কক্সবাজারের উখিয়া থেকে অন্তত ২০টি বাস রোহিঙ্গাদের নিয়ে রওনা হয়েছে নোয়াখালীর ভাসানচরের উদ্দেশ্যে। তবে জাতিসংঘ শরণার্থী সংস্থাসহ বিভিন্ন আন্তর্জাতিক সংস্থা সরকারের এই উদ্যোগ থেকে দূরত্ব রেখে চলেছে।
বুধবার এক বিবৃতিতে জাতিসংঘ বলেছে, রোহিঙ্গাদের ভাসান চরে নেওয়ার যে পরিকল্পনা সরকার করেছে, তার সঙ্গে জাতিসংঘের কোনো ধরনের সম্পৃক্ততা নেই। ভাসান চরে যাওয়ার ক্ষেত্রে রোহিঙ্গারা যেন সব তথ্য জেনে স্বাধীনভাবে সিদ্ধান্ত নিতে পারে, তা নিশ্চিত করতেও সরকারের প্রতি আহ্বান জানানো হয় ওই বিবৃতিতে।
বিবৃতিতে বলা হয়, ‘এই স্থানান্তর প্রক্রিয়ার প্রস্তুতিমূলক কার্যক্রমে, অথবা শরণার্থীদের শনাক্ত করার প্রক্রিয়ায় জাতিসংঘকে সম্পৃক্ত করা হয়নি। স্থানান্তরের সার্বিক কর্মকাণ্ড সম্পর্কে জাতিসংঘের কাছে পর্যাপ্ত তথ্য নেই।’ মানবাধিকার সংস্থা হিউম্যান রাইটস ওয়াচও (এইচআরডব্লিউ) বৃহস্পতিবার এক বিবৃতিতে রোহিঙ্গাদের ভাসানচরে স্থানান্তর বন্ধের আহ্বান জানিয়েছে।
৩ ডিসেম্বর ২০২০, বৃহস্পতিবার সকাল সাড়ে ১১টার দিকে উখিয়া কলেজের অস্থায়ী ট্রানজিট ঘাট থেকে রোহিঙ্গাদের নিয়ে বাসগুলো চট্টগ্রামের উদ্দেশে রওনা হয়। শুক্রবার নৌবাহিনীর তত্ত্বাবধানে এই রোহিঙ্গাদের ভাসানচরে নেওয়া হবে।
এর আগে সকালে আর্মড পুলিশ ব্যাটালিয়নসহ (এপিবিএ) আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যদের নিরাপত্তায় স্বেচ্ছায় ভাসানচরে যেতে আগ্রহী রোহিঙ্গারা কক্সবাজারের বিভিন্ন ক্যাম্প থেকে উখিয়া কলেজ ট্রানজিট ঘাটে জমা হয়। সেখানে তাদের স্বাস্থ্য পরীক্ষাসহ প্রয়োজনীয় সব পরীক্ষা হয়। পরে তাদের নিয়ে রওনা হয় বাসগুলো।
এপিবিএনের অতিরিক্ত পুলিশ মহাপরিদর্শক মোশারফ হোসেন বলেন, ‘স্বেচ্ছায় ভাসানচরে যেতে আগ্রহী রোহিঙ্গাদের একটি দল নিয়ে প্রথম ২০টি বাস বৃহস্পতিবার সকালে চট্টগ্রামের উদ্দেশে রওনা হয়েছে। সেখান থেকে শুক্রবার সকালে নৌ-বাহিনীর তত্ত্বাবধানে তাদের ভাসানচরে নিয়ে যাওয়া হবে। এই দলে আড়াই হাজার রোহিঙ্গার ভাসানচরে যাওয়ার কথা রয়েছে। আমরা ভাসানচরে সেভাবেই প্রস্তুতি নিয়েছি।’
তবে বাসগুলোতে কতজন রোহিঙ্গাকে ভাসানচরে নেওয়া হচ্ছে, সে বিষয়ে আনুষ্ঠানিকভাবে কিছু বলেননি শরণার্থী ত্রাণ ও প্রত্যাবাসন কমিশনার কার্যালয়ের কর্মকর্তারা।
স্থানীয়রা বলেছেন, রোহিঙ্গাদের ভাসানচরে স্থানান্তরের জন্য বুধবার রাতেই উখিয়ার কুতুপালং ক্যাম্প সংলগ্ন ঘুমধুম ট্রানজিট ক্যাম্পে নিয়ে আসা হয়। রাতেই উখিয়া ডিগ্রি কলেজ ক্যাম্পাসে জড়ো করা হয় কয়েক ডজন বাস। স্থানীয় মুদি দোকানি আবুল কালাম বলেন, বৃহস্পতিবার সকাল থেকে রোহিঙ্গাদের নিয়ে দুই দফায় ২০টি বাসকে তিনি ক্যাম্পাস ছেড়ে যেতে দেখেছেন।
ঘুমধুম ট্রানজিট ক্যাম্প থেকে উখিয়া ডিগ্রি কলেজ ক্যাম্পাস এলাকাজুড়ে ব্যাপক নিরাপত্তার ব্যবস্থা নিয়েছে আইন-শৃংখলা বাহিনী। সেখানে সাধারণ মানুষের চলাচলেও বিধি-নিষেধ আরোপ করা হয়েছে।
বাংলাদেশ সরকারের নিজস্ব অর্থায়নে ২৩১২ কোটি টাকা ব্যয়ে মোটামুটি ১৩ হাজার একর আয়তনের ওই চরে ১২০টি গুচ্ছগ্রামের অবকাঠামো তৈরি করে এক লাখের বেশি মানুষের বসবাসের ব্যবস্থা করা হয়েছে। মালয়েশিয়া যেতে ব্যর্থ হয়ে ফিরে আসা তিন শতাধিক রোহিঙ্গাকে সমুদ্র থেকে উদ্ধার করে আগেই ভাসানচরে নিয়ে রাখা হয়েছিল। এরপর গত ৫ সেপ্টেম্বর কক্সবাজারের শরণার্থী ক্যাম্প থেকে রোহিঙ্গাদের একটি প্রতিনিধি দলকে দেখার জন্য ভাসান চরে পাঠানো হয়। তারা ফেরার পর তাদের কথা শুনে রোহিঙ্গাদের একাংশ ভাসান চরে যেতে আগ্রহ প্রকাশ করে বলে জানানো হয় সরকারি কর্মকর্তাদের কাছ থেকে।
সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, ১২০টি ক্লাস্টার নিয়ে তৈরি ভাসানচর এক লাখ মানুষের আবাসনের জন্য পুরোপুরি প্রস্তুত। রোহিঙ্গা শরণার্থী ছাড়াও এখানে এনজিও কর্মকর্তা, দূতাবাসের কর্মকর্তা, উচ্চপদস্থ ব্যক্তিদের জন্য উন্নত ও আধুনিক ভবন নির্মাণ করা হয়েছে।
মিই/নসদ/২০৪০
আপনার মতামত জানানঃ