রাজধানীর বেইলি রোডে মোটরসাইকেল নিয়ে উল্টোপথে ছুটছিলেন ১০ থেকে ১২ জন যুবক। সে সময় রাস্তা পার হচ্ছিলেন পুলিশের বিশেষ শাখার (এসবি) সহকারী পরিদর্শক (এসআই) মিরাজ হোসেন। এ সময় তার শরীরে মোটরসাইকেল তুলে দেন তারা।
রাস্তা পার হওয়ার সময় উল্টো পথ দিয়ে আসা একটি মোটরসাইকেল ধাক্কা দেয় মিরাজ হোসেনকে। এতে কিছুটা আঘাত পেয়ে ওই বাইকে থাকা চালক ও আরোহীকে উদ্দেশ্য করে প্রতিবাদ জানান তিনি। এ সময় মোটরসাইকেলটিতে থাকা আরোহী এবং আরও কয়েকজন মোটরসাইকেলে করে এসে তাঁকে বলে, ‘ভাইরে চিনস না? ভাই যাইতাছে আর তুই কথা কইতাছস!’
প্রসঙ্গত, মিরাজ তাদের জিজ্ঞেস করেছিলেন, উল্টোপথে কেন চলছেন? এমনিতে উল্টোপথে, আবার ধাক্কাও দিচ্ছেন। কথা মুখ থেকে না শেষ হতেই বাইক থেকে দুজন নেমে অন্ধের মতো মুখে কিল-ঘুসি মারতে থাকেন।
বুঝে ওঠার আগেই চারপাশ থেকে ঘিরে ধরেন আরও ৮ থেকে ১০ জন। এরপর পেটাতে থাকেন আমাকে আর বলেন, ‘ভাইকে চিনস নাই? আবার কথা বলিস।’
কে সে ভাই? জিজ্ঞেস করতেই হাসপাতালের বিছানায় শুয়ে মিরাজ পুলিশের এ সদস্য জানান, তিনি যুবলীগের একজন নেতা বলে জেনেছেন। সে রাতেই হাসপাতালে এসে তার কাছে কয়েকজন মিলে ‘সরি’ বলে গেছেন। তাদের নাম তিনি প্রকাশ করতে চাননি।
এ ঘটনায় মিরাজ বাদী হয়ে ঢাকা মহানগর পুলিশের রমনা থানায় একটি মামলা করেছেন। সেই মামলায় সবুজ হোসেন নামে একজনকে গ্রেফতার দেখিয়েছে পুলিশ।
ঘটনা গত বৃহস্পতিবার বিকাল সাড়ে ৫টার। এ সময় এই পুলিশ সদস্য সাদা পোশাকে ছিলেন।
তিনি জানান, তাকে মারধরের পাঁচ মিনিটের মধ্যে রমনা থানা পুলিশের একটি টহল টিম এসে আহত মিরাজকে উদ্ধার করে। পরে রাজারবাগ পুলিশ হাসপাতালে ভর্তি করা হয় তাকে। হাসপাতালে ৮ তলায় ৫ নম্বর ওয়ার্ডে রেখে তাকে চিকিৎসা দেওয়া হচ্ছে।
শরীরে জখম নিয়ে বর্তমানে রাজারবাগ পুলিশ লাইনস হাসপাতালে চিকিৎসাধীন মিরাজ হোসেন। তিনি বলেন, ‘পুলিশ পরিচয় দিয়েও রক্ষা পাইনি। ওরা ১০-১২ জন ছিল। আমাকে বেধড়ক মারধর করে। নাক-মুখ দিয়ে রক্ত ঝরছিল। এখন প্রচণ্ড মাথাব্যথা, সঙ্গে শরীরে ব্যথা। চিকিৎসক সিটি স্ক্যান করানোর পরামর্শ দিয়েছেন। তাহলে বড় কোনো সমস্যা হয়েছে কি না জানা যাবে। এখনো সিটি স্ক্যান করানো হয়নি।’
হাসপাতালের দায়িত্বরত নার্সরা বলছেন, ৩৪ নম্বর বেডের এ পুলিশ সদস্য মাথায় আঘাত পেয়েছেন। গতকাল শুক্রবার থাকায় সিটি স্ক্যান করা যায়নি। এখন আগের চেয়ে সুস্থ আছেন।
রমনা বিভাগের উপপুলিশ কমিশনার মো. শহিদুল্লাহ বলেন, সরকারি কাজে বাধা দেওয়া ও পুলিশ সদস্যকে মারধর করায় সবুজ নামে একজনকে গ্রেফতার করে কারাগারে পাঠানো হয়েছে। মামলায় অজ্ঞাত সাত-আটজনকে আসামি করা হয়েছে।
তারা যুবলীগের নেতাকর্মী কিনা, জানতে চাইলে পুলিশের এ কর্মকর্তা বলেন, তদন্ত শেষ হওয়া আগে রাজনৈতিক পরিচয়ের বিষয়ে কিছু বলা ঠিক হবে না।
বিষয়টি নিয়ে ঢাকা মহানগর দক্ষিণ যুবলীগের ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক এইচ এম রেজাউল করিম রেজা বলেন, রাস্তাঘাটের অনেকেই তো যুবলীগ বলে দাবি করে। কিন্তু আমাদের নেতাকর্মীদের কেউ সেখানে ছিলেন না।
এসডব্লিউএসএস/১৮১০
আপনার মতামত জানানঃ