প্রাণঘাতী করোনাভাইরাস সংক্রমণ প্রতিরোধে অ্যান্টিভাইরাল ওরাল পিল বা মুখে খাওয়ার ওষুধ ‘মলনুপিরাভির’ এখন পাওয়া যাচ্ছে বাংলাদেশেও। দেশের শীর্ষস্থানীয় ওষুধ প্রস্তুতকারী প্রতিষ্ঠান বেক্সিমকো ফার্মা এ ওষুধ বাজারে এনেছে বলে জানা গেছে। বাংলাদেশে এর জেনেরিক সংস্করণের নাম হবে ‘এমোরিভির’।
সূত্র মতে, এ অব্দি তিনটি মেডিকেল ট্রায়াল পার করেছে মলনুপিরাভির। প্রতিটি ট্রায়ালেই রোগীদের শারীরিক অবস্থার উল্লেখযোগ্য উন্নতি হয়েছে বলে জানিয়েছেন প্রস্তুতকারক কোম্পানির কর্মকর্তারা।
দাম কত?
আজ মঙ্গলবার (৯ নভেম্বর) দুপুরে এই পিল বাংলাদেশের বাজারে পাওয়া যাওয়ার তথ্য নিশ্চিত করেছেন বেক্সিমকো ফার্মার চিফ অপারেটিং অফিসার (সিওও) রাব্বুর রেজা। সূত্র মতে, প্রতিটি ওরাল পিলের বাজার মূল্য নির্ধারণ করা হয়েছে ৭০ টাকা। তবে অবশ্যই চিকিৎসকের পরামর্শ অনুযায়ী এই পিল খেতে হবে।
সূত্র মতে, সংক্রমণ প্রতিরোধে ১৮ বছরের বেশি বয়সী করোনা আক্রান্ত রোগীদের ৪০টি পিল খেতে হবে। যার মোট বাজার মূল্য দাঁড়াচ্ছে ২ হাজার ৮০০ টাকা।
প্রস্তুতকারী প্রতিষ্ঠানটির দাবি, এই ওষুধ আক্তান্তের শরীরে করোনাভাইরাসের বংশবিস্তার অকার্যকর করে দেয়। পাশাপাশি, করোনায় আক্রান্ত রোগীর মৃত্যু ও হাসপাতালে ভর্তি হওয়ার ঝুঁকিও ৫০ শতাংশ পর্যন্ত কমিয়ে আনার সক্ষমতা মলনুপিরাভিরের রয়েছে।
কোথায় পাওয়া যাবে?
রাজধানীর ১৫০টি ফার্মেসিতে গত রাতে (সোমবার) এ ওষুধ সরবরাহ করা হয়েছে বলে জানা গেছে। পাশাপাশি চট্টগ্রাম সহ দেশের অন্যান্য বিভাগে আজ পাঠানো হবে এই পিল।
ওষুধ পাঠানোর ক্ষেত্রে করোনা আক্রান্তের পরিসংখ্যানকে গুরুত্ব দেয়া হচ্ছে। সংক্রমণের তীব্রতা অনুযায়ী বিভিন্ন জায়গায় ওষুধ পাঠানো হবে।
যে সব এলাকার মানুষ এখন বেশি করোনায় আক্রান্ত হচ্ছে, বেশি ঝুঁকিতে আছে, সেই সব এলাকায় এ ওষুধ পাঠানো হবে।
মহামারির শুরুতে বেক্সিমকো প্রথম জেনেরিক রেমডিসিভির উৎপাদন করে। এরপর এবার করোনার চিকিৎসায় বিশ্বের প্রথম ওরাল অ্যান্টিভাইরাল ওষুধ মলনুপিরাভিরের জেনেরিক সংস্করণ চালু করলো এই কোম্পানিটি।
করোনা সংক্রমণে আক্রান্ত রোগীদের জন্য সাশ্রয়ী মূল্যের চিকিৎসা সহজলভ্য করতে বেক্সিমকো ফার্মার এই পদক্ষেপের ফলে দেশের করোনা পরিস্থিতি মোকাবিলা সহজ হবে বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা।
বিশেষজ্ঞরা মনে করেন, মহামারি মোকাবিলায় এটি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করবে। বিশেষ করে নিম্ন ও মধ্যম আয়ের দেশগুলোতে, যেখানে টিকার সরবরাহ এখনও সীমিত।
কীভাবে কাজ করে?
মলনুপিরাভির মানবদেহের প্রবেশকারী করোনাভাইরাসের বংশবৃদ্ধি প্রায় স্থবির করে দেয়। মূলত ভাইরাসের জেনেটিক কোডে সমস্যা সৃষ্টির মাধ্যমে এই পিল এটি করে থাকে।
এর ফলে করোনারোগীর গুরুতর অসুস্থ হয়ে হাসপাতালে ভর্তি হওয়া বা এ রোগে মারা যাওয়ার সম্ভাবনা কমে আসে অনেকটাই।
বর্তমানে করোনা রোগীদের চিকিৎসার জন্য বাজারে যেসব ওষুধ ব্যবহার করা হচ্ছে, সেগুলোর সাথে মলনুপিরাভির সবচেয়ে বড় পার্থক্য হলো- অন্যান্য ওষুধের মূল কাজ মানুষের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতাকে শক্তিশালী করা, ভাইরাসকে অকার্যকর করা নয়।
মলনুপিরাভিরই বিশ্বে প্রথম এবং এখন পর্যন্ত একমাত্র ওষুধ যেটি ভাইরাসের প্রজনন ক্ষমতা অকার্যকর করতে সক্ষম। পাশাপাশি মানুষের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতাকেও শক্তিশালী করে এই ওষুধটি।
তবে বিশেষজ্ঞদের মতে, করোনাভাইরাসের আক্রান্ত হওয়া এবং উপসর্গগুলো প্রকাশিত হওয়ার পাঁচদিনের মধ্যে যতটা দ্রুত সম্ভব এই ওষুধের ব্যবহার করতে হবে।
অনুমোদন
মলনুপিরাভির তৈরি করেছে মার্কিন ওষুধপ্রস্তুতকারক কোম্পানি মের্ক অ্যান্ড রিজব্যাক বায়োথেরাপিউটিকস। বিশ্বের প্রথম দেশ হিসেবে করোনাভাইরাসের মুখে খাওয়ার এই ওষুধ অনুমোদন দেয় যুক্তরাজ্য। ব্রিটেনে ল্যাগেভরিও নামে সম্ভবত বাজারে আসবে ওষুধটি।
মার্কিন নিয়ন্ত্রক সংস্থাও মলনুপিরাভির অনুমোদনের সবুজ সংকেত দিয়েছে। পাশাপাশি এই ওষুধটির অনুমোদন দেওয়া হবে কিনা তা নিয়ে চলতি মাসেই যুক্তরাষ্ট্রের স্বাস্থ্য উপদেষ্টাদের ভোটাভুটি হওয়ার কথা রয়েছে।
সূত্র মতে, ২০২১ সাল শেষ হওয়ার আগেই ১ কোটি কোর্স পিল প্রস্তুত করবে মের্ক। এরই মধ্যে ১০ লাখ ৭০ হাজার কোর্স পিল যুক্তরাষ্ট্রে সরবরাহ করার চুক্তিও হয়েছে মার্কিন সরকারের সঙ্গে কোম্পানিটির। প্রতি কোর্স পিলের দাম পড়বে ৭০০ ডলার।
এর আগে গত মাসে মার্কিন কোম্পানি মের্কের কাছ থেকে ৩ লাখ কোর্স অ্যান্টিভাইরাল করোনা পিল মলনুপিরাভির কিনবে বলে জানায় অস্ট্রেলিয়া।
তবে সূত্র মতে, চলতি বছর দেশটির ওষুধ নিয়ন্ত্রক সংস্থা করোনারোগীদের চিকিৎসায় মলনুপিরাভিরের কার্যকারিতা পরীক্ষা-নিরীক্ষা করবে। এরপর আগামী বছরের প্রথম থেকেই এই পিলটি অস্ট্রেলিয়ার বাজারে উন্মুক্ত করা হবে।
এদিকে, যুক্তরাজ্য সরকার অনুমোদন দেয়ার চারদিন পর করোনাভাইরাস সংক্রমণ প্রতিরোধে বাংলাদেশে মলনুপিরাভির অ্যান্টিভাইরাল ট্যাবলেটের জরুরি ব্যবহারের অনুমোদন দেয় ওষুধ প্রশাসন অধিদফতর।
কয়েকটি প্রতিষ্ঠানের আবেদনের প্রেক্ষিতে এই পিলের জরুরি ব্যবহারে অধিদফতর প্রাথমিকভাবে অনুমোদন দিয়েছে।
জানা গেছে, বেশ কয়েকটি প্রতিষ্ঠান দেশে মলনুপিরাভির উৎপাদন ও বিপণনের অনুমতি চেয়েছে। এর মধ্যে আছে স্কয়ার ফার্মাসিউটিক্যালস লিমিটেড, বেক্সিমকো ফার্মাসিউটিক্যালস লিমিটেড, এসকেএফ ফার্মাসিউটিক্যালস লিমিটেডসহ আরও কিছু প্রতিষ্ঠান।
এসডব্লিউ/এসএস/১৫০০
আপনার মতামত জানানঃ