দেশের মাদ্রাসাগুলোতে শিক্ষার্থীদের ওপর যৌন নির্যাতনের খবরে শিউরে উঠছে সারা দেশ। যদিও মাদ্রাসাগুলোতে ক্রমবর্ধমান এই ধর্ষণ নিয়ে মাথাব্যথা নেই সরকারের। দেশের মানবাধিকার সংগঠনগুলোও সরব নয়। নেই বার্ষিক কোন প্রতিবেদন। তাই এই সব নির্যাতনের প্রকৃত চিত্র থেকে যাচ্ছে অজানা।
অধিকাংশ ক্ষেত্রে শারীরিক ও যৌন নির্যাতনের পর শিক্ষার্থীরা লজ্জা, ভয়, নানান কিছুর কারণে তা প্রকাশ করে না। ধর্মীয় প্রতিষ্ঠানে শিশুদের উপর যৌন নির্যাতনের ঘটনা নিয়ে সবথেকে কম কথা বলা হয়। এর কারণ হয়তো সেক্স, অপ্রাপ্তবয়স্ক ভুক্তভোগী এবং ধর্মের মতো স্পর্শকাতর বিষয় নিয়ে মানুষের অন্ধবিশ্বাস।
মাদ্রাসা শিক্ষক কর্তৃক একের পর এক শিশু ধর্ষণ ও হত্যার ঘটনা মাদ্রাসা বিষয়ে দেশবাসীর নিকট এক নেতিবাচক মনোভাব তৈরী হয়েছে। এরইমধ্যে শোনা গেল গাইবান্ধার গোবিন্দগঞ্জে হাফেজিয়া মাদ্রাসার এক শিক্ষার্থীকে ধর্ষণের অভিযোগে কাওসার হাবিব নামের ওই মাদ্রাসার এক হাফেজ শিক্ষককে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ।
অভিযোগ সূত্রে জানা গেছে, গোবিন্দগঞ্জ উপজেলার নাকাই ইউনিয়নের রথের বাজার হাফেজিয়া মাদ্রাসার কর্মরত শিক্ষক কাওসার হাবিব (২১) ওই মাদ্রাসার এক শিক্ষার্থীকে গত ৮ মার্চ গভীর রাতে নিজ শয়নকক্ষে ডেকে নিয়ে ধর্ষণ করে এবং ঘটনাটি কাউকে না জানাতে ভয়ভীতি প্রদর্শন করে।
পরদিন ঘটনার শিকার শিক্ষার্থী বিষয়টি মোবাইল ফোনে তার পরিবারকে জানায়। পরে বিষয়টি আস্তে আস্তে প্রকাশ হয়ে পড়লে এলাকায় এ নিয়ে বেশ উত্তেজনা দেখা দেয়। পরে ওই শিক্ষার্থীর পরিবারের পক্ষ থেকে গোবিন্দগঞ্জ মঙ্গলবার (১৫মার্চ)দুপুরে তাকে গ্রেপ্তার করে। আটক শিক্ষক বগুড়া জেলার কাহালু উপজেলার মাগুড়া গ্রামের আজাহার আলীর ছেলে বলে পুলিশ আরও জানায়।
গোবিন্দগঞ্জ থানার অফিসার ইনচার্জ ইজার উদ্দিন বিষয়টি নিশ্চিত করে জানান, ছাত্রকে ধর্ষণের অভিযোগে গ্রেপ্তারকৃত শিক্ষক কাওসার হাবিবকে আদালতে সোর্পদ করা হয়েছে।
দেশে নারীর যৌন নির্যাতন ও ধর্ষণের চেয়ে বেশি পরিমাণে ঘটছে মাদ্রাসায় শিশু ধর্ষণ ও হত্যা। প্রায় প্রতিদিনই মাদ্রাসা শিক্ষক কর্তৃক শিশু ধর্ষণের খবর আসে। তবে সংশ্লিষ্ট বিশেষজ্ঞরা মনে করেন, মাদ্রাসায় শিশু ধর্ষণে কেবল মাদ্রাসা শিক্ষককেরাই জড়িত থাকে না, মাদ্রাসার বড় ভাইদেরও লালসার শিকার হন মাদ্রাসায় আগত শিশুরা। বড় ভাইয়ের যৌন নির্যাতন থেকে নিরাপদ থাকা এইসব বাচ্চাদের জন্য অনেকটাই জটিল। এসব হত্যায় এসমস্ত বড় ভাইদের হাত থাকতে পারে বলে মনে করেন তারা।
সংশ্লিষ্ট বিশেষজ্ঞরা বলেন, আলিয়া মাদ্রাসা ছাড়া অন্য মাদ্রাসাগুলোতে সরকারের নিয়ন্ত্রণ বা তদারকি সেভাবে নেই। সেজন্য যৌন নির্যাতন বা শিশু শিক্ষার্থীদের ওপর নির্যাতনের সুযোগ থাকে। এছাড়া সেখানে পরিবেশ এমন যে, শিশু শিক্ষার্থীদের ওপর নির্যাতনের অভিযোগ অনেক সময় প্রকাশও হয় না। কওমি, এবতেদায়ী বা নূরানী-বিভিন্ন ধরনের মাদ্রাসা পরিচালনার জন্য বেসরকারি উদ্যোগে কর্তৃপক্ষ যারা রয়েছে, তাদের তদারকি বাড়ানো উচিত বলে মনে করেন তারা।
বিশেষজ্ঞরা বলেন, অনেকে মনে করেন এরা আদব কায়দা শিক্ষা দেন। নৈতিকতা শিক্ষা দেন। সে কারণে ধর্মীয় বিশ্বাস থেকে হোক বা নিরাপত্তার কথা ভেবে অনেকে ছেলেমেয়েদের মাদ্রাসায় পড়াতে দেন। কিন্তু বাস্তবতায় দেখা যাচ্ছে, যে নিরাপত্তার কথা ভেবে মাদ্রাসায় ছেলেমেয়েদের পড়াতে দেয়া হয় সেখানে আদৌ নিরাপদ নয়। দেখা যায় ছেলেরাও নিরাপদ নয় এসব তথাকথিত হুজুরদের কাছে। এটিও সমাজের বৈকল্যতা।
এসডব্লিউ/এমএন/কেএইচ/০০১৯
আপনার মতামত জানানঃ