আজ ঢাকার পল্টনে এক সংবাদ সম্মেলন করে ‘বাংলাদেশ গণ অধিকার পরিষদ’ নামে নতুন রাজনৈতিক একটি দলের ঘোষণা দেয়া হয় যেটির আহ্বায়ক কমিটিতে রয়েছেন ১০১জন সদস্য। ড. রেজা কিবরিয়াকে আহ্বায়ক এবং নুরুল হক নূরকে সদস্য সচিব করে নতুন এই রাজনৈতিক দল আত্মপ্রকাশ করেছে।
কমিটির যুগ্ম-আহ্বায়ক হয়েছেন রাশেদ খান, ফারুক হাসান, সোহরাব হোসেন, আবু হানিফ ও মাহফুজুর রহমান খান। এ ছাড়া কমিটির বিভিন্ন পদে ছাত্র, যুব, শ্রমিক অধিকার পরিষদের বর্তমান-সাবেক নেতাদের রাখা হয়েছে।
‘জনতার অধিকার, আমাদের অঙ্গীকার’ স্লোগানকে সামনে রেখে যাত্রা শুরু করা বাংলাদেশ গণ অধিকার পরিষদ-এর মূলনীতি ঠিক করা হয়েছে চারটি। গণতন্ত্র, ন্যায়বিচার, অধিকার ও জাতীয় স্বার্থ। এগুলোর ওপর ভিত্তি করে রাজনৈতিক কাজ পরিচালিত হবে দলটির। মূলনীতি ও দলের উদ্দেশ্য এবং ২১ দফা পড়ে শোনান রাশেদ খান।
প্রসঙ্গত, নুরুল হক নূর কোটাবিরোধী আন্দোলনের নেতৃত্ব দিয়ে খ্যাতি পান। পরে তিনি ডাকসুর ভিপি নির্বাচিত হন। তাকে ভিপি নূর বলে অনেকেই চেনেন। কোটাবিরোধী আন্দোলন করে আলোচনায় আসা সংগঠন ছাত্র অধিকার পরিষদের যুগ্ম আহ্বায়ক তিনি।
আর রেজা কিবরিয়া প্রয়াত শাহ এএমএস কিবরিয়ার ছেলে। একটি বোমা হামলায় নিহত শাহ এএমএস কিবরিয়া আওয়ামী লীগ সরকারের অর্থমন্ত্রী ছিলেন। রেজা কিবরিয়া ২০১৮ সালের ডিসেম্বরের জাতীয় নির্বাচনের আগে ড. কামাল হোসেনের নেতৃত্বাধীন গণফোরামে যোগদান করেন।
২০১৮ সালের নির্বাচনে বিএনপির নেতৃত্বাধীন জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের হয়ে ধানের শীষ প্রতীক নিয়ে তিনি নির্বাচন করেন। পরে ২০১৯ সালে তাকে গণফোরামের সাধারণ সম্পাদক করা হয়। এরপর গত ফেব্রুয়ারি মাসে গণফোরাম ছাড়ার ঘোষণা দেন ড. রেজা কিবরিয়া।
নতুন রাজনৈতিক যাত্রা নিয়ে রেজা কিবরিয়া বলেন, বর্তমান পরিস্থিতিতে জনগণের আশা-আকাঙ্খা পূরণের জন্য দলীয় একটা অবকাঠামো তৈরির সুযোগ আছে। আওয়ামী লীগ সরকারের ব্যর্থতার জন্য আমাদের এই সুযোগটা তৈরি হয়েছে। সরকারের জনসমর্থন এতটাই কমে গেছে যে, মানুষ সুযোগ খুঁজছে কাকে সমর্থন দিলে এদের দূর করা সম্ভব হবে।
তিনি বলেন, আমরা মধ্যপন্থি দল। আমাদের সঙ্গে অন্যদের চিন্তাভাবনা মিলবে না। তিনি আশাবাদ ব্যক্ত করে বলেন, আগামী নির্বাচনে তাদের দল ৩০০ আসনে প্রার্থী দেবে সারা দেশে। সে ভাবেই তারা প্রস্তুতি নিচ্ছেন।
উল্লেখ্য, নুরুল হক নূর ২০২০ সালের ডিসেম্বরে একটা রাজনৈতিক দল গঠনের ঘোষণা দিয়েছিলেন। গত বছর ২২ ডিসেম্বর ঢাকার পল্টন মোড়ে ছাত্র অধিকার পরিষদ আয়োজিত কালো পতাকা ও বিক্ষোভ মিছিল শেষে বিক্ষোভ সমাবেশে এ কথা জানিয়েছিলেন তিনি নিজেই। তিনি সেই দলের নাম রেখেছিলেন ‘গণঅধিকার পরিষদ’।
এদিকে, নুরুল হক নূরকে নিয়ে আওয়ামী লীগের অস্বস্তি যেহেতু বেশ পুরনো, তাই অনেক রাজনৈতিক বিশ্লেষকরাই নূর ও রেজার কাঁধে ভর দিয়ে নতুন রাজনৈতিক শক্তির বিকাশ দেখতে চাইছেন। প্রসঙ্গত, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্র সংসদ নির্বাচনে ক্ষমতাসীন দলের ছাত্রলীগের প্রার্থীকে হারিয়ে নূর যখন ভিপি নির্বাচিত হন, তখন গণভবনে ডাকসুর সবাইকে আমন্ত্রণ জানিয়েছিলেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
সে অনুষ্ঠানে নিজেকে ছাত্রলীগের সাবেক ‘ছোটখাটো’ নেতা দাবি করে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ভূয়সী প্রশংসা করেন নুরুল হক নূর। সে অনুষ্ঠানে প্রধানমন্ত্রীর মনোভাবও ছিল বেশ ইতিবাচক। কিন্তু এরপর থেকেই ভিন্ন আরেক পরিস্থিতির তৈরি হতে থাকে। দেশের বিভিন্ন জায়গায় একের পর এক হামলার শিকার হন নুরুল হক নূর।
প্রতিটি হামালার ক্ষেত্রেই অভিযোগ আসে ছাত্রলীগের বিরুদ্ধে। যদিও সংগঠনের তরফ থেকে বারবার সেটি অস্বীকার করা হয়েছে। বাংলাদেশে সাম্প্রতিক সময়ে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের অঙ্গসংগঠনের কর্মীদের দ্বারা যে ব্যক্তিটি সবচেয়ে বেশি হামলার শিকার হয়েছেন তিনি হচ্ছেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্র সংসদের (ডাকসু) ভিপি নুরুল হক নূর। এসব হামলার কোন বিচার হয়নি, এমনকি পুলিশ কোন অভিযোগ গ্রহণ করতেও রাজী হয়নি।
বিশ্লেষকদের আশাবাদী হবার আর একটি কারণ ২০০৯ সালে আওয়ামী লীগ ক্ষমতা আসার পর থেকে আন্দোলনের মুখে সরকারের কাছ থেকে কোন দাবি আদায় করার নজির নেই। বিরোধী দলগুলোর তত্ত্বাবধায়ক সরকারের দাবি এবং মানবতা-বিরোধী অপরাধের বিচার নিয়ে আন্দোলন বেশ ভালো ভাবেই সামাল দিয়েছে ক্ষমতাসীনরা।
সে হিসেবে সরকারি চাকরিতে কোটা সংস্কার আন্দোলন ব্যতিক্রম। কোটা ব্যবস্থা বাতিলের পক্ষে দেশের পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে তুমুল আন্দোলন গড়ে ওঠে। এক পর্যায়ে অনিচ্ছা সত্ত্বেও সরকার সে দাবি মেনে নিতে বাধ্য হয়।
রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের মতে, কোটা সংস্কার আন্দোলনকে ক্ষমতাসীনরা ভালোভাবে মেনে নেয়নি। পাশাপাশি তারা মনে করেন, নূরকে নিয়ে ক্ষমতাসীনদের আরেকটি অস্বস্তির জায়গা হচ্ছে ডাকসু নির্বাচনে তার কাছে ছাত্রলীগ প্রার্থীর পরাজয়। তাই রেজা কিবরিয়া এবং নূরের নেতৃত্বে নতুন রাজনৈতিক দল ‘বাংলাদেশ গণ অধিকার পরিষদ’ আওয়ামী লীগকে কতটা প্রশ্নের সামনে দাঁড় করাতে পারবে এখনি বলা সম্ভব না হলেও, খড়কুটো হিসেবে আঁকড়ে ধরতে চাইছেন অনেকেই।
এসডব্লিউ/এসএস/১৬৪০
আপনার মতামত জানানঃ