আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিল আইএমএফ এই বছর বৈশ্বিক অর্থনীতির প্রবৃদ্ধির যে পূর্বাভাস আগে দিয়েছিল, তা আরও কমিয়েছে। এর অন্যতম কারণ হিসাবে সংস্থাটি করোনা ভাইরাসের ওমিক্রন প্রকরণের বিস্তারকেই উল্লেখ করেছে।
২০২০ সালে বিশ্বের প্রায় সব বড় অর্থনীতিরই সংকোচন হয়। সেই দুর্বল ভিত্তির ওপর দাঁড়িয়ে ২০২১ সালে অনেক দেশই ভালো করেছে। কিন্তু ২০২২ সালে বৈশ্বিক অর্থনীতি সেই গতি আবারও কিছুটা হারিয়ে ফেলবে বলে পূর্বাভাস দিয়েছে আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিল (আইএমএফ)।
আইএমএফের পূর্বাভাস, ২০২২ সালে বৈশ্বিক প্রবৃদ্ধির হার দাঁড়াতে পারে ৪ দশমিক ৪ শতাংশ। আর ২০২৩ সালে তা আরও কমে দাঁড়াতে পারে ৩ দশমিক ৮ শতাংশ। আর ২০২১ সাল নিয়ে আইএমএফের পূর্বাভাস, গত বছর বিশ্ব প্রবৃদ্ধির হার দাঁড়াতে পারে ৫ দশমিক ৯ শতাংশ।
বৈশ্বিক অর্থনৈতিক পূর্বাভাসের হালনাগাদে এই তথ্য দিয়েছে আইএমএফ।
প্রতিবেদনে জ্বালানী তেলের মূল্য বৃদ্ধি, ক্রমবর্ধমান মুদ্রাস্ফীতি এবং বিশ্বের বৃহত্তম অর্থনীতি যুক্তরাষ্ট্র এবং চীনের জন্য আগেকার পূর্বাভাসের চেয়ে আরো অনেক বেশী মন্দা এই বৈশ্বিক প্রবৃদ্ধির পূর্বাভাস কমে যাওয়ার কারণ হিসাবে উল্লেখ করা হয়েছে।
আইএমএফ তার প্রতিবেদনে বলেছে, ‘বিশ্ব অর্থনীতি ২০২২ সালে পূর্বের প্রত্যাশার চেয়ে দুর্বল অবস্থানে প্রবেশ করবে। নভেম্বরের শেষের দিকে ওমিক্রন প্রকরণের উত্থান এই সম্ভাব্য পথটিকে হুমকির মুখে ঠেলে দিয়েছে’।
১৯০টি দেশে ঋণদানকারী সংস্থাটি যুক্তরাষ্ট্রের জন্য তার বৃদ্ধির অক্টোবরে দেয়া পূর্বাভাস ৫.২% থেকে কমিয়ে ৪% করেছে। সংস্থাটি বলেছে, এটি যুক্তরাষ্ট্রের অর্থনীতির জন্য প্রবৃদ্ধির পূর্বাভাস কমিয়েছে, কারণ প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনের বিশাল বিল্ড ব্যাক বেটার সোশ্যাল পলিসি বিল কংগ্রেসে স্থবির হয়ে পড়েছে।
আইএমএফ বলেছে, যুক্তরাষ্ট্রের কেন্দ্রীয় ব্যাংকের কঠোর আর্থিক নীতি এবং সরবরাহ ধারাবাহিকতা বজায় রাখার সমস্যা, যা যুক্তরাষ্ট্রের নির্মাতারা এবং অন্যান্য ব্যবসায়ীদের জর্জরিত করেছে তাও সংশোধিত পূর্বাভাসের কারণ ছিল।
সংস্থাটি এই বছর চীনের প্রবৃদ্ধির প্রত্যাশা কমিয়ে ৪.৮% করেছে, যা গত বছরের ৮.১% পূর্বাভাসের চেয়ে নাটকীয়ভাবে কম এবং অক্টোবরের প্রত্যাশার চেয়ে প্রায় ১% কম।
গত বছর বিশ্ব অর্থনীতি প্রায় ৬% সম্প্রসারিত হওয়ার পরে, মঙ্গলবারের আইএমএফ এর রিপোর্টে প্রায় প্রতিটি দেশের জন্য প্রবৃদ্ধির প্রাক্কলন কমানো হয়েছে। এর মধ্যে একটি উল্লেখযোগ্য ব্যতিক্রম ছিল ভারত, যেখানে আইএমএফ তার প্রাক্কলিত বৃদ্ধির হার ০.৫% থেকে নয় শতাংশ বাড়িয়েছে।
২০২০ সালে বিশ্বের প্রায় সব বড় অর্থনীতিরই সংকোচন হয়। সেই দুর্বল ভিত্তির ওপর দাঁড়িয়ে ২০২১ সালে অনেক দেশই ভালো করেছে। কিন্তু ২০২২ সালে বৈশ্বিক অর্থনীতি সেই গতি আবারও কিছুটা হারিয়ে ফেলবে বলে পূর্বাভাস দিয়েছে আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিল (আইএমএফ)।
কেন প্রবৃদ্ধির হার কমে যাচ্ছে—এই প্রশ্নের জবাব অবশ্য খোঁজার চেষ্টা করেছে আইএমএফ। বিষয়টি হচ্ছে, বিশ্ব অর্থনীতির চালিকা শক্তি হচ্ছে যুক্তরাষ্ট্র ও চীন। কিন্তু এই দুই পরাশক্তি যেন ক্রমেই খেই হারিয়ে ফেলছে। ২০২১ সালে যুক্তরাষ্ট্রের প্রবৃদ্ধির হার দাঁড়াতে পারে ৫ দশমিক ৬ শতাংশ—এরপর তা আরও কমতে থাকবে—২০২২ সালে ৪ দশমিক ৪ ও ২০২৩ সালে ২ দশমিক ৬ শতাংশ। অন্যদিকে ২০২০ সালে বড় অর্থনীতিগুলোর মধ্যে কেবল চীন প্রবৃদ্ধির ধারা বজায় রাখতে পারলেও গতি হারাতে শুরু করেছে। ২০২১ সালে তাদের ৮ দশমিক ১ শতাংশ প্রবৃদ্ধি হওয়ার সম্ভাবনা আছে। এরপর তা কমে ২০২২ সালে ৪ দশমিক ৮ ও ২০২৩ সালে ৫ দশমিক ২ শতাংশ হতে পারে।
এ ছাড়া বড় দেশগুলোর মধ্যে চলতি অর্থবছরে ভারতের প্রবৃদ্ধির হার দাঁড়াতে পারে ৯ শতাংশ। ২০২২-২৩ অর্থবর্ষে হতে পারে ৭ দশমিক ১ শতাংশ, এর পরের অর্থবছরে তা দাঁড়াতে পারে ৭ শতাংশে।
মূলত করোনাভাইরাসের অমিক্রন ধরনের বাড়বাড়ন্তের কারণে এই পরিস্থিতি সৃষ্টি হতে পারে বলে আশঙ্কা করছে আইএমএফ। এ কারণে অনেক দেশ ইতিমধ্যে বিধিনিষেধ জারি করেছে। সেই সঙ্গে বৈশ্বিক সরবরাহব্যবস্থার সংকট চলছেই। জ্বালানির মূল্যবৃদ্ধি তো আছেই—এ সবকিছু বিশ্ব অর্থনীতিতে প্রভাব ফেলবে।
তবে আইএমএফ ধারণা করছে, এ বছর চাহিদা ও সরবরাহের ব্যবধান কমে আসার মধ্য দিয়ে উচ্চ মূল্যস্ফীতির ধারা কিছুটা প্রশমিত হবে। আর কেন্দ্রীয় ব্যাংকের মূল চ্যালেঞ্জ হলো, মূল্যস্ফীতির রাশ টেনে রাখার পাশাপাশি অর্থনৈতিক পুনরুদ্ধারের পালে হাওয়া লাগানো। এই বাস্তবতায় উন্নয়নশীল দেশগুলোর যে দুটি খাতে বেশি জোর দেওয়া উচিত সেগুলো হলো, স্বাস্থ্য ও সামাজিক নিরাপত্তা।
আইএমএফের প্রধান অর্থনীতিবিদ গীতা গোপীনাথ বলেন, আন্তর্জাতিক সহযোগিতার মাধ্যমে গণহারে কোভিড পরীক্ষা, টিকাদান ও চিকিৎসা নিশ্চিত করা গেলে করোনার রাশ টেনে ধরা সম্ভব।
এসডব্লিউ/এমএন/কেএইচ/২০১১
আপনার মতামত জানানঃ