করোনাভাইরাসের থাবায় বিশ্বজুড়ে মানুষ প্রিয়জন হারাচ্ছে। করোনার কামড়ে কত যে মানুষ প্রিয়জন হারিয়েছেন, তার ইয়ত্তা নেই। করোনার ছোবলে তছনছ হয়েছে সাজানো-গোছানো বহু সংসার। বাবা-মাকে হারিয়ে মাথার ওপর থেকে ছাদ হারিয়েছে বহু শিশু। কোনো শিশু বাবা-মায়ের একজনকে হারিয়েছে, আবার কোনো কোনো শিশু দু’জনকেই হারিয়েছে।
করোনায় আক্রান্ত হয়ে ভারতে মৃত্যু হয়েছে ৫ লাখের বেশি মানুষের। কিন্তু এর ফলে বাবা-মা দুজনকেই হারিয়েছে বা একজনকে হারিয়েছে ভারতের প্রায় ১৯ লাখ শিশু।
সম্প্রতি একটি সমীক্ষায় এ তথ্য উঠে এসেছে। এতে দেখা যাচ্ছে, কোনো কোনো পরিবারে এমনও হয়েছে— বাবা বা মায়ের কোনো একজনের মৃত্যুর কারণে বাবা বা মারা হয়েছে তিন থেকে চার জন। আবার এমন পরিবারও রয়েছে যেখানে একমাত্র শিশু সন্তানটি ছাড়া পরিবারের সবার মৃত্যু হয়েছে।
করোনার ছোবলে শিশুদের ভুগতে হয়েছে অনেক ক্ষেত্রে। অনেক পরিবারের জীবিকার পথ বন্ধ হয়েছে, চিকিৎসা সেবা থেকে বঞ্চিত হয়েছে, স্কুল বন্ধ হয়েছে।
যুক্তরাজ্যের লন্ডনের ইম্পেরিয়াল কলেজের প্রধান গবেষক জুলিয়েট আনউইনের মতে, কোভিড-১৯ এর কারণে বিশ্বে মৃত্যুর সংখ্যা রেকর্ড করায় কোভিডের কারণে অনাথ শিশুদের সংখ্যা আরও বাড়তে পারে।
এই সংখ্যা আরও বেশি হবে বলেও মনে করছেন তিনি। গবেষণায় শুধুমাত্র ২০২১ সালের অক্টোবর পর্যন্ত ডেটা নেওয়া হয়েছে।
সমীক্ষায় দেখা গেছে, মহামারির প্রথম ১৪ মাসের তুলনায় পরবর্তীকালে এই সংখ্যা প্রায় দ্বিগুণ বৃদ্ধি পেয়েছে। ১ লা মে ২০২১ থেকে ১ লা অক্টোবর ২০২১ এই সংখ্যা উল্লেখযোগ্য হারে বেড়েছে। কোভিডের কারণে যেসকল শিশু তাদের অভিভাবকদের হারিয়েছে তাদের মধ্যে প্রতি তিনজনে দুজনের বয়স ১০ থেকে ১৭ বছরের মধ্যে। এবং প্রতি চারজনে তিনজন শিশু তাদের বাবাকে হারিয়েছে এই মহামারি কালে।
করোনার ছোবলে শিশুদের ভুগতে হয়েছে অনেক ক্ষেত্রে। অনেক পরিবারের জীবিকার পথ বন্ধ হয়েছে, চিকিৎসা সেবা থেকে বঞ্চিত হয়েছে, স্কুল বন্ধ হয়েছে।
মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য এবং দক্ষিণ আফ্রিকার গবেষকরা ২০২০ সালের মার্চ থেকে শুরু হওয়া ২০ মাসের সময়কালে গবেষণাটি পরিচালনা করেছিলেন। তাতে দেখা গিয়েছে প্রায় ৫০ লক্ষের বেশি শিশু মহামারি কালে অনিশ্চিত ভবিষ্যতের মুখে পড়েছে। পেরু এবং দক্ষিণ আফ্রিকায় প্রতি ১০০০ শিশুর মধ্যে ৮ জন এবং ৭ জন তাদের হয় মা, না হয় বাবাকে হারিয়েছে। যদিও ভারত সরকার কোভিডের কারণে অনাথ হওয়া শিশুর সংখ্যা এখনও সামনে আনেনি।
ভারতের মন্ত্রীসভার বিবৃতি অনুসারে এই বছর ৫ই ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত তিন হাজার ৮৯০টি অনাথ শিশুর সংখ্যা নারী ও শিশু কল্যাণ মন্ত্রণালয়ের কাছে রিপোর্ট করা হয়েছে।
মন্ত্রণালয়ের তথ্য অনুসারে, কোভিডের দ্বিতীয় ঢেউকালে ৫৭৭ জন শিশু তাদের বাবা এবং মা দু’জনকেই হারিয়েছে।
ন্যাশনাল কমিশন ফর প্রোটেকশন অফ চাইল্ড রাইটস (এনসিপিসিআর) এর রিপোর্ট অনুসারে ২০২০ এপ্রিল থেকে জুন ২০২১ পর্যন্ত মহামারির কারণে অনাথ শিশুর সংখ্যা ৩ হাজার ৬৬১টি।
গত বছরের মে মাসে, নরেন্দ্র মোদী সরকার ঘোষণা করেছিল যে সমস্ত শিশু কোভিডের কারণে তাদের মা বাবা উভয়কেই হারিয়েছে তারা পিএম কেয়ার্স থেকে আর্থিক সহায়তা পাবে।
করোনায় সবেচেয় বেশি বাবা-মা হারিয়েছে পেরু ও দক্ষিণ আফ্রিকার শিশুরা। ইউএস সেন্টার ফর ডিজিজ কন্ট্রোল অব প্রিভেনশনের প্রধান গবেষক সুসান হিলিস জানিয়েছেন, প্রতি ৬ সেকেন্ডে একটি শিশু ঝুঁকির মধ্যে ছিল, যদি না তাকে সময়মতো সাহায্য করা হয়।
বিশ্লেষকরা বলেছেন, বিশ্বজুড়ে পরিবারগুলোর ওপর কিভাবে দীর্ঘস্থায়ী পরিণতি বহন করে আনছে করোনা মহামারি এই গবেষণায় সেক্ষেত্রে এক গুরুত্বপূর্ণ। একই সঙ্গে বিশ্বজুড়ে শিশুদের ভবিষ্যত মানসিক সুস্থতা ও মঙ্গলের বিষয়টিও নির্ধারণে সহায়ক। অভিভাবককে হারিয়ে একটি শিশু যে মানসিক ক্ষতের শিকার হয়, তা হতে পারে বিপর্যয়কর। এক্ষেত্রে এমন পরিস্থিতিতে হস্তক্ষেপ করা উচিত। আমাদেরকে এমন হস্তক্ষেপ করে এসব শিশুকে সুরক্ষিত রাখতে হবে।
এসডব্লিউ/এমএন/কেএইচ/১৬৫৮
আপনার মতামত জানানঃ