গামাটির কাপ্তাই হ্রদের পানি অস্বাভাবিকহারে শুকিয়ে গেছে। চলতি শুষ্ক মৌসুমে হ্রদে পানি শুকিয়ে যাওয়ায় জেগে উঠেছে অসংখ্য ডুবোচর। জেলার পাঁচটি উপজেলা বিলাইছড়ি, বাঘাইছড়ি, জুরাছড়ি, লংগদু ও বরকলের সাথে জেলা সদরের আংশিক স্থানে নৌ চলাচল হচ্ছে। উপজেলাগুলোতে নৌযানে করে লোকজনের যাতায়াত ও পণ্য পরিবহন কষ্টসাধ্য হয়ে উঠেছে।
বিলাইছড়ি, জুরাছড়ি ও বরকলে নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্য পরিবহনের ক্ষেত্রেও ভাড়া দিতে হচ্ছে প্রায় তিনগুণ। জৈষ্ঠ্যের খরতাপে দীর্ঘ পথ পায়ে হেঁটে মানুষকে উপজেলার গন্তব্যে পৌঁছাতে হচ্ছে। ফলে যাত্রী ও পণ্য পরিবহন কষ্টকর হয়ে পড়েছে।
হ্রদের পানি শুকিয়ে যাওয়ায় দেখা দিয়েছে অসহনীয় দুর্ভোগ। উপজেলাগুলোতে নৌযানে লোকজনের যাতায়াত ও পণ্য পরিবহন কষ্টসাধ্য হওয়ার ফলে বেড়েছে নিত্যপ্রয়োজনীয় জিনিসপত্রের দাম। জৈষ্ঠ্যের খরতাপে দীর্ঘ পথ পায়ে হেঁটে মানুষকে গন্তব্যে পৌছাঁতে হচ্ছে।
তীব্র তাপদাহের এই শুষ্ক মৌসুমে পাহাড়ি এলাকাগুলোতে দেখা দিয়েছে বিশুদ্ধ খাবার পানির সংকট। সুপেয় পানির জন্য কয়েক মাইল হেঁটে তাদের খাবার পানি সংগ্রহ করতে হচ্ছে। চরম দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে হ্রদ নির্ভর বাসিন্দাদের।
স্থানীয় বাসিন্দারা বলছেন, হ্রদের পানি শুকিয়ে যাওয়ায় জেলা সদরের সাথে যোগাযোগ করতে চরমভাবে হিমশিম খেতে হচ্ছে তাদের। হ্রদের বুকে জেগে উঠেছে অসংখ্য ডুবোচর ও টিলা।
কয়েক মাইল হেঁটে নৌঘাটে আসতে হচ্ছে। যাত্রী এবং মালামাল ছোট ইঞ্জিন বোটের মাধ্যমে পরিবহন করা হচ্ছে। তারপরও শুভলংয়ের পরে গিয়ে বোটগুলো আটকে যায়। ২ থেকে ৩ ঘণ্টার রাস্তা যেতে সময় লাগছে ৫ থেকে ৬ ঘণ্টা।
রাঙামাটি লঞ্চ মালিক সমিতির নেতৃবৃন্দ জানিয়েছেন, হ্রদের পানি শুকিয়ে যাওয়ায় ৫টি উপজেলার সাথে নৌ-যোগাযোগ বন্ধ হয়ে গেছে।
এদিকে, কাপ্তাই পানি বিদ্যুৎ কেন্দ্র থেকে জানা গেছে, হ্রদে পানির স্তর এখন অনেক নিচে নেমে গেছে। হ্রদের পানি শুকিয়ে যাওয়ায় কমে গেছে কাপ্তাই জল বিদ্যুতের উৎপাদনও।
পাকিস্তান সরকারের আমলে জলবিদ্যুৎ উৎপাদনের লক্ষ্যে কাপ্তাইয়ের কর্ণফুলী নদীতে বাঁধ দিয়ে সৃষ্টি হয় সাতশ’ বর্গকিলোমিটার আয়তনের বিশ্বের দীর্ঘতম কৃত্রিম কাপ্তাই হ্রদ।
১৯৬২ সালে কাপ্তাইয়ে নির্মিত কর্ণফুলী পানি বিদ্যুৎ কেন্দ্রে বর্তমানে ৫টি ইউনিটের উৎপাদন সক্ষমতা মোট ২৪২ মেগাওয়াট। উজানে পর্যাপ্ত পানি থাকলে সবগুলো ইউনিট চালু থাকে। কিন্তু এখন মাত্র একটি ইউনিট চালু আছে, যা থেকে বিদ্যুৎ মিলছে দিনে ২৫ মেগাওয়াট।
কাপ্তাই পানি বিদ্যুৎ কেন্দ্র থেকে প্রাপ্ত তথ্যে জানা গেছে, কাপ্তাই হ্রদে বর্তমানে যে পানি আছে, তাতে একটি মাত্র ইউনিট চালু রাখা সম্ভব। সেটিও চালু রাখা হয়েছে চট্টগ্রাম ওয়াসার পানি পরিশোধনের কথা বিবেচনায় রেখে। পানি ৭০ এমএসএলের নিচে নামলে সেটিও চালু রাখা সম্ভব হবে না।
উজান থেকে নেমে আসা পলিমাটি এবং পাহাড় হতে ধসে পড়া মাটি কাপ্তাই হ্রদের তলদেশে জমা হচ্ছে। এ কারণে হ্রদের তলদেশ ইতিমধ্যে অনেকটা ভরাট হয়ে গেছে এবং হ্রদের সার্বিক জল ধারণক্ষমতা হ্রাস পেয়েছে। বাংলাদেশের সবচেয়ে বড় কৃত্রিম জলাধার এই কাপ্তাই হ্রদের নাব্যতা কমে যাওয়ায় রাঙামাটি তথা দেশের অর্থনীতিতে বিরূপ প্রভাব ফেলছে।
অত্রাঞ্চলে প্রাকৃতিকভাবে উৎপাদিত পণ্য আহরণ, পর্যটন এবং শস্য পরিবহন বাধাগ্রস্ত হচ্ছে। যা রাঙামাটি জেলার অর্থনৈতিক কার্যক্রমকে ব্যাপকভাবে ব্যাহত করছে। কাপ্তাই হ্রদ কেন্দ্রিক অর্থনৈতিক কার্যক্রম ও উন্নয়ন কর্মকান্ডকে সচল রাখতে অনতিবিলম্বে হ্রদের তলদেশে জমাটবদ্ধ পলিমাটি অপসারণে জরুরি ভিত্তিতে ড্রেজিংয়ের দাবি জানিয়েছেন স্থানীয়রা।
এসডব্লিউ/এসএস/১৫৪০
আপনার মতামত জানানঃ