বিভিন্ন ধরনের অপরাধের সঙ্গে জড়িত থাকার দায়ে সৌদি আরবে একদিনে ৮১ জনের মৃত্যুদণ্ড কার্যকর করেছে। তাদের বিরুদ্ধে বিদেশি সন্ত্রাসী সংগঠনের আনুগত্য ও ভিন্নমতের ওপর বিশ্বাসের অভিযোগ রয়েছে। এটি গত বছরে পুরো সময়জুড়ে মৃত্যুদণ্ড কার্যকরের মোট সংখ্যাকে ছাড়িয়ে গেছে। আজ শনিবার সৌদির রাষ্ট্রায়ত্ত সংবাদ সংস্থা সৌদি প্রেস এজেন্সির (এসপিএ) বরাত দিয়ে বার্তা সংস্থা এএফপির এমনটি জানিয়েছে।
উপসাগরীয় দেশটির আধুনিক ইতিহাসে একদিনে সবচেয়ে বেশিসংখ্যক মৃত্যুদণ্ড দেওয়া হয়েছে। ২০২১ সালে সৌদিতে ৬৭টি ও ২০২০ সালে ২৭টি মৃত্যুদণ্ড কার্যকর করা হয়েছিল।
শনিবার সৌদি বার্তা সংস্থা এসপিএ জানিয়েছে, এসব ব্যক্তি বিভিন্ন অপরাধে দোষী সাব্যস্ত হয়েছেন। তারা নিরপরাধ নারী, শিশু ও পুরুষকে হত্যা করেছেন। আইএসআইএস, আল-কায়েদা ও হুতি বিদ্রোহীসহ বিভিন্ন বিদেশি সন্ত্রাসী সংগঠনের প্রতি আনুগত্য থেকে তারা অপরাধ করেছেন।
সন্ত্রাসী সংগঠনে যোগ দিতে তারা সংঘাতপ্রবণ অঞ্চলেও ভ্রমণ করেছেন। এসপিএ দাবি করেছে, দোষীদের আইনজীবী নিয়োগের অধিকার দেওয়া হয়েছিল। সৌদি বিচারিক প্রক্রিয়ার অধীন তাদের সম্পূর্ণ অধিকার দেওয়া হয়েছে।
প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, শনিবারের এই মৃত্যুদণ্ড কার্যকরের সংখ্যা ১৯৮০ সালের ঘটনাকে ছাপিয়ে গেছে। সে সময় মক্কার গ্র্যান্ড মসজিদ দখলে অভিযুক্ত ৬৩ জনকে শিরশ্ছেদে করে মৃত্যুদণ্ড কার্যকর করা হয়েছিল।
নিরাপত্তা কর্মকর্তাদের হত্যাচেষ্টা ও থানা-পুলিশকে হামলার লক্ষ্যবস্তু বানানোয় ৩৭ সৌদি নাগরিককে মৃত্যুদণ্ড দেওয়া হয়েছে। এর আগে ২০১৬ সালের জানুয়ারিতে সর্বশেষ গণফাঁসির আয়োজন করেছিল সৌদি। তখন বিখ্যাত এক শিয়ানেতাসহ ৪৭ জনকে বিচারিক হত্যা করা হয়েছিল। তারা সৌদি আরবে সরকারবিরোধী বিক্ষোভে অংশ নিয়েছিলেন।
২০১৯ সালে ৩৭ সৌদি নাগরিকের শিরশ্ছেদ করা হয়েছিল। তাদের অধিকাংশই ছিল সংখ্যালঘু শিয়া সম্প্রদায়ের। ২০১৮ সালে সাংবাদিক জামাল খাসোগিকে হত্যার পর সৌদি আরবের মানবাধিকার লঙ্ঘন নিয়ে বিশ্বজুড়ে ব্যাপক সমালোচনা হয়েছে।
জি-টোয়েন্টির নেতৃত্ব ছাড়ার পর থেকে ভিন্নমতামবলম্বীদের ওপর দমনপীড়নের অভিযোগ উঠেছে সৌদি সরকারের বিরুদ্ধে। একইসাথে ২০২০ সালের তুলনায় গত বছর হঠাৎ করে মৃত্যুদণ্ড কার্যকরের পরিমাণ বাড়িয়ে দিয়েছে সৌদি আরব।
উপসাগরীয় দেশটির আধুনিক ইতিহাসে একদিনে সবচেয়ে বেশিসংখ্যক মৃত্যুদণ্ড দেওয়া হয়েছে। ২০২১ সালে সৌদিতে ৬৭টি ও ২০২০ সালে ২৭টি মৃত্যুদণ্ড কার্যকর করা হয়েছিল।
২০২০ সালে বিশ্বের ধনীদেশগুলোর ফোরাম জি-টোয়েন্টির নেতৃত্বে ছিল সৌদি আরব। সেসময় অপ্রাপ্তবয়স্কদের মৃত্যুদণ্ড বাতিল এবং জনসমক্ষে বেত্রাঘাত নিষিদ্ধসহ কিছু পরিবর্তন আনার কথা জানিয়েছিল সৌদি সরকার।
অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনাল এক প্রতিবেদনে জানিয়েছে, জি-টোয়েন্টি প্রেসিডেন্সি ছাড়ার পর গত বছর আবার সেদেশে মানবাধিকারকর্মী ও ভিন্নমতাবলম্বীদের নিপীড়ন ও গত বছরের প্রথম ছয় মাসে মৃত্যুদণ্ড প্রদানের হার বেড়ে গেছে।
গত বছরের শুরু থেকে সেপ্টেম্বর পর্যন্ত সৌদি আরবে অন্তত ৪০ ব্যক্তিকে মৃত্যুদণ্ড দেওয়া হয়েছে৷ এর আগে সৌদি হিউম্যান রাইটস কমিশন নামের একটি মানবাধিকার সংস্থা জানিয়েছিল, ২০২০ সালে ২৭টি মৃত্যুদণ্ড দেওয়া হয়েছিল যা ছিল ২০১৯ সালের তুলনায় ৮৫ শতাংশ কম।
সংস্থাটি বলছে, গত বছরের জানুয়ারি থেকে জুলাই পর্যন্ত কমপক্ষে ৪০ জনের মৃত্যুদণ্ড কার্যকর করেছে সৌদি আরব। এর আগের বছর পুরোটা সময় যতজনের মৃত্যুদণ্ড কার্যকর করেছিল রিয়াদ, এই সংখ্যাটা তার চেয়ে অনেক বেশি।
২০২০ সালে প্রথমবারের মতো জি২০ সম্মেলনের নেতৃত্ব দিয়েছে সৌদি। এই সম্মেলনকে কেন্দ্র করে ওই বছর মৃত্যুদণ্ড কমিয়ে আনা হয়েছে বলে অভিযোগ রয়েছে। তবে জি২০ সম্মেলনের পর মৃত্যুদণ্ড কার্যকরের হার আবারও বেড়ে গেছে। ওই বছরের ডিসেম্বরেই ৯ জনের মৃত্যুদণ্ড কার্যকর করা হয়।
অ্যামনেস্টির দেয়া তথ্য অনুযায়ী, সৌদি সরকারের সমালোচনা, মানবাধিকার, নারী অধিকার নিয়ে কাজ করেছেন এমন অন্তত ৩৯ জন বর্তমানে কারাভোগ করছেন। শুধুমাত্র সৌদি সরকারের অর্থনৈতিক নীতির সমালোচনা করে টুইট করায় এক মানবাধিকার কর্মীকে ২০ বছরের কারাদণ্ড দেয়া হয়েছে।
মাঝেমধ্যে কিছু কিছু অধিকারকর্মীকে কারাগার থেকে মুক্তি দিলেও তাদের ওপর কঠোর নিষেধাজ্ঞা আরোপ করা হয়। এর মধ্যে প্রখ্যাত নারী অ্যাকটিভিস্ট লুজাইন আল-হাথলুলের ওপর পাঁচ বছরের ভ্রমণ নিষেধাজ্ঞা দিয়েছে দেশটির সরকার।
এসডব্লিউ/এমএন/কেএইচ/২৩৫৯
আপনার মতামত জানানঃ