একবার ভাবুন তো আপনি বসে আছেন আপনার বাড়ির বসার ঘরে। টিভি দেখছেন। হঠাৎ টিভি স্ক্রিনে ভেসে উঠল আপনার পছন্দের কোনো আইসক্রিম। সেই আইসক্রিম খেতে ইচ্ছে করলেও চেয়ে চেয়ে দেখা ছাড়া আর কিছুই করার থাকে না আপনার।কিন্তু যদি ঘরে বসেই সেই আইসক্রিমের স্বাদ নিতে পারেন তাহলে কেমন হয়?
কল্পনা নয়, এবার বহুমাত্রিক অভিজ্ঞতা হিসেবে টিভি স্ক্রিনে জিহ্বা দিয়ে খাবারের স্বাদ নিতে পারবেন দর্শকরা। জাপানের এক অধ্যাপক তৈরি করেছেন প্রোটোটাইপ এই চেখে দেখার উপযোগী ‘টেলি-টেস্ট’ টিভি। এক প্রতিবেদনে এই তথ্য জানিয়েছে বার্তাসংস্থা রয়টার্স।
১০০ বছর আগে অর্থাৎ ১৯২০ সালের শেষের দিকে তৈরি হয়েছিল প্রথম টেলিভিশন। তবে তা ছিল কেবল পরীক্ষামূলক স্তরে, ঘরে ঘরে সাদা-কালো টিভি আসতে আসতে দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ পার হয়ে গিয়েছিল। এরপর থেকে এতদিন পর্যন্ত টেলিভিশনে শুধুমাত্র দর্শন ও শ্রবণ— এই দুই ইন্দ্রিয় উপভোগ করা যেত।
তবে এই দু’টি ইন্দ্রিয়ের সঙ্গে মানুষের আরেকটি ইন্দ্রিয়কেও এবার স্পর্শ করতে চলেছে টিভি। সম্প্রতি এমনই একটি টিভি আবিষ্কার করেছে জাপান।
জাপানের একজন অধ্যাপক এমন এক প্রোটোটাইপ টেলিভিশন বানিয়েছেন, যা মানুষের স্বাদ ইন্দ্রিয়কেও তৃপ্ত করবে। অর্থাৎ টেলিভিশনের পর্দায় কোনো খাবারের ছবি দেখালে, দর্শকরা সেই টিভির পর্দা জিহ্বা দিয়ে চেটে ওই খাবারের স্বাদ পেতে সক্ষম হবেন। এই টেলিভিশন মানুষের টিভি দেখার অভিজ্ঞতা আরও এক ধাপ এগিয়ে দেবে বলে আশা করা হচ্ছে।
জাপানি অধ্যাপকের নির্মিত এই টিভির নাম ‘টেস্ট দ্য টিভি’। একটি নির্দিষ্ট খাবারের স্বাদ আনতে ১০ ধরনের ফ্লেভারের ক্যানিস্টার মিলিয়ে স্প্রে করা হয় এখানে। এরপর ফ্লেভারের নমুনাটি সমতল টিভি স্ক্রিনের উপর একটি হাইজেনিক ফিল্ম হিসেবে বসিয়ে দেওয়া হয় যা দর্শকেরা এসে চেখে দেখতে পারেন।
মেইজি বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক হোমেই মিয়াশিতা বলেন, কোভিড-১৯ মহামারির সময়কালে এ ধরনের প্রযুক্তির মাধ্যমে মানুষ বাইরের দুনিয়ায় সাথে আরও বেশি মিথস্ক্রিয়া করতে পারবে।
জাপানের একজন অধ্যাপক এমন এক প্রোটোটাইপ টেলিভিশন বানিয়েছেন, যা মানুষের স্বাদ ইন্দ্রিয়কেও তৃপ্ত করবে। অর্থাৎ টেলিভিশনের পর্দায় কোনো খাবারের ছবি দেখালে, দর্শকরা সেই টিভির পর্দা জিহ্বা দিয়ে চেটে ওই খাবারের স্বাদ পেতে সক্ষম হবেন।
তিনি বলেন, ‘মানুষ যেন ঘরে বসেই অনেকটা রেস্টুরেন্টে খেতে খেতে টিভি দেখার অনুভূতি পায়, সে উদ্দেশ্যেই এই টিভি বানানো হয়েছে’।
অধ্যাপক মিয়াশিতা একাই নন, তার দলের আরও ৩০ জন শিক্ষার্থীর সবাই বিভিন্ন ফ্লেভারযুক্ত ডিভাইস তৈরি করেছেন। এসব ডিভাইসের মধ্যে এমন কাঁটাচামচও আছে যা খাবারকে আরও সুস্বাদু করে তোলে!
অধ্যাপক হোমি মিয়াশিতার দাবি, যন্ত্রটি তৈরির ক্ষেত্রে তার লক্ষ্য ছিল ঘরে বসেও যেন মানুষ বিশ্বের অন্য প্রান্তের কোনো রেস্তোরাঁয় খাওয়ার মতো অভিজ্ঞতা লাভ করতে পারেন, সেটা সম্ভব করা। আর এই কাজে তাকে সহায়তা করেছেন মেইজি বিশ্ববিদ্যালয়ের ৩০ শিক্ষার্থীর একটি দল।
এটি বাণিজ্যিকভাবে তৈরি করতে প্রায় ১ লাখ জাপানি ইয়েন (৮৭৫ মার্কিন ডলার) খরচ হবে। বাংলাদেশি মুদ্রায় এর পরিমাণ ৭৫ হাজার টাকা।
এছাড়াও, স্প্রে প্রযুক্তির মাধ্যমে এক টুকরো টোস্টেড রুটির মধ্যেও কিভাবে পিজ্জা বা চকোলেটের স্বাদ আনা যায়, তেমন ডিভাইস তৈরির বিষয়ে বিভিন্ন কোম্পানির সাথে আলোচনাও চালিয়ে যাচ্ছেন মিয়াশিতা।
মিয়াশিতার উদ্ভাবনী চোখের স্বপ্ন এখানেই শেষ নয়। ভবিষ্যতে তিনি এমন একটি প্ল্যাটফর্ম তৈরি করতে চান যেখানে দুনিয়ার নানা প্রান্তের নানা স্বাদ ডাউনলোড করে উপভোগ করা যাবে, ঠিক যেমনটা গানের ক্ষেত্রে করি আমরা!
টিটিটিভি ঠিক কতটা কার্যকরী, গণমাধ্যমের সামনে তারই উদাহরণ দেখিয়েছেন মেইজি বিশ্ববিদ্যালয়য়ের জনৈক ছাত্রী। তিনি জানান যে তিনি চকোলেটের স্বাদ পেতে চান টিভিতে। কয়েকবার চেষ্টা করার পর একটি অটোমেটেড ভয়েস তার এই চাহিদার পুনরাবৃত্তি করে এবং প্লাস্টিক শিটের ওপর কিছু নমুনা স্প্রে করে দেওয়া হয়। ব্যস! পেয়ে গেলেন চকোলেটের স্বাদ!
এসডব্লিউ/এমএন/কেএইচ/১৫৩৫
আপনার মতামত জানানঃ