করোনা (কোভিড-১৯) ঠেকাতে শিগগিরই বাজারে আসছে ট্যাবলেট। মের্ক ও তার সহযোগী প্রতিষ্ঠান রিজব্যাক বায়োথেরাপিউটিকসের মুখে খাওয়া মলনুপিরাভির ওষুধ হাসপাতালে ভর্তি ও মৃত্যুঝুঁকি অর্ধেকে আনবে, এমন আভাস দিয়েছেন গবেষকরা। ট্রায়ালের অন্তর্বর্তী অবস্থায় এরই মধ্যে প্রতিষ্ঠানটির সঙ্গে যোগাযোগ করছে বিভিন্ন দেশ। কোভিডের বিরুদ্ধে সর্বশেষ অস্ত্র, অ্যান্টিভাইরাল ক্যাপসুল ‘মলনুপিরাভির’ এখনো অনুমোদন না পেলেও ইতোমধ্যেই অনেক দেশ এই ক্যাপসুলের জন্য বুকিং দেওয়া শুরু করেছে। তবে ভ্যাকসিনের মতো বৈষম্য এড়াতে দরিদ্র ও মধ্যম আয়ের দেশগুলোতে মলনুপিরাভির পৌঁছে দিতে জাতিসংঘভিত্তিক সংস্থা দ্য গ্লোবাল মেডিসিন পেটেন্ট পুলের (এমপিপি) সঙ্গে চুক্তি করেছে ওষুধটির প্রস্তুতকারী প্রতিষ্ঠান মের্ক।
বুধবার জেনেভায় স্বাক্ষরিত এই চুক্তির ফলে শিগগিরই দরিদ্র ও মধ্যম আয়ের ১০৫ টি দেশে মলনুপিরাভিরের জেনেরিক ওষুধ (ভিন্ন নামে একই ওষুধ) পাওয়া যাবে।
যুক্তরাষ্ট্র ও ইউরোপের ওষুধ নিয়ন্ত্রণ সংস্থার কর্মকর্তারা ইতোমধ্যে মলনুপিরাভিরকে পর্যালোচনার মধ্যে রেখেছেন।
চুক্তি স্বাক্ষরের পর এক যৌথ বিবৃতিতে মের্ক ও এমপিপি বলেছে, ‘করোনা মহামারি প্রতিরোধে বিশ্বজুড়ে চিকিৎসা বিষয়ক প্রযুক্তি ছড়িয়ে দিতে এই প্রথম স্বচ্ছ ও জনস্বাস্থ্যকে সর্বোচ্চ গুরুত্ব দেওয়া কোনো চুক্তি স্বাক্ষরিত হলো।’
উন্নয়নশীল ও মধ্যম আয়ের দেশসমূহের যেসব ওষুধ কোম্পানি মলনুপিরাভিরের জেনেরিক ওষুধ প্রস্তুত করতে চায়, চুক্তির শর্ত অনুযায়ী তাদেরকে এমপিপির মাধ্যমে এ বিষয়ক অনুমোদনপত্র বা লাইসেন্স সংগ্রহ করতে হবে। পাশাপাশি, যেসব কোম্পানি মলনুপিরাভিরের জেনেরিক উৎপাদনের অনুমোদনপত্র পাবে, তাদেরকে বিনামূল্যে কারিগরি সহায়তাও সরবরাহ করবে মের্ক ও এমপিপি।
এ বিষয়ে যৌথ বিবৃতে বলা হয়েছে, যতদিন পর্যন্ত করোনা মহামারি বিশ্বস্বাস্থ্য সংস্থার আন্তর্জাতিক উদ্বেগের (পাবলিক হেলথ ইমার্জেন্সি অব ইন্টারন্যাশনাল কনসার্ন-পিএইচইআইসি) তালিকায় থাকবে ততদিন পর্যন্ত দরিদ্র দেশগুলোতে বিনামূল্যে প্রযুক্তিগত সহায়তা সরবরাহ করা হবে।
যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক ওষুধ কোম্পানি মের্কের তৈরি অ্যান্টিভাইরাল করোনা পিল মলনুপিরাভির করোনায় আক্রান্ত রোগীর মৃত্যু ও হাসপাতালে ভর্তি হওয়ার ঝুঁকি ৫০ শতাংশ হ্রাসের পাশপাশি করোনাভাইরাসের বংশবিস্তার অকার্যকর করতে সক্ষম।
এই অ্যান্টিভাইরাল ওষুধটির সম্পর্কে বার্তাসংস্থা রয়টার্সকে মের্কের কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, মলনুপিরাভির মানবদেহের প্রবেশকারী করোনাভাইরাসের জেনেটিক কোডে সমস্যা সৃষ্টি করে ভাইরাসটির বংশবৃদ্ধি প্রায় স্থবির করে দেয়; আর তার ফলেই কমতে থাকে করোনায় আক্রান্ত রোগীর গুরুতর অসুস্থ হয়ে হাসপাতালে ভর্তি হওয়া ও এ রোগে মারা যাওয়ার সম্ভাবনা।
উন্নয়নশীল ও মধ্যম আয়ের দেশসমূহের যেসব ওষুধ কোম্পানি মলনুপিরাভিরের জেনেরিক ওষুধ প্রস্তুত করতে চায়, চুক্তির শর্ত অনুযায়ী তাদেরকে এমপিপির মাধ্যমে এ বিষয়ক অনুমোদনপত্র বা লাইসেন্স সংগ্রহ করতে হবে। পাশাপাশি, যেসব কোম্পানি মলনুপিরাভিরের জেনেরিক উৎপাদনের অনুমোদনপত্র পাবে, তাদেরকে বিনামূল্যে কারিগরি সহায়তাও সরবরাহ করবে মের্ক ও এমপিপি।
কর্মকর্তারা আরও বলেন, বাজারে বর্তমানে করোনা চিকিৎসার জন্য যেসব ওষুধ ব্যবহার করা হচ্ছে, সেগুলোর মূল কাজ মানুষের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতাকে শক্তিশালী করা, ভাইরাসকে অকার্যকর করা নয়।
এক্ষেত্রে মলনুপিরাভিরই বিশ্বে প্রথম এবং এখন পর্যন্ত একমাত্র ওষুধ, যেটি মানুষের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতাকে শক্তিশালী করার পাশাপাশি ভাইরাসের প্রজনন ক্ষমতা অকার্যকর করতে সক্ষম।
এমপিপির নির্বাহী পরিচালক চার্লস গোর এক বিবৃতিতে এই ওষুধটি সম্পর্কে বলেন, ‘মলনুপিরাভির সম্পর্কে যেসব তথ্য আমাদের কাছে এসেছে, সেসব যাচাই করার পর এই ওষুধটিকে মানসম্পন্ন বলেই মনে হয়েছে আমাদের কাছে।’
‘আমাদের বিশ্বাস, মহামারির কারণে বিশ্বজুড়ে যে স্বাস্থ্য সংকট দেখা দিয়েছে, তা উত্তরণের ক্ষেত্রে মলনুপিরাভির কার্যকর ভূমিকা রাখতে পারে।’
চুক্তি স্বাক্ষরের পর মের্কের শীর্ষ নির্বাহী ওয়ন্ডি হোলম্যান পৃথক এক বিবৃতিতে বলেন, ‘আমরা এমপিপির সহযোগী হতে পেরে খুবই আনন্দিত। আমরা আরও আনন্দিত এ কারণে যে, বিশ্বজুড়ে মলনুপিরাভিরের জেনেরিক সংস্করণ প্রস্তুত এখন শুধু সময়ের ব্যাপার।’
শুরু থেকেই কম আয় বা দরিদ্র দেশগুলোকে এ ক্যাপসুল দেওয়ার জন্য আহ্বান জানিয়েছে আন্তর্জাতিক স্বাস্থ্য সংস্থাগুলো।
উদাহরণ হিসেবে স্বাস্থ্য সংস্থাগুলো বলছে, আফ্রিকার জনসংখ্যার মাত্র ৫ শতাংশকে টিকার আওতায় নেওয়া হয়েছে। যা উন্নত দেশগুলোতে ৭০ শতাংশের ওপরে। তবে, এটাও ঠিক নিম্ন ও মধ্যম আয়ের দেশগুলোতে প্রচুর পরিমাণ ওষুধ পৌঁছানোর জন্য এটি (ক্যাপসুল) যথেষ্ট নয়।
অন্যদিকে, একটি বড় ক্লিনিকাল ট্রায়ালে হাসপাতালে ভর্তি হওয়া করোনা রোগীর মৃত্যুর হার ৫০ শতাংশ কমিয়ে আনার পরে ১১ অক্টোবর ‘মলনুপিরাভির’ জরুরি ছাড়পত্রের জন্য আবেদন করেছিল মের্ক। এরফলে রিজব্যাক বায়োথেরাপিউটিক্স তৈরি ওষুধটি ডিসেম্বরের মধ্যেই অনুমোদন পেতে পারে।
রিজব্যাক বায়োথেরাপিউটিক্সের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা ভেন্ডি হলম্যান এক বিবৃতিতে বলেছেন, তিনি আশা করছেন যে ওষুধটি মহামারি করোনা নিয়ন্ত্রণে গভীর প্রভাব ফেলতে পারবে।
মের্ক বলছে, এ বছর ১০ মিলিয়ন কোর্স ক্যাপসুল তৈরির পরিকল্পনা করা হচ্ছে, দিনে দুবার করে পাঁচদিন সেবন করা যাবে। পরের বছর আরও ২০ মিলিয়ন তৈরির পরিকল্পনা রয়েছে।
অনুমোদন পাওয়ার আগেই এ ক্যাপসুল সংগ্রহে বিশ্বের বিভিন্ন দেশ তৎপর হতে শুরু করেছে। এশিয়া-প্যাসিফিক অঞ্চলের অনেক দেশ করোনার টিকা সংগ্রহের ব্যাপারে ধীর গতিতে কাজ করেছিল। সেখান থেকে শিক্ষা নিয়ে এবার তারা নতুন ক্যাপসুল অনুমোদন পাওয়ার আগেই কেনার চুক্তি করার জন্য ছুটছে।
এরই মধ্যে এশিয়া-প্যাসিফিক অঞ্চলের অন্তত ৮টি দেশ বা অঞ্চল ক্যাপসুলটি কেনার চুক্তি করে ফেলেছে বা কেনার আলোচনায় করছে। এসব দেশের মধ্যে নিউজিল্যান্ড, অস্ট্রেলিয়া ও দক্ষিণ কোরিয়া আছে।
এসডব্লিউ/এমএন/কেএইচ/১৪৪৯
আপনার মতামত জানানঃ