চীনের প্রত্নতত্ত্ববিদরা সম্প্রতি ৮ হাজার বছরের পুরনো মদ খুঁজে পেয়েছেন। আন্তর্জাতিক গবেষক মহলে এই নিয়ে রীতিমতো শোরগোল পড়ে গিয়েছে। খবর এশিয়ানেট নিউজ।
গত শুক্রবার ৮ হাজার বছরের পুরনো মদের সন্ধান পেয়েছেন চীনের প্রত্নতত্ত্ববিদরা। হেনান প্রদেশের পেইলিগ্যাং এলাকায় পাওয়া গিয়েছে এই মদ। মাটির পাত্রে রাখা ছিল বহু বছরের পুরনো এই মদ। চীনের অত্যন্ত পুরনো জনবসতি পেইলি গ্যাংয়ে প্রাপ্ত এই মদ কার্যত ৮ হাজার বছরের বেশি পুরনো হতে পারে বলে মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা।
মনে করা হচ্ছে, মদ রাখার জন্য বিশেষভাবে মাটির পাত্রগুলি তৈরি করা হত। আর তা একবারই মদ তৈরির জন্য ব্যবহার করা হত। এটা থেকে মদ পান করা হত। খালি হয়ে যাওয়ার পর তা ফেলে দেয়া হত। সেই সময় নাকি মদ তৈরির জন্য লাল রঙের অ্যালকোহল দ্রবণ মোনাস্কাস এবং ক্লিস্টোথেসিয়া ব্যবহার করা হত।
ভাত থেকে তৈরি স্টার্চের উপাদনও পাওয়া গিয়েছে আট হাজার বছরের এই চীনা মদে। মদের এই পাত্রগুলি খুবই যত্ন সহকারে রাখা হয়েছে। বিশেষজ্ঞরা তা খতিয়ে দেখবেন বলেই জানান চাইনিজ অ্যাকাডেমি অফ সোশ্যাল সায়েন্স প্রতিষ্ঠানের অধীনস্থ প্রত্নতত্ত্ব বিভাগের সহকারী গবেষক লি ইয়ংকিয়াং।
এর আগে জর্জিয়াতেও প্রায় আট হাজার বছরের পুরনো মদ পাওয়া গিয়েছিল। সেখানকার দু’টি স্থানে এই মদের সন্ধান পান গবেষকরা। মদ রাখার পাত্রের যে ভাঙা অংশ পাওয়া গিয়েছিল তাতে টারটারিক অ্যাসিডের অস্তিত্ব পাওয়া গিয়েছিল। গবেষকদের অনুমান, প্রাচীনকালে আঙুরের রস ব্যবহার করে সেখানকার মানুষজন মদ তৈরি করতেন। অর্থাৎ দুই প্রদেশের মদের উপকরণে বিস্তর ফারাক রয়েছে।
এদিকে সম্প্রতি মিসরে পাঁচ হাজারের বছরেরও বেশি সময় আগের একটি মদের কারখানার সন্ধান পাওয়ার দাবি জানিয়েছে একদল প্রত্নতাত্ত্বিক।
নর্থ আবিডোজ শহরের সহাজ এলাকায় মিসর ও যুক্তরাষ্ট্রের প্রত্নতাত্ত্বিকরা যৌথভাবে মাটির নিচে বিশালাকৃতির কারখানাটি আবিষ্কার করেছেন বলে জানিয়েছেন।
বিষয়টি নিশ্চিত করে মিসরীয় পর্যটন মন্ত্রণালয় এক বিবৃতিতে বলেছে, মাটির নিচে চাপা পড়া এই কারাখানায় খ্রিষ্টপূর্ব ৩১০০ সালে সম্রাট নারমারের আমলে মদ উৎপাদন করা হতো বলে তারা মনে করছেন। আর এই ধারণা সত্যি হলে এটিই হবে বিশ্বের সবচেয়ে পুরোনো মদের কারখানা।
প্রত্নতাত্ত্বিকরা বলছেন, অন্তত আটটি বড় ইউনিটে বিভক্ত এই কারখানার প্রতিটি ইউনিটে থরে থরে সাজানো প্রায় ৪০টি করে মাটির পাত্র রয়েছে। মূলত বিয়ার জাতীয় শস্য আর পানির একটি মিশ্রণ একধরনের বিশেষ মাটির পাত্রে গরম করা আর সাজানোর জন্য এগুলোর ব্যবহার করা হতো বলে ধারণা তাদের।
প্রত্নতাত্ত্বিক গবেষক দলের প্রধান ডেবোরাহ ভিসচাক জানান, আবিষ্কৃত প্রাচীন এই মদের কারখানায় একসঙ্গে প্রায় ২২ হাজার ৪০০ লিটার বিয়ার উৎপাদন হতো। আর এখান থেকে মিসরীয় সম্রাটদের রাজকীয় শেষকৃত্যে পানীয়ের জোগান দেয়া হতো বলে ধারনা তাদের।
এর আগেও ২০১৫ সালে প্রমাণ মিলেছিল যে প্রাচীন মিশরে তৈরি হত বিয়ার। বিভিন্ন মাটির ধ্বংসাবশেষ থেকে তা পরিষ্কার হয়ে গিয়েছিল। কিন্তু নিঃসন্দেহে এই বিপুল পরিমাণ মদের কারখানা বিস্ময়কর এবং তা অভূতপূর্বই।
এসডব্লিউ/এমএন/কেএইচ/১৯৪০
আপনার মতামত জানানঃ