সারা বিশ্বেই আর্থিক খাতে ডিজিটাল প্রযুক্তির প্রসার ঘটছে। এশিয়া ও প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চলেও অর্থনৈতিক উন্নয়ন ও পুনরুদ্ধারে বাড়ছে প্রযুক্তির ব্যবহার। এ অঞ্চলের মধ্যে সিঙ্গাপুর, হংকং, দক্ষিণ কোরিয়া ও তাইওয়ান প্রযুক্তি খাতে অন্য দেশগুলোর চেয়ে এগিয়ে রয়েছে। সিঙ্গাপুর অবশ্য বৈশ্বিক পর্যায়ে শীর্ষস্থান দখল করেছে। তবে বাংলাদেশ এই তালিকায় ভালো কোনো ফল দেখাতে পারেনি। প্রতিদ্বন্দ্বী রাষ্ট্র ভিয়েতনাম, পাকিস্তান, উগান্ডার চেয়েও বাংলাদেশ অনেক পেছনে রয়েছে। ভিয়েতনাম থেকে তো ২০ ধাপ পিছিয়ে বাংলাদেশ।
এই তালিকা বলছে, এশিয়ায় উল্লেখযোগ্য কোনো অবস্থানে বাংলাদেশ নেই। তালিকার শীর্ষে আছে সিঙ্গাপুর। এরপর এগিয়ে আছে হংকং, দক্ষিণ কোরিয়া, তাইওয়ান ও মালয়েশিয়া। ভিয়েতনাম আছে ৬০তম স্থানে। দক্ষিণ এশিয়ার মধ্যে ভারত আছে ৬১তম স্থানে। যার অর্থ দাঁড়ায়, এশিয়ার কিছু দেশ এখন প্রযুক্তিতে যুক্তরাষ্ট্রের সমকক্ষ। অন্যদিকে দ্রুত উন্নতি করছে চীন, ভারত, ভিয়েতনাম, ইন্দোনেশিয়া ও থাইল্যান্ড। কিন্তু বাংলাদেশ সেই অর্থে অনেক পেছনে। ৯০ দেশের মধ্যে ৮৩ নম্বরে। অর্থাৎ শেষ দিক থেকে সপ্তম।
ফ্লেচার ও মাস্টারকার্ডের নতুন ডিজিটাল ইন্টেলিজেন্স ইনডেক্সে বা ডিজিটাল বুদ্ধিমত্তা সূচকে (ডিআইআই) এ অঞ্চলে প্রযুক্তির বিকাশ ও প্রযুক্তির প্রতি আস্থা বৃদ্ধির এ চিত্র উঠে এসেছে। সিঙ্গাপুর অবশ্য ১ নম্বর অবস্থান দখল করেছে। এর আগে ২০১৪ ও ২০১৭ সালে এ সূচক প্রকাশ করা হয়। তবে এবারের সূচকে বিশ্বব্যাপী ডিজিটাল কার্যক্রমে উন্নয়নের চিত্র ফুটে উঠেছে। এতে পরিবর্তনের চালিকাশক্তি ও গতিশীলতা, বিশ্বব্যাপী করোনা মহামারীর চ্যালেঞ্জ ও এ মহামারী-পরবর্তী সময়ে অর্থনৈতিক অগ্রগতি অর্জনে প্রযুক্তিভিত্তিক কার্যক্রমের প্রয়োজনীয়তার কথা বলা হয়।
এই প্রতিবেদনে বিশ্বের দেশগুলোকে চার ভাগে ভাগ করা হয়েছে। পর্যবেক্ষক (ওয়াচ আউট) পর্যায়ে রয়েছে আফ্রিকা ও এশিয়ার কিছু দেশ। বাংলাদেশ রয়েছে দ্বিতীয় ধাপে, যারা কেবল জড়তা ভেঙে উঠেছে (ব্রেক আউট)। তবে এই সারিতে বেশ নিচের দিকে বাংলাদেশের অবস্থান। তৃতীয় পর্যায়ে রয়েছে সেই দেশগুলো, যারা ছুটতে শুরু করেছে (স্টল আউট), স্পেন ও ফ্রান্সের মতো দেশ রয়েছে এই সারির নিচের দিকে। সর্বোচ্চ ধাপ চতুর্থ পর্যায়ে রয়েছে কোমর সোজা করে দাঁড়ানো (স্ট্যান্ড আউট) দেশগুলো। সিঙ্গাপুর, যুক্তরাষ্ট্র ও চীনের হংকং রয়েছে এই তালিকার শীর্ষে।
ডিজিটাল প্রযুক্তির বিকাশে মাস্টারকার্ড এই প্রতিবেদনে মোট ৯০টি দেশের র্যাংকিং প্রকাশ করেছে। তাতে বাংলাদেশের অবস্থান একেবারেই তলানিতে। মাত্র ৩২ দশমিক ৬৭ নম্বর নিয়ে বাংলাদেশ ৮৩তম স্থানে আছে। ৯০টি দেশে এই জরিপ চালানাে হয়েছে। ডিজিটাল ইভাল্যুশন বা প্রযুক্তির বিকাশের ক্ষেত্রে ১৬০টি সূচক মূল্যায়ন করা হয়। এর মধ্যে চারটি প্রধান স্তম্ভ হলাে, প্রাতিষ্ঠানিক পরিবেশ, চাহিদার অবস্থা, সরবরাহব্যবস্থা আর উদ্ভাবন ও পরিবর্তনের সক্ষমতা।
বাংলাদেশের অবস্থান ৮৩ হলেও অর্থনীতিতে প্রতিদ্বন্দ্বী দেশ ভিয়েতনামের অবস্থান এক্ষেত্রে ৬০তম। বাংলাদেশের চেয়ে আর্ত্যহিক দিক থেকে পশ্চাৎপদ মনে করা হয় এমন অনেক দেশও এক্ষেত্রে এগিয়ে রয়েছে। আফ্রিকার দেশ রুয়ান্ডা, নামিবিয়া ও ঘানা রয়েছে ৬৯, ৭০ ও ৭১তম অবস্থানে। এমনকি পাকিস্তান, উগান্ডা ও তানজানিয়াও রয়েছে বাংলাদেশের আগে। তালিকায় বাংলাদেশের ঠিক ওপরের স্থানগুলো অর্থাৎ যথাক্রমে ৮০, ৮১ ও ৮২তম অবস্থান দখল করে রেখেছে এই তিন দেশ।
সূচকে দেখা যায়, লকডাউনের মধ্যেও চলতি বছরের দ্বিতীয় প্রান্তিকে, বিশেষ করে দক্ষিণ কোরিয়া ও তাইওয়ান অর্থনৈতিক সহযোগিতা ও উন্নয়ন সংস্থার (ওইসিডি) প্রবৃদ্ধির হারকে ছাড়িয়ে গেছে। এসব দেশের প্রযুক্তি খাতে প্রচুর মেধাবী কর্মী যেমন পাওয়া যায়, তেমনি শিল্প ও শিক্ষা খাতের মধ্যে ব্যাপকভাবে সক্রিয় আরঅ্যান্ডডি কোলাবোরেশন বা যৌথ উদ্যোগও রয়েছে। ডিজিটাল প্রডাক্ট বা প্রযুক্তিপণ্য উদ্ভাবন ও তা মূলধারায় সরবরাহের ক্ষেত্রেও এসব দেশের রেকর্ড ভালো। পূর্ণাঙ্গ প্রতিবেদনটি সংগ্রহ করুন এখান থেকে।
এ বিষয়ে মাস্টারকার্ডের এশিয়া-প্যাসিফিকের সার্ভিসেস বিভাগের এক্সিকিউটিভ ভাইস প্রেসিডেন্ট ম্যাথিউ ড্রাইভার বলেন, কভিড-১৯ মাত্র কয়েক মাসে ডিজিটাল ইকোসিস্টেমের উন্নয়ন ঘটিয়ে এশিয়া ও প্রশান্ত মহাসগারীয় অঞ্চলজুড়ে ডিজিটালাইজেশন বা প্রযুক্তির প্রচলন ও ব্যবহারকে অন্তত পাঁচ বছর এগিয়ে দিয়েছে। ভোক্তাদের প্রবল আস্থা বা নির্ভরতা ও সম্পৃক্ত হওয়ার সুবাদে ক্ষুদ্র ব্যবসায়েও প্রযুক্তির ব্যবহার ব্যাপক হারে বেড়েছে। এক্ষেত্রে সরকারগুলো সক্রিয় সহায়তা দিয়েছে। বদৌলতে এ অঞ্চলে ডিজিটাল ইকোনমি বা প্রযুক্তি-অর্থনীতির অমিত সম্ভাবনা দেখা দিয়েছে
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, যেসব দেশ ডিজিটাল প্রযুক্তিতে এগিয়ে গেছে, অর্থনীতিতেও তারা অন্যদের তুলনায় ভালাে করছে। ডিজিটাল বা প্রযুক্তিভিত্তিক কার্যক্রমে জোর দিয়ে এবং প্রযুক্তিভিত্তিক কার্যক্রমের সঙ্গে শত শত কোটি মানুষকে সম্পৃক্ত করার মাধ্যমে তারা অর্থনৈতিক উন্নয়ন করছে। লকডাউনের মধ্যেও চলতি বছরের দ্বিতীয় প্রান্তিকে দক্ষিণ কোরিয়া ও তাইওয়ানের প্রবৃদ্ধির হার ওইসিডির প্রবৃদ্ধির হারকে ছাড়িয়ে গেছে। এসব দেশের প্রযুক্তি খাতে প্রচুর মেধাবী কর্মী আছেন। এসব দেশের শিল্প ও শিক্ষা খাতের মধ্যে সহযােগিতামূলক সম্পর্কও আছে। ডিজিটাল প্রযুক্তি পণ্য উদ্ভাবন ও তা মূলধারায় নিয়ে আসার ক্ষেত্রেও এসব দেশের রেকর্ড ভালাে। বাংলাদেশকে এখান থেকে শিক্ষাগ্রহণ করে নতুন নীতিমালা প্রণয়ন ও বাস্তবায়ন করতে হবে।
এসডাব্লিউ/এসএন/আরা/১২৪০
আপনার মতামত জানানঃ