বিতর্কিত কৌশলগত এলাকা গোলান মালভূমিতে আগামী পাঁচ বছরের মধ্যে দখলদার ইহুদি বসতি দ্বিগুণ বাড়ানোর লক্ষ্য নির্ধারণ করেছে ইসরায়েল। রবিবার ইসরায়েল সরকার এই লক্ষ্য নির্ধারণ করে। ওই এলাকায় নিজেদের দখল শক্তিশালী করতেই এই উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে।
১৯৬৭ সালের যুদ্ধে ইসরায়েল সিরিয়ার কাছ থেকে গোলান মালভূমি দখল করে নেয়। তবে জাতিসংঘ এখনো একে সিরিয়ার অংশ হিসেবেই বিবেচনা করে থাকে।
ইসরায়েলি প্রধানমন্ত্রী নাফতালি বেনেত জানিয়েছেন, ইসরায়েল অধিকৃত সিরিয়ার ভূখণ্ড গোলান মালভূমিতে বসতির সংখ্যা দ্বিগুন করা হবে। এই লক্ষ্যে তার সরকার কয়েক লাখ ডলারের পরিকল্পনা করেছে।
রোববার গোলানে মন্ত্রিসভার এক বিশেষ বৈঠকে তিনি এই তথ্য জানান।
বেনেত বলেন, ২০১৯ সালে যুক্তরাষ্ট্রের সাবেক প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের প্রশাসনের এই ভূখণ্ডের ওপর ইসরায়েলের সার্বভৌমত্বের স্বীকৃতি এবং নতুন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন এখনই ইসরায়েলের এই অবস্থানের বিরোধিতা না করার পরিপ্রেক্ষিতেই ইসরায়েল এই অঞ্চলে বিনিয়োগ করছে।
তিনি বলেন, ‘এটিই আমাদের জন্য সময়। এটিই গোলান মালভূমির জন্য সময়।’
তিনি আরো বলেন, ‘বসতি স্থাপন করার সুযোগ নিয়ে দীর্ঘ ও অচল কয়েক বছরের পর, আজ আমাদের লক্ষ্য হলো গোলান মালভূমিতে ইসরায়েলের বসতি দ্বিগুন করা।’
নতুন পরিকল্পনায় পাঁচ বছরের মধ্যে ইসরায়েলি বসতি স্থাপনকারীদের জন্য সাত হাজার তিন শ’ নতুন ঘর তৈরি করা হবে।
মন্ত্রিসভায় অনুমোদিত পরিকল্পনা অনুযায়ী গোলান উপত্যকার মূল ইহুদি বসতি কাৎজরিনে সাত হাজার তিনশ’ আবাসিক ইউনিটের নির্মাণের কথা বলা হয়েছে। ইসরায়েলি প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের এক বিবৃতিতে বলা হয়, ‘গোলান উপত্যকায় আগামী কয়েক বছরে (ইসরায়েলি) অধিবাসীর সংখ্যা দ্বিগুণ করার অর্থ হলো ওই এলাকায় আরও ২৩ হাজার মানুষের বসতি বাড়বে।’
ওই বিবৃতিতে আরও জানানো হয়, পরিকল্পনা অনুযায়ী গোলানে নতুন দুইটি বসতিতে আরও চার হাজার বাড়ি নির্মাণের পরিকল্পনা রয়েছে। ওই এলাকায় প্রায় ২০ হাজার দ্রুজ জনগোষ্ঠীর মানুষ বসবাস করেন। এদের বেশিরভাগই নিজেদের সিরীয় বলে পরিচয় দিয়ে থাকেন।
১৯৬৭ সালের যুদ্ধে ইসরায়েল সিরিয়ার কাছ থেকে গোলান মালভূমি দখল করে নেয়। তবে জাতিসংঘ এখনো একে সিরিয়ার অংশ হিসেবেই বিবেচনা করে থাকে।
১৯৮১ সালে গোলান উপত্যকার প্রায় এক হাজার দুইশ’ বর্গকিলোমিটার এলাকা দখল করে ইসরায়েল। তবে এই দখল সম্প্রসারণকে স্বীকৃতি দেয় না আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়। কৌশলগতভাবে গুরুত্বপূর্ণ এলাকাটি ফিরে পেতে চায় সিরিয়া।
১৯৬৭ সালের মধ্যপ্রাচ্য যুদ্ধের সময় সিরিয়ার কাছ থেকে গোলান উপত্যকা দখল করে ইসরায়েল। ২০১৯ সালে ওই এলাকার ওপর ইসরায়েলি সার্বভৌমত্বকে স্বীকৃতি দেন তৎকালীন মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। বর্তমান মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন ওই সিদ্ধান্ত বদলাবেন এমন কোনও ইঙ্গিতও পাওয়া যাচ্ছে না।
১৯৬৭ সালের মধ্যপ্রাচ্য যুদ্ধে সিরিয়া থেকে গোলান মালভূমি দখল করে ইসরায়েল এবং ১৯৮১ সালে এটিকে নিজেদের ভূমির সঙ্গে সংযুক্ত করে। আন্তর্জাতিক আইন অনুসারে বিশ্বের বড় একটি অংশ এ কার্যক্রম বেআইনি বলে বিবেচনা করে।
উল্লেখ্য, গোলান মালভূমিতে ২৫ হাজারের মতো ইসরায়েলি বাস করে। আরও রয়েছে ২৩ হাজার সিরিয়ান দ্রুজ।
এ ভূমিতে ইসরায়েলের সার্বভৌমত্ব স্বীকার করে নেওয়া প্রথম দেশ হলো যুক্তরাষ্ট্র।
ইসরায়েল দীর্ঘদিন ধরে যুক্তি দিয়ে আসছে, কৌশলগতভাবে গোলান মালভূমিকে তারা সম্পূর্ণরূপে একীভূত করেছে। সিরিয়ায় ইরান ও তার মিত্রদের থেকে সুরক্ষা হিসেবে মালভূমির নিয়ন্ত্রণ প্রয়োজন। তবে বেনেতের নতুন এ পরিকল্পনা বাস্তবায়নের জন্য আট-দলীয় কোয়ালিশন মন্ত্রিসভার অনুমোদন প্রয়োজন।
গোলান মালভূমি বেশ বড় নয়। কিন্তু এর থেকে মাত্র ৪০ মাইল দূরে সিরিয়ার রাজধানী দামেস্ক শহর এবং দক্ষিণ সিরিয়ার একটি বড় অংশ স্পষ্ট দেখা যায়।
সে হিসেবে ভূখণ্ডটি সিরিয়ান সেনাবাহিনীর গতিবিধি পর্যবেক্ষণ করার জন্য এটা এক আদর্শ জায়গা। পার্বত্য এলাকা বলে সিরিয়ার সেনাবাহিনীর কোন সম্ভাব্য আক্রমণের পথে এটা একটা চমৎকার প্রাকৃতিক বাধা হিসেবে কাজ করে। তাছাড়া এটি প্রাকৃতিক পানির উৎস। গোলান মালভূমি থেকে পানি গড়িয়ে পড়ে জর্ডান নদীতে। আর এটি হচ্ছে ইসরায়েলের পানি সরবরাহের এক-তৃতীয়াংশের উৎস। জায়গাটি বেশ উর্বর এবং এখানে ফল ও আঙুরের চাষ হয়, পশুপালন হয়।
এসডব্লিউ/এমএন/কেএইচ/১৮৫৪
আপনার মতামত জানানঃ