হত্যা ছাড়াও চাঁদাবাজি, টেন্ডারবাজি, অপহরণ, নির্যাতন, এমনকি ধর্ষণসহ আরও অনেক অভিযোগ রয়েছে যুবলীগের নেতা-কর্মীদের বিরুদ্ধে৷ এবার কক্সবাজারের টেকনাফ উপজেলায় চাঁদাবাজির মামলায় গ্রেপ্তারি পরোয়ানাভুক্ত আসামিকে গ্রেপ্তার করতে গেলে পুলিশের দুই সদস্যকে পেটানোর অভিযোগ পাওয়া গেছে।
গতকাল শুক্রবার(২৯ এপ্রিল) রাত সাড়ে ১১টার দিকে উপজেলার বাহারছড়া ইউনিয়নের শামলাপুর বাজারে এ ঘটনা ঘটে। খবর প্রথম আলো
অভিযুক্ত আসামির নাম শামশুল আলম ওরফে এ টি এম শামসু। তিনি বাহারছড়া ইউনিয়ন যুবলীগের জ্যেষ্ঠ যুগ্ম সম্পাদক ও বাহারছড়ার শীলখালী এলাকার মৃত মোহাম্মদ কালু মিয়ার ছেলে। আহত দুই পুলিশ সদস্য হলেন বাহারছড়া পুলিশ তদন্তকেন্দ্রের সহকারী উপপরিদর্শক (এএসআই) জামাল মীর ও কনস্টেবল মো. ইমরান।
পুলিশ ও প্রত্যক্ষদর্শী কয়েকজন জানান, গোপন সংবাদের ভিত্তিতে খবর পেয়ে চাঁদাবাজি মামলায় গ্রেপ্তারি পরোয়ানাভুক্ত আসামি ও ইউনিয়ন যুবলীগের জ্যেষ্ঠ যুগ্ম সম্পাদক শামশুল আলমকে (৩৫) গ্রেপ্তার করতে গতকাল রাতে উপজেলার বাহারছড়া ইউনিয়নের শামলাপুর বাজারে যায় পুলিশের একটি দল। সেখানে উপস্থিত হয়ে তাকে গ্রেপ্তার করতে চাইলে শামশুলসহ তার সঙ্গে থাকা লোকজন পুলিশের সহকারী উপপরিদর্শক (এএসআই) জামাল মীর ও কনস্টেবল মো. ইমরানকে এলোপাতাড়ি পিটিয়ে রক্তাক্ত করেন। খবর পেয়ে পুলিশ পরিদর্শক নূর মোহাম্মদ ঘটনাস্থলে যান এবং শামশুলকে গ্রেপ্তার করে বাহারছড়া পুলিশ তদন্তকেন্দ্রে নিয়ে আসেন।
পুলিশ পরিদর্শক নূর মোহাম্মদ বলেন, চাঁদাবাজি মামলায় এজাহারে উল্লিখিত দুই নম্বর আসামি যুবলীগ নেতাকে গ্রেপ্তার করতে গেলে পুলিশের দুই সদস্যকে মারধর করা হয়। এতে পুলিশের দুই সদস্য আহত হয়েছেন। অভিযুক্ত ব্যক্তির বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে বলে জানান তিনি।
বাহারছড়া ইউনিয়নের উত্তর শীলখালী মাঝেরপাড়ায় একোয়া শ্রিম্প হ্যাচারির (নারিশ কোম্পানি) কেনা প্রায় ২০ একর জমি আছে। ২২ এপ্রিল প্রতিষ্ঠানটির নির্মাণকাজ চলা অবস্থায় দেশীয় অস্ত্র নিয়ে সেখানে থাকা নির্মাণশ্রমিকদের ওপর চড়াও হন এলাকার ভূমিদস্যু, চাঁদাবাজ ও সন্ত্রাসীরা। জমিতে স্থাপনা নির্মাণ করতে হলে ৫০ লাখ টাকা চাঁদা দিতে হবে বলে কোম্পানির কর্মকর্তাকে হুমকি দেন তারা। চাঁদা দিতে না চাইলে তারা কোম্পানির নিরাপত্তাকর্মীদের মারধর করেন এবং মালামাল লুটপাট করে নিয়ে যান।
এ সময় দুর্বৃত্তরা এক্সকাভেটর মেশিনসহ কিছু যন্ত্রপাতি ভাঙচুর চালায়। এ ঘটনায় ২৬ এপ্রিল ১২ জনের নাম উল্লেখ ও অজ্ঞাতনামা আরও ৮ থেকে ১০ জনকে আসামি করে টেকনাফ থানায় একটি মামলা করা হয়।
প্রতিষ্ঠানটির কর্মকর্তা মো. রাশেদুল ইসলাম বলেন, চাঁদার টাকা দিতে অপারগতা জানানোয় তারা শ্রমিকদের মারধর ও বিভিন্ন ধরনের মালামাল লুট করেন। পাশাপাশি বিভিন্ন যন্ত্রপাতি ক্ষতিগ্রস্ত করেছে। এ ঘটনায় একটি মামলা হয়েছে।
সংশ্লিষ্ট বিশেষজ্ঞরা বলেন, এসব ঘটনা খুবই দুঃখজনক। এটা যে হঠাৎ করে হচ্ছে তা নয়। পর্যায়ক্রমে নিচে যেতে যেতে একটা গভীর সংকটে এসে আমরা দাঁড়িয়েছি। অর্থনৈতিক উন্নয়ন হচ্ছে, সম্পদ বাড়ছে, কিন্তু মানুষের মানবিক গুণাবলি কমে যাচ্ছে। এখন আমাদের সামনে কোনো আদর্শ নাই। আদর্শহীনতা, নীতিহীনতা—এগুলো দ্বারা রাজনীতি দূষিত হয়ে গেছে। জাতীয় রাজনীতি যদি দূষণমুক্ত হতো তাহলে সরকারের নীতি ভিন্ন হতো।
সংশ্লিষ্ট বিশেষজ্ঞরা বলছেন, স্থানীয় আওয়ামীলীগ-যুবলীগ নেতাকর্মীদের দৌরাত্ম্য দিনদিন চাউর হয়ে উঠছে। ক্ষমতার অপব্যবহার করে বিভিন্ন অপরাধ কর্মকাণ্ডের পাশাপাশি স্থানীয়ভাবে ক্ষমতার চূড়ান্তে বসবাস করেন। তাদের বিরুদ্ধে প্রশাসন ও সরকার প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নিতে আগ্রহবোধ না করায় তাদের দৌরাত্ম্য আরও বেড়ে চলেছে।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, কোনো কিছুতেই থামছে না যুবলীগ। ছিনতাই, মাদক ব্যবসা, ক্যাসিনো, জুয়া, চাঁদাবাজি, জমি দখল, নারী নির্যাতন, টেন্ডারবাজি আর নির্মাণকাজ থেকে কমিশন দাবিসহ নানা অনিয়মে জড়িত থাকার অভিযোগ এ সংগঠনের একশ্রেণির নেতাকর্মীদের বিরুদ্ধে। সারাদেশে জেলা-উপজেলা পর্যায়ে রয়েছেন অসংখ্য বিতর্কিত নেতাকর্মী। তাদের বিতর্কিত কর্মকাণ্ডে সরকারের ব্যাপক অর্জনের মধ্যেও সমালোচনা হচ্ছে। বিতর্কিত এসব নেতার পৃষ্ঠপোষকতা করছেন একশ্রেণির সংসদ সদস্য। এ কারণে তাদের দাপট অনেক বেশি। স্থানীয় থানা ও প্রশাসন যুবলীগের এ ধরনের অপকর্মের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে সাহস পাচ্ছে না। কোনো কোনো কর্মকর্তা ব্যবস্থা নিতে গেলে ঐ কর্মকর্তাকে বিএনপি-জামায়াত সমর্থিত কর্মকর্তা বলে বদলিসহ নানা হয়রানির শিকার হতে হয়। সরকারের সমালোচনা ঠেকাতে তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার পরামর্শ দিয়েছেন তারা।
এসডব্লিউ/এমএন/কেএইচ/১৮১৯
আপনার মতামত জানানঃ