এখন শুধু মহাকাশ অভিযানের উদ্দেশ্য অজানা রহস্যের অনুসন্ধানেই আটকে নেই। বর্তমানে সমস্ত মহাকাশযাত্রার একটি দিক ক্রমশ সামনে আসছে। আর তা হলো এই পৃথিবী ছেড়ে অন্য কোথাও মানুষের বসতি গড়ে তোলা। তবে তার জন্য সবার আগে প্রয়োজন অক্সিজেন। আর পৃথিবীর বাইরে এই একটি জিনিসেরই বিশেষ অভাব।
পৃথিবীর একমাত্র উপগ্রহ চাঁদ নিয়ে মানুষের আগ্রহের শেষ নেই। ১৯৬৯ সালের চন্দ্রজয়েও তা শেষ হয়নি। বরং আরও বেড়েছে। ১৯৬৮ থেকে ১৯৭২ সালের মধ্যে আমেরিকার নয়টি অ্যাপোলো মিশন এর অধীনে মানুষকে চাঁদে পাঠানো হয়। তার নয় টির মধ্যে ৬ টি মিশনেই মানুষ সফলভাবে চাঁদে যেতে সক্ষম হয়েছিল। এসব মিশনে মাত্র ১২ জন মানুষ চাঁদের বুকে বিচরণ করার সৌভাগ্য অর্জন করেছে। এরপর বহু বছর কেটে গেলেও নতুন করে আর কেউ চাঁদে যাওয়ার চেষ্টা করেনি।
এখন দুই লাখ ৩৯ হাজার কিলোমিটার দূরের এই উপগ্রহে বসতি গড়ার চিন্তা করছে সে। কিন্তু মানুষ যদি চাঁদে গিয়ে দীর্ঘ সময় থাকতে চায়, তাহলে প্রথমেই তাদের শ্বাসপ্রশ্বাসের জন্য অক্সিজেন এবং রকেট চালনার জন্য পর্যাপ্ত জ্বালানি সরবরাহের প্রয়োজন হবে। এ দুটি ছাড়া চাঁদে দীর্ঘমেয়াদি উপস্থিতি কল্পনা করা যায় না।
তবে আশার কথা, আমাদের উপগ্রহ চাঁদের বুকেই কিন্তু রয়েছে অক্সিজেনের বিরাট সম্ভার। আর সেই অক্সিজেনে অন্তত ৮০০ কোটি মানুষের ১ লক্ষ বছর চলে যাবে। তবে এই অক্সিজেন ব্যবহারের ক্ষেত্রে একটু সমস্যা আছে। আর সেই সমস্যার সমাধানের রাস্তা খুঁজতেই এবার জোট বেঁধেছে নাসা এবং অস্ট্রেলিয়ান স্পেস এজেন্সি। নাসার আর্টেমিস অভিযানের একটি ধাপে অস্ট্রেলিয়ান স্পেস এজেন্সির তৈরি একটি রোভার পাঠানোর পরিকল্পনা নেওয়া হয়েছে। গত মাসেই এই নিয়ে চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়েছে দুই সংস্থার মধ্যে।
যদিও চাঁদের বায়ুমণ্ডলে অক্সিজেন নেই। সেখানে আছে হাইড্রোজেন। আর আছে আর্গন, ক্রিপ্টন, জেননের মতো কিছু গ্যাস। তবে গ্যাসীয় অবস্থায় না থাকলেও বিপুল পরিমাণ অক্সিজেন রয়েছে চাঁদে। আর তা রয়েছে চাঁদের পাথরে বিভিন্ন ধাতুর সঙ্গে যৌগবদ্ধ অবস্থায়।
প্রসঙ্গত, চাঁদের পাথর এবং ধুলোর মূল উপাদানই হল অ্যালুমিনিয়াম, সিলিকা এবং ম্যাগনেশিয়ামের বিভিন্ন অক্সাইড। ঠিক পৃথিবীর মাটিতেও যেমন দেখা যায়। তবে আমাদের এই অক্সিজেনের জন্য নির্ভর করতে হয় না।
যুক্তরাষ্ট্রের ওয়াশিংটন ইউনিভার্সিটির ওয়েবসাইটে উল্কা নিয়ে একটি প্রতিবেদনের তথ্য অনুযায়ী চাঁদের রেগোলিথের ৪১ থেকে ৪৫ শতাংশই অক্সিজেন। স্পেস ডটকমের আরেক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, চাঁদ থেকে ব্যবহারযোগ্য অক্সিজেন আহরণ করতে চাইলে বিজ্ঞানীদের ইলেক্ট্রোলাইসিস নামের প্রক্রিয়া অনুসরণ করতে হবে।
দ্য কনভারসেশন ডটকমে প্রকাশিত প্রতিবেদন অনুযায়ী, চন্দ্রপৃষ্ঠের নিচের শক্ত পাথুরে স্তরগুলোর অক্সিজেন যদি বাদও দেওয়া হয়, কেবল রেগোলিথ বিবেচনায় নিলেও প্রচুর অক্সিজেন পাওয়া যাবে। চন্দ্রপৃষ্ঠে রেগোলিথের গড় গভীরতা যদি ১০ মিটার ধরা হয় এবং তা থেকে যদি সব অক্সিজেন আহরণ করা সম্ভব হয়, তবে তা পৃথিবীর ৮০০ কোটি মানুষের জন্য কমবেশি ১ লাখ বছরের জন্য অক্সিজেন মিলবে।
খনি থেকে অ্যালুমিনিয়ামের অক্সাইড তোলার পর ইলেক্ট্রোলাইসিস প্রক্রিয়ায় বিশুদ্ধ অ্যালুমিনিয়াম নিষ্কাশন করা হয়। এই সময় গ্যাসীয় অক্সিজেন বেরিয়ে আসে। তবে আমাদের কাছে এতদিন অ্যালুমিনিয়ামই ছিল মূল পদার্থ। অক্সিজেন ছিল বাই-প্রোডাক্ট। চাঁদের মাটিতে বিষয়টা উলটে যেতে পারে।
তবে একটি সমস্যা থেকেই যায়। ইলেক্ট্রোলাইসিস প্রক্রিয়ার জন্য বিপুল পরিমাণ শক্তির প্রয়োজন। নানা ধরনের ভারী যন্ত্রপাতিরও প্রয়োজন। চাঁদের বুকে সেইসব যন্ত্রপাতি নিয়ে যাওয়া একটি সমস্যা। তার চেয়েও বড়ো সমস্যা, এই অক্সিজেনকে ধরে রাখার মতো অভিকর্ষ শক্তি চাঁদের নেই। আর সবসময় মুখে অক্সিজেন মাস্ক পরে ঘুরে বেড়ানো তো সম্ভব নয়। তবে আজকের বিজ্ঞানের যুগে এসব নেহাৎই মামুলি সমস্যা। অস্ট্রেলিয়ান স্পেস এজেন্সি আর নাসার যৌথ চেষ্টায় এবার তার সমাধান হয় কিনা, সেটাই দেখার।
প্রসঙ্গত, ২০১৮ সালে যুক্তরাষ্ট্রের মহাকাশ গবেষণা সংস্থা নাসার সহায়তায় জাপানের মহাকাশ গবেষণা সংস্থা জাক্সা চাঁদে কলোনি বানানোর ঘোষণা দেয়। এক দশকের কাছাকাছি সময়ে এ পরিকল্পনা বাস্তবায়নের পরিকল্পনার কথাও জানান বিজ্ঞানীরা৷
এর আগে নাসার তোলা ছবিতে পরিষ্কার দেখা যায় যে, চাঁদে বরফ আছে৷ চাঁদ গবেষণায় যুক্তরাষ্ট্রের মহাকাশ যন্ত্র এম-৩ তিনটি রাসায়নিক চিহ্ন বের করে নিশ্চিত করেছে বরফ আকারে পানি থাকার বিষয়টি৷
ভারতীয় স্পেসক্রাফট চন্দ্রায়ন-১ মূল গবেষণাটি করেছিল৷ সে গবেষণা অনুযায়ী, পৃথিবীর পৃষ্ঠের মতোই চাঁদের পৃষ্ঠে পানি জমে আছে৷ এমনকি পৃথিবীর সমুদ্রে যে পরিমাণ পানি আছে, তার সমপরিমাণ পানি আছে সেখানেও৷
এসডব্লিউ/এসএস/১৩২৭
আপনার মতামত জানানঃ