মাদক সেবনে বাধা দেওয়ায় ঢাকার হাজারীবাগের একটি দুর্গা মন্দিরে দুই দফা হামলার ঘটনা ঘটেছে। এছাড়া এলাকার স্থানীয় বাসিন্দাদের ওপরও হামলা করেছে দুর্বৃত্তরা। শনিবার ও রোববার রাতে এ হামলা হয়।
হাজারীবাগ থানায় রোববার রাতে বিষয়টি জানানোর পর থানার ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা ঘটনাস্থলে যান। বিজিবি সদস্যদেরও সেখানে অবস্থান নিতে দেখা গেছে।
ঘটনার প্রত্যক্ষদর্শী স্থানীয়রা সংবাদমাধ্যমকে জানান, বিজিবির এক নম্বর গেটের কাছাকাছি ওই মন্দিরের পাশে নিয়মিত মাদক সেবন করে কিশোরদের একটি গ্রুপ। মন্দিরে যাওয়া তরুণীদের তারা উত্যক্ত করত। শনিবার মন্দির কর্তৃপক্ষ তাদের কর্মকাণ্ডের প্রতিবাদ জানালে রাতে মন্দির ও সংলগ্ন বাড়ি-ঘরে চড়াও হয় ওই কিশোররা।
এ ঘটনার রেশ ধরে রোববার রাতে আবারও হামলা চালায় দলটি।
স্থানীয় বাসিন্দা সুব্রত রাজবংশী সংবাদমাধ্যমকে বলেন, গত শনিবার রাতে স্থানীয় কয়েকজন যুবক স্থানীয় দুর্গামন্দিরের পেছনে নেশা করতে এলে বাধা দেওয়া হয়। এতে ক্ষিপ্ত হয়ে ওই যুবকেরা বাড়িঘরে হামলা করে। এ ঘটনার পর হাজারীবাগ থানায় মামলা করা হয়। এরপর রাতে আবারও হামলা করে তারা।
হাজারীবাগ থানার উপপরিদর্শক (এসআই) খায়রুল ইসলাম সংবাদমাধ্যমকে বলেন, নেশা করতে বাধা দেওয়ায় স্থানীয় কয়েকজন বখাটে যুবক মন্দিরের আশপাশের কয়েকটি বাড়িতে হামলা করেছে। জাতীয় জরুরি সেবা ৯৯৯ নম্বরের মাধ্যমে থানায় এই খবর আসে। খবর পেয়ে তারা ঘটনাস্থলে গিয়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণের চেষ্টা করেন। তবে এ ঘটনায় কেউ হতাহত হননি।
এ ঘটনায় জড়িত ব্যক্তিদের আইনের আওতায় আনার চেষ্টা চলছে বলে পুলিশ কর্মকর্তা খায়রুল জানিয়েছেন।
বিজিবির এক নম্বর গেটের কাছাকাছি ওই মন্দিরের পাশে নিয়মিত মাদক সেবন করে কিশোরদের একটি গ্রুপ। মন্দিরে যাওয়া তরুণীদের তারা উত্যক্ত করত। শনিবার মন্দির কর্তৃপক্ষ তাদের কর্মকাণ্ডের প্রতিবাদ জানালে রাতে মন্দির ও সংলগ্ন বাড়ি-ঘরে চড়াও হয় ওই কিশোররা।
রমনার ডিসি সাজ্জাদুর রহমান বলেন, ‘শনিবার চারটা ছেলে মন্দিরের পাশে ধূমপান কিংবা গাঁজা সেবন করছিল। তাদেরকে মন্দিরের লোকজন চলে যেতে বলে। ওই কিশোরদের মধ্যে একজন গতকাল কয়েক জনকে সঙ্গে নিয়ে কীর্তন চলাকালীন মন্দিরে এসে হইচই করে এবং ইটপাটকেল ছোড়ে। তথ্য পেয়ে আমরা ঘটনাস্থলে এসে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণ করি।’
ডিসি জানান, হামলাকারীদের মন্দিরের লোকজন সুনির্দিষ্টভাবে চিহ্নিত করতে পারেনি। সিসিটিভি ফুটেজ দেখে এবং প্রত্যক্ষদর্শীদের সঙ্গে কথা বলে হামলাকারীদের শনাক্তের চেষ্টা হচ্ছে।
হামলাকারীদের দ্রুত চিহ্নিত করে আইনের আওতায় আনা হবে বলেও জানান সাজ্জাদুর রহমান।
হামলার খবর পেয়ে ঘটনাস্থলে যান স্থানীয় জনপ্রতিনিধি ও পুলিশের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা। তারা বিক্ষুব্ধ এলাকাবাসীর সঙ্গে কথা বলে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণের চেষ্টা করেন।
বিচারহীনতা বা বিচার না হওয়ার সংস্কৃতি দুষ্কৃতকারীদের ‘উৎসাহিত করছে’ এবং প্রায়ই তারা সাম্প্রদায়িক সহিংসতার ঘটনাগুলো ঘটাচ্ছে বলে জানান সংশ্লিষ্ট বিশেষজ্ঞরা।
তারা বলেন, আমাদের দেশে যে কোনো সংখ্যালঘু নির্যাতনের ঘটনায় রাজনৈতিক মাঠ গরম থাকে বেশ কিছু দিন। পক্ষে-বিপক্ষে, অভিযোগ পাল্টা-অভিযোগ চলতেই থাকে। সকল সামাজিক সাংস্কৃতিক সংগঠন, সুশীল সমাজ রাস্তায় নামে এবং প্রতিকার খোঁজার চেষ্টা করে। তেমন সমাধান পাওয়া যায় না। মামলা হয়; কিন্তু বিচার হয় না। ফলে থামছে না নির্যাতনের ঘটনাও। অভিযোগ, নেপথ্যে ক্ষমতাসীনরা জড়িত থাকায় তাদেরকে আইনের আওতায় আনা যায় না।
বিশেষজ্ঞরা আরও বলেন, অপরাধী যেই হোক, তাকে বিচারের আওতায় আনা হবে’— এরকম আপ্তবাক্য মানুষ আর শুনতে চায় না। আমাদের দেশে এ পর্যন্ত কোনো সংখ্যালঘু হামলা মামলার বিচার হয়নি, এটাই সত্য। ফলে আক্রান্ত জনগোষ্ঠীর জান-মালের নিরাপত্তার কোনো সুরাহা হয় না। নিরাপত্তাহীনতা তাকে তাড়িয়ে বেড়ায়।
এ দেশের সকল ধর্মের মানুষ কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে যুদ্ধ করেছে একটি অসাম্প্রদায়িক রাষ্ট্রের জন্য। এ দেশের প্রতি ইঞ্চি মাটি যুদ্ধ করে অর্জন করা। সেই মাটির অধিকার আমাদের সকলের। কেবল ধর্মের কারণে সেই অধিকারবোধ নষ্ট হতে দেওয়া যাবে না। যে কোনো মূল্যে এই ঐক্যের বোধ জাগ্রত রাখতে হবে। উন্নয়নের প্রকৃত সোপান সেখানেই।
এসডব্লিউ/এমএন/কেএইচ/১৬২৩
আপনার মতামত জানানঃ