সাড়ে ছয় কোটি বছর আগেই দুনিয়া থেকে বিদায় নিয়েছে বিশাল দেহের বিভিন্ন প্রজাতির এক একটি ডাইনোসর। ডাইনোসর নিয়ে কৌতূহলের শেষ নেই জনমনে। বিজ্ঞানীরাও এ নিয়ে দিনের পর দিন গবেষণা চালিয়ে যাচ্ছেন। বিভিন্ন সময় বিশ্বের নানা প্রান্ত থেকে উদ্ধার হয়েছে ডাইনোসরের জীবাশ্ম। উন্মোক্ত হয়েছে অনেক রহস্য। তবে মানুষ যে তাদের সম্বন্ধে প্রায় কিছুই জেনে উঠতে পারেনি, তা প্রমাণিত হচ্ছে প্রতিনিয়ত।
প্রাগৈতিহাসিক বিলুপ্ত প্রাণীটিকে নিয়ে মানুষের আগ্রহের শেষ নেই। তাই বিজ্ঞানীরাও নিমগ্ন গবেষণায়। সম্প্রতি চীনের বিজ্ঞানীরা খুঁজে পেয়েছেন নিখুঁতভাবে সংরক্ষিত একটি ডাইনোসরের ভ্রূণ।
এটি পাওয়ার পর তারা জানিয়েছেন, মুরগির ডিম থেকে বাচ্চা ফুটে বের হওয়ার ঠিক আগ মুহূর্তে ভ্রূণটি যেমন থাকে তেমনি অক্ষত আছে ডাইনোসরের এই ভ্রূণটি।
আজ বুধবার বিবিসি জানায়, ডাইনোসরের যে ভ্রূণটি দক্ষিণ চীনের গাঞ্জোতে আবিষ্কৃত হয়েছে, তা কমপক্ষে ৬৬ মিলিয়ন বছরের পুরনো বলে মনে করছেন গবেষকরা।
ধারণা করা হচ্ছে, এটি একটি দাঁতহীন থেরোপড ডাইনোসর বা ওভিরাপ্টোরোসর। এর নামকরণ করা হয়েছে ‘বেবি ইংলিয়াং।’
বার্তা সংস্থা এএফপিকে গবেষক ড. ফিওন ওয়াইসুম মা বলেছেন, ‘এটি ইতিহাসে পাওয়া সেরা ডাইনোসর ভ্রূণ। যা ইঙ্গিত দেয়, আধুনিক পাখিদের মধ্যে এই ধরনের আচরণ প্রথম তাদের ডাইনোসর পূর্বপুরুষদের মধ্যে বিকশিত হয়েছিল।’
আবিষ্কারটি গবেষকদের ডাইনোসর এবং আধুনিক পাখির মধ্যে যোগসূত্র সম্পর্কে আরও বেশি জানার সুযোগ দিয়েছে। জীবাশ্মটি দেখায় যে, ভ্রূণটি টাকিং নামে পরিচিত কুঁকানো অবস্থানে ছিল। যা পাখিদের ডিম ফোটার কিছুক্ষণ আগে দেখা যায়।
ওভিরাপ্টোরোসরস অর্থ ডিম চোর টিকটিকি বা পালকযুক্ত ডাইনোসর। যারা ক্রিটেসিয়াস যুগের শেষের দিকে ১০০ মিলিয়ন থেকে ৬৬ মিলিয়ন বছর আগে বর্তমান এশিয়া এবং উত্তর আমেরিকাতে বাস করতো।
শিশু ইংলিয়াং মাথা থেকে লেজ পর্যন্ত ১০.৬ ইঞ্চি (২৭ সেমি) লম্বা। এটি চীনের স্টোন নেচার হিস্ট্রি মিউজিয়ামে একটি ৬.৭ ইঞ্চি লম্বা ডিমের ভেতরে বিশ্রাম নিচ্ছে। ২০০০ সালে ডিমটি প্রথম উন্মোচিত হয়েছিল। এরপর ১০ বছরের জন্য এটিকে স্টোরেজে সংরক্ষণ করে রাখা হয়।
মুরগির ডিম থেকে বাচ্চা ফুটে বের হওয়ার ঠিক আগ মুহূর্তে ভ্রূণটি যেমন থাকে তেমনি অক্ষত আছে ডাইনোসরের এই ভ্রূণটি।
জাদুঘরে নির্মাণ কাজ শুরু ও পুরানো জীবাশ্মগুলোকে সাজানোর সময় ওই ডিমের দিকে গবেষকদের নজর পড়ে এবং তারা ধারণা করছিলেন যে, এর ভেতর ভ্রূণ আছে।
ভ্রূণটির শরীরের কিছু অংশ এখনো পাথরে ঢাকা। এর সম্পূর্ণ কঙ্কালের চিত্র তৈরি করতে গবেষকরা উন্নত স্ক্যানিং কৌশল ব্যবহার করবেন বলে জানা গেছে।
পৃথিবী থেকে ডাইনোসর বিদায় নিয়েছে বহু আগেই। তবে অতিকায় প্রাণীটি নিয়ে মানুষের আগ্রহের কমতি নেই। বিভিন্ন সময় বিশ্বের নানা প্রান্ত থেকে উদ্ধার হয়েছে ডাইনোসরের জীবাশ্ম। উন্মোক্ত হয়েছে অনেক রহস্য।
বিশাল শরীর আর দাপুটে মেজাজ নিয়ে প্রায় ১৭ কোটি বছর পৃথিবীতে রাজত্ব করেছে ডাইনোসর। পৃথিবীর বাস্তুতন্ত্রের প্রাগৈতিহাসিক অধিবাসী এবং বৈজ্ঞানিকদের অনুমান প্রভাবশালী প্রাণী এরা। প্রথম ডাইনোসরের বিবর্তন হয়েছিল আনুমানিক ২৩ কোটি বছর পূর্বে। কোটি কোটি বছর আগে তা বিলুপ্তও হয়ে গিয়েছে।
২৩১ থেকে ২৪৩ মিলিয়ন (২৩.১-২৪.৩ কোটি) বছরের মধ্যে ডাইনোসরের প্রথম আবির্ভাব। ১৭.৭ কোটি বছর ধরে পৃথিবীতে এদের বিচরণ ছিল। পাখিসদৃশ ডাইনোসর ছাড়া ৬ কোটি ৫৫ লাখ বছর আগে এদের বিলুপ্তি ঘটে। সে সময় ঠিক কী ঘটেছিল, বিজ্ঞানীরা সে বিষয়ে পুরো একমত নন। কিন্তু এই বিলুপ্তির পেছনে উল্কাপাত বা গ্রহাণুর আঘাতকে বেশ বড় করে দেখা হয়। এ ছাড়া অগ্ন্যুত্পাত থেকে রাসায়নিক নিঃসরণ, জলবায়ু পরিবর্তনসহ অন্য কারণগুলোও বিবেচনা করা হয়।
ধারণা করা হয়, ৬ কোটি ৬০ লাখ বছর আগে অন্তত ১০-১৫ কিলোমিটার প্রশস্ত গ্রহাণুর আঘাতের পৃথিবী থেকে ডাইনোসর বিলুপ্ত হয়ে যায়। কিন্তু গত বছর যুক্তরাজ্যের ইউনিভার্সিটি অব রিডিং ও ব্রিস্টলের বিজ্ঞানীরা ডাইনোসরের ফসিলের পরীক্ষা-নিরীক্ষা করে বলেন, ওই উল্কাপাত বা গ্রহাণুর আঘাতের অন্তত ৫ কোটি বছর আগেই ডাইনোসরদের বিলুপ্তির প্রক্রিয়া শুরু হয়েছিল। গ্রহাণুর আঘাতে সেটি শেষ হয় মাত্র। পরিবর্তিত পৃথিবীর সঙ্গে খাপ খাইয়ে নিতে না পারার কারণেই ডাইনোসর বিলুপ্ত হয়ে যাচ্ছিল বলে তারা মনে করেন।
বিজ্ঞানীরা বলছেন, ডাইনোসরের জন্মের সময় পৃথিবী ছিল উষ্ণ। কিন্তু দিনে দিনে পৃথিবী শীতল হয়ে আসতে শুরু করে। সমুদ্রের পানির উচ্চতাও নেমে যেতে শুরু করে। এর ফলেই ডাইনোসর বিলুপ্ত হতে শুরু করে। ডাইনোসরের সঙ্গে স্তন্যপায়ী প্রাণীর জন্ম অনেকটা একই সময়ে হলেও স্তন্যপায়ী প্রাণীরা শীতল পৃথিবীর সঙ্গে খাপ খাইয়ে নেয়।
এসডব্লিউ/এমএন/কেএইচ/১৮২২
আপনার মতামত জানানঃ