জীবজগতে হাজার হাজার প্রজাতির প্রতি কৌতূহলের সীমা নেই মানুষের। বহু প্রাণী আজ পৃথিবী থেকে সম্পূর্ণ অবলুপ্তও হয়ে গিয়েছে। কিন্তু কেমন করে বেঁচে ছিল সেসব প্রাণী, তাদের জীবনযাপন কী রকম ছিল, জীববৈচিত্রের উপর কতটা প্রভাব বিস্তার করেছিল সেই সব বিচার বিশ্লেষণে মানুষের কৌতূহলের ধরন থাকে ভিন্ন।
জীবিত প্রাণীগুলিকে নিয়ে আগ্রহ এবং শিক্ষার পাশাপাশি বিলুপ্ত প্রাণী সম্পর্কেও জানার চেষ্টা মানুষের প্রবল। বিশেষ করে বিজ্ঞানী ও বিজ্ঞান-শিক্ষার্থীদের। সেরকম একটি প্রাণী ডাইনোসর। পৃথিবীতে মানুষের জন্মের বহুকাল আগে বিলুপ্ত এই অতিকায় প্রাণীদের সম্পর্কে বলা যায় মানুষের আগ্রহ এখনও তুঙ্গে। আজও সকল বয়সী মানুষের আগ্রহের কেন্দ্রবিন্দুতে রয়েছে প্রাণীটি।
অবাক করা নানা বৈশিষ্ট্য এবং প্রাণীটি সম্বন্ধে নিত্যনতুন তথ্য আবিষ্কার মানুষকে অসীম আগ্রহের কেন্দ্রবিন্দুতে ধরে রেখেছে আজও। সাম্প্রতিক বছরগুলোতেও ডাইনোসর নিয়ে চলেছে বিরামহীন গবেষণা। সম্প্রতি একটি গবেষণায় উঠে এসেছে নতুন তথ্য। এই তথ্যগুলি ডাইনোসরের বিলুপ্তি ও বিবর্তনের ইতিহাসকে নতুন করে বুঝতে সাহায্য করবে।
ভারত উপমহাদেশ জুড়ে ছড়িয়ে আছে নানা বৈচিত্র্য। সম্প্রতি ভারতে পাওয়া গিয়েছে ডাইনোসরের জীবাশ্ম। রাজস্থানের একটি রাজ্য জয়সলমীরে ডাইনোসরের জীবাশ্মের সন্ধান পাওয়া গিয়েছে। যা কিনা ১৬ কোটি ৭০ লাখ বছরের পুরনো উদ্ভিদভোজী ডাইনোসরের। শিলা অনুসন্ধান ও খননের সময় জীবাশ্মটি আবিষ্কৃত হয়েছিল।
২০১৮ সালে জিওলজিক্যাল সার্ভে অফ ইন্ডিয়া (GSI), রাজস্থানের জয়সালমিরের পাথুরে জায়গায় একটি জীবাশ্ম অনুসন্ধান কার্যক্রম শুরু করে। সেখানে ডাইনোসর এবং তাদের সমসাময়িক প্রাণীদের জীবাশ্ম মিলতে পারে বলে অনুমান করেন বিজ্ঞানীরা।
থর মরুভূমিতে খনন কার্য চালানোর সময় জিএসআই এবং আইআইটি রুরকি দলের সদস্যদের সম্পূর্ণ নতুন প্রজাতির, দীর্ঘ-গলাযুক্ত ডাইনোসরের জীবাশ্মের উপস্থিতি চোখে পড়ে। বিজ্ঞানীদের অনুমান ওই জীবাশ্ম প্রাগৈতিহাসিক যুগের। প্রায় ১৬৭ মিলিয়ন বছর আগে বিশ্বে দাপিয়ে বেড়াত ওই প্রজাতি ডায়নোসর।
এই প্রজাতির ডায়নোসরের জীবাশ্ম প্রথমবার মিলেছে ভারতেই। যেহেতু থর মরুভূমি থেকে এই প্রজাতির ডায়নোসরের জীবাশ্ম মিলেছে ও অনুমান করা হচ্ছে এটির উৎপত্তি ভারতেই হয় হয়েছিল তাই এটির নামও রাখা হয়েছে সামঞ্জস্যপূর্ণ ভাবে। নাম দেওয়া হয়েছে ‘থারোসরাস ইন্ডিকাস’।
এই প্রজাতির ডায়নোসরের জীবাশ্ম গবেষণায় নতুন মাত্রা যোগ করেছে তা বলার অপেক্ষা রাখে না। এখনও পর্যন্ত যতটুকু জানা গিয়েছে তাতে অনুমান এটি বিশ্বের সবথেকে প্রাচীন ‘ডিক্রেইওসরাইডস’। বিশ্বের প্রাচীন ‘ডিপ্লোডোকয়েড’ (Diplodocoid) (বিশাল চেহারা সরীসৃপ প্রজাতির প্রাণী)-বৃহত্তর গোষ্ঠীর মধ্যে রয়েছে ‘Dicraeosaurids’ ও ‘sauropod’।
বিজ্ঞানীদের মতে ‘ডিক্রেওসরাস’ (Dicraeosaurus) ডাইনোসরের জীবাশ্ম উত্তর ও দক্ষিণ আমেরিকা, আফ্রিকা, চিনে পাওয়া গিয়েছিল আগে। ১৬৬-১৬৪ মিলিয়ন বছরের প্রাচীন ‘ডিক্রেইওসরাস’ জীবাশ্মের সন্ধানে পরে আরও পরীক্ষা-নিরীক্ষা চালানো হয়।
তবে বর্তমানে প্রথমবার ‘ভারতীয় সৌরোপডের’ আবিষ্কার থেকে প্রমাণ হয় যে আমাদের দেশেও এক সময় প্রাচীনতম ‘ডিক্রেইওসরাস’-এর ঠিকানা ছিল। ভারতের বুকেই লেখা রয়েছে বিবতর্নের ইতিহাসের নতুন অধ্যায়।
টাইমস অব ইন্ডিয়ার প্রতিবেদন অনুসারে, ডাইনোসরের জীবাশ্মের এই যুগান্তকারী আবিষ্কারটি প্রথম ২০১৮ সালে করা হয়েছিল। আবিষ্কারের পর ছয় জন বিজ্ঞানীর একটি দল এটি নিয়ে গবেষণা করেন। তাদের প্রায় পাঁচ বছর সময় লেগেছিল অধ্যয়ন করতে। ব্যাপক গবেষণার পরে, জানা গিয়েছে যে, ডাইনোসরের এই বিশেষ প্রজাতিটি আগে মানুষের কাছে অজানা ছিল। ভারতের থার মরুভূমির নাম আনুসারে ডাইনোসরের জীবাশ্মটিকে ‘থারোসোরাস ইন্ডিকাস’ নামকরণ করা হয়েছে।
ভারতে ডাইনোসরের জীবাশ্মের এই আবিষ্কার প্রথম নয়। এর আগেও ভারতের নর্মদা উপত্যকায় মোট ২৫৬টি জীবাশ্ম ডিম পাওয়া গিয়েছিল। এই ডিমগুলো টাইটানোসর্সের ছিল। যা পৃথিবীর সর্বকালের বৃহত্তম ডাইনোসর।ভারত ডাইনোসরের বিবর্তনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছিল।
এসদব্লিউএসএস১৯১৫
আপনার মতামত জানানঃ