[zoomsounds_player artistname=”অডিওতে শুনুন” songname=”আফগানিস্তানে আমেরিকা ব্যর্থ হতে যাচ্ছে” type=”detect” dzsap_meta_source_attachment_id=”20049″ source=”https://statewatch.net/wp-content/uploads/2021/09/আফগানিস্তানে-আমেরিকা-ব্যর্থ-হতে-যাচ্ছে.mp3″ thumb=”https://statewatch.net/wp-content/uploads/2021/04/statewatch-logo.jpg” config=”default” autoplay=”off” loop=”off” open_in_ultibox=”off” enable_likes=”off” enable_views=”off” enable_rates=”off” play_in_footer_player=”default” enable_download_button=”off” download_custom_link_enable=”off”]
স্কট টং
লেখক এবং দ্য ওয়াশিংটন পোস্টের অনুসন্ধানী সাংবাদিক ক্রেইগ হুইটলক রচিত নতুন বই ‘দ্য আফগানিস্তান পেপারস : দ্য সিক্রেট হিস্টোরি অব দ্য অ্যর’-এ গুরুত্বপূর্ণ সব তথ্য প্রকাশিত হয়েছে। বিগত দুই দশক ধরে আফগানিস্তানে অবস্থান করতে গিয়ে আমেরিকান সেনাবাহিনী কী কী ভুল করেছিল সেগুলো উন্মোচিত হয়েছে বইটিতে।
২০০২ সালের এপ্রিলে আমেরিকার সাবেক প্রেসিডেন্ট জর্জ ডব্লিউ. বুশ সতর্ক করেছিলেন, আফগানিস্তানে আমেরিকানদের যেকোনো ধরনের অগ্রগতি এবং শান্তি কর্মসূচিতে বিদ্রোহীরা হামলা করার চেষ্টা করে যাচ্ছে।
ভার্জিনিয়া মিলিটারি ইন্সটিটিউটে বক্তৃতা দিয়েছিলেন বুশ, “ইন্টেলিজেন্স থেকে তো বটেই, আফগানিস্তানে মিলিটারি সংঘর্ষের ইতিহাস থেকেও আমরা বিষয়টা জানি। প্রাথমিকভাবে একটি সফলতা অর্জন করার পর দেখা গেছে অনেক বছর ধরে লাগাতার ভুল করে, চূড়ান্ত ব্যর্থতা বরণ করে নিতে হয়েছে। তবে আমরা সেই ভুলের পুনরাবৃত্তি করব না।”
বিভিন্ন প্রশাসন থেকে ইতিবাচক মনোভাব পোষণ করার পরেও দেখা গেছে পর্দার আড়ালে ঠিকই সন্দেহ এবং দ্বিধার আনাগোনা ছিল।
দ্য ওয়াশিংটন পোস্ট অভিযোগ করেছে ফেডারেল সরকারের কাছে কিছু অপ্রকাশিত নথি ছিল, যেগুলো থেকে জানা গেছে কীভাবে মিলিটারি নেতা, কূটনীতিক এবং অন্যান্য প্রশাসনিক কর্মকর্তারা প্রকাশ্যে আফগানিস্তানে আমেরিকার অগ্রগতি নিয়ে প্রশংসা করলেও গোপনে ঠিকই জানতেন আফগানিস্তানে আমেরিকার কোনো স্পষ্ট কৌশল বা মিশন কোনোটাই নেই। সেই নথিসমূহ এটাও ইঙ্গিত করছে যে তারা জানতেন আমেরিকা হয়তো আফগানিস্তানে বিজয় অর্জন করতে পারবে না।
লেখক ক্রেইগ হুইটলক তার বইয়ে লিখেছেন, সেপ্টেম্বরের ১১ তারিখে জঙ্গী হামলার পর যে যুদ্ধ শুরু হয়েছিল, সেখানে সবাই শত্রুকে শনাক্ত করতে পেরেছিল। সেই যুদ্ধে শত্রু ছিল আল কায়েদার সদস্যরা।
“শত্রু নিধন করার সেই মিশনটি বেশ সফল হয়েছিল। ২০০২ সালের প্রথম ছয় মাসের মাঝে আল-কায়েদার প্রায় সকল নেতারা খুন হয়েছিল, গ্রেফতার হয়েছিল কিংবা আফগানিস্তানে পালিয়ে গিয়েছিল। শত্রুদেরকে একেবারে নাজেহাল করে দেওয়া হয়েছিল তখন। কিন্তু তারপর থেকে পরিস্থিতি বিগড়ে যেতে শুরু করে।”
আল-কায়েদাকে ধরাসায়ী করা গেলেও, যুদ্ধ শুরু হওয়ার কিছুদিন পর থেকেই আমেরিকার তৎকালীন প্রতিরক্ষামন্ত্রী ডোনাল্ড রামসফেল্ড শত্রুদেরকে স্পষ্টভাবে চিহ্নিত করতে ব্যর্থ হয়েছিলেন। রামসফেল্ড, বুশ এবং সাবেক ভাইস প্রেসিডেন্ট ডিক চেনি আল-কায়েদা, তালেবান এবং অন্যান্য বিদ্রোহী গ্রুপগুলোকে একই জিনিস বলে মনে করতেন। সামগ্রিকভাবে তাদেরকে ‘দ্য ব্যাড গাইস’ বলে ডাকতেন।
এব্যাপারে লেখক ক্রেইগ হুইটলক বেশ কিছু স্মারকলিপি, মেমো আবিষ্কার করে তার ‘দি আফগান পেপারস’ বইটিতে প্রকাশ করেছেন।
“যুদ্ধ শুরু হওয়ার এক কিংবা দুই বছরের মাথায় রামসফেল্ডস তার ইন্টেলিজেন্স চিফের কাছে একটি মেমো পাঠিয়েছিলেন। সেখানে তিনি বলেছিলেন, ‘আমি বুঝতে পারছি না আফগানিস্তানে আমাদের শত্রু কারা।’” এপ্রসঙ্গে হুইটলক তার বইতে লিখেছেন, “বিগত দুই দশকেও আমরা কখনো এই বিষয়টি সুরাহা করিনি।”
উল্লেখযোগ্য সাক্ষাৎকার
ফরেন সার্ভিস অফিসার টড গ্রিনট্রি এক মৌখিক সাক্ষাৎকারে জানান, আমেরিকা আফগানিস্তানে গিয়ে তালেবানদেরকে মেরে তালেবান বিদ্রোহকে উস্কে দিয়েছে
“গ্রিনট্রি বলেন, আমরা আফগানদের যুদ্ধনীতি ভঙ্গ করেছি। একশ বছরেরও বেশি সময় ধরে আফগানিস্তান বিদেশিদের অধীনে পরিচালিত হয়ে আসছে। সেখানে গৃহযুদ্ধও ছিল। আফগানিস্তানের বিভিন্ন স্থানে আমাদের আফগান কমান্ডার ছিল, তারা একে অন্যের সাথে লড়াই করতো। তবে তারা এটাও জানতো কখন পক্ষ বদল করতে হবে এবং কার সাথে বন্ধুত্ব করতে হবে। আফগানিস্তানে এভাবেই দ্বন্দ্ব নিরসন করা হয়, দুই পক্ষের মাঝে একধনের পুনর্মিলন ঘটে।
“কিন্তু আমেরিকা তা করেনি। আমেরিকা ভেবেছিল তারা তালেবানকে ২০০২ সালে পরাজিত করে ফেলেছে। কোনো ধরনের পুনর্মিলনের মাধ্যমে রাজনৈতিকভাবে দ্বন্দ্ব নিরসনের চেষ্টা না করে আমেরিকা প্রতিনিয়ত ‘ব্যাড গাইস’-এর তালিকাটি বড় করেছে, তারা সেই তালিকা কখনো ছোট করতে পারেনি।”
লেফটেন্যান্ট জেনারেল মাইকেল ফ্লিন ২০১৫ সালে আমেরিকার যুদ্ধ নিরীক্ষকদেরকে একটি সাক্ষাৎকারে বলেছিলেন, “যদি আমরা প্রকৃতপক্ষে আফগানিস্তানে এত ভাল কাজ করে থাকি, তাহলে কেন মনে হয় যে আমরা হেরে যাচ্ছি?”
“আফগানিস্তানে ন্যাটো এবং আমেরিকার মিলিটারি ইন্টেলিজেন্সের প্রধান ছিলেন মাইকেল ফ্লিন। আফগানিস্তানে তিনি অনেক বার মিশন (ট্যুর) সম্পন্ন করেছিলেন। পরবর্তীতে তিনি রাজনীতিতে যোগ দেন এবং রাজনৈতিক উগ্রবাদী হিসেবে পরিচিতি লাভ করেন। তবে এর আগে দক্ষতার সাথে ইন্টেলিজেন্স মূল্যায়নের কারণে মিলিটারিতে তাকে একজন সম্মানজনক ব্যক্তি হিসেবে বিবেচনা করা হতো। তিনি বলেছিলেন, আমরা যেহেতু প্রতি বছর নতুন নতুন মিলিটারি ইউনিট আফগানিস্তানে পাঠিয়ে থাকি, তাই সৈন্যরা প্রতি ৯ মাস বা ১২ মাস অন্তর অন্তর চক্রাকারে আফগানিস্তানে অবস্থান করে। একই কথা আমেরিকান দূতাবাসে কর্মরত কূটনীতিকদের ক্ষেত্রেও প্রযোজ্য।
“ফ্লিন এখানে মানুষের স্বভাব নিয়ে প্রশ্ন তুলেছিলেন। বিশেষ করে মিলিটারিতে কেউ স্বীকার করতে চায় না যে তারা তাদের মিশনে সফল হয়নি। পারবোই বা পারতেই হবে; এমন ভাবনা মিলিটারি সংকল্প বা স্পিরিটের একটি অবিচ্ছেদ্য অংশ। কিন্তু এধরনের একগুঁয়েমির কারণে কেউ স্বীকার করে না যে তাদের পক্ষে আর পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনা সম্ভব নয় কিংবা তারা ব্যর্থ হয়েছে। নিজের মিশনকালীন সময়ে কেউই ব্যর্থতার দায়ভার নিতে আগ্রহী নয়। এমনকি কেউ মিশন নিয়ে কোনো প্রশ্নই করে না। সবসময় ‘সফল হয়েছি’ বলতে হবে; এরকম প্রবণতা দেখা যায়।”
সাধারণ জনগণের কাছে আমেরিকা ও স্থানীয় আফগান আর্মির মাঝে শক্তিশালী ঐক্য আছে বলে প্রচার করা হলেও প্রকৃতপক্ষে দু’পক্ষের মাঝে সেরকম বনিবনা হচ্ছিল না
পেন্টাগন স্লোগান প্রচার করছিল আমেরিকানরা আফগানদের সাথে কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে মাঠে নেমেছে। আমেরিকানরা তাদেরকে প্রশিক্ষণ দিচ্ছে, পরামর্শ দিচ্ছে, তাদের সাথে টহল দিচ্ছে। কিন্তু বাস্তবতা ছিল ভিন্ন। ‘দি আফগানিস্তান পেপারস’ বইয়ে উল্লেখিত একটি সাক্ষাৎকারে সেক্রেটারি রবার্ট গেটস জানান, নিয়ম তৈরির ক্ষেত্রে আমরা মূলত স্বৈরাচারের মতো আচরণ করেছিলাম এবং আশা করেছিলাম আফগানরা আমাদের বানানো নিয়ম অনুসরণ করবে। আমেরিকার প্রশাসনিক কর্মকতাদের একধরনের অহংকার ছিল যে আমরাই সেরা, আমরা সব কিছু জানি। কিন্তু প্রকৃত সত্য হলো আমরা আফগানিস্তানকে অতটা ভালভাবে বুঝতে পারিনি।
“তবে এর পেছনেও কারণ আছে। আমরা আমাদের আফগান সহকারীদের ওপর তেমন একটা ভরসা করতে পারিনি। আপনারা বিভিন্ন মৌখিক সাক্ষাৎকারে দেখবেন আমেরিকান মিলিটারি সদস্যরা, যারা আফগানিস্তানে প্রশিক্ষক কিংবা পরামর্শদাতা হিসেবে কাজ করেছে, তাদের ধারণা আফগানরা যথেষ্ট যোগ্য নয়। আফগান আর্মির সদস্যরা লেখা পড়তে পারতো না, সোজা করে গুলি ছুঁড়তে পারতো না। তারা প্রায়ই প্রশিক্ষণ ছেড়ে চলে যেত। তাই প্রশিক্ষণের মাধ্যমে একটি সক্ষম আফগান আর্মি তৈরি করাটা বেশ কঠিন কাজ ছিল। তাছাড়া সত্যি বলতে, বিষয়টা কাজ করবে কিনা এব্যাপারে আফগানিস্তানের মাঠপর্যায়ে কাজ করা আমেরিকানদেরও খুব বেশি আত্মবিশ্বাস ছিল না। কিন্তু প্রকাশ্যে, আমেরিকান জেনারেলরা জনগণকে এই বলে আশ্বস্ত করতেন যে সবকিছু ঠিকঠাক চলছে। মূলত এজন্যই বিশাল একটা ফারাক তৈরি হচ্ছিল, আমেরিকান জনগণকে একধনের কথা বলা হতো আর পর্দার আড়ালে অবস্থানকারী মিলিটারি কর্মকর্তাদের মনে থাকতো ভিন্ন কথা।”
এক সাক্ষাৎকারে ফরেন সার্ভিস অফিসার মাইকেল মেট্রিনকো বলেছিলেন, আফগানিস্তানের মাঠপর্যায়ে থাকা সিআইএ কর্মকর্তারা দেশটাকে বুঝতে পারেননি
“আমেরিকা আসলে দেশটাকে ভালভাবে বুঝতে পারেনি। মাইকেল মেট্রিনকো একজন দক্ষ ফরেন সার্ভিস অফিসার। তার মতো অফিসার নেই বললেই চলে। কারণ তিনি আফগানের অন্যতম জাতীয় ভাষা ‘দারি’তে কথা বলতে পারেন এবং তিনি খুব কঠোরতার সাথে বিভিন্ন বিষয় মূল্যায়ন করতেন। সিআইএ এবং আমেরিকার প্রশাসনের কেউ তার মতো এত কঠোরতা অবলম্বন করতো না।
“তিনি জানান, সিআইএ ভেবেছিল আফগানিস্তানে তারা স্থানীয় আফগানদের মতো গাল ভরা দাড়ি আর পোশাক পরে আসবে, বিভিন্ন আফগান সেনাপতিদের হাতে ব্যাগ ভর্তি টাকা তুলে দিয়ে তাদের সবাইকে নিজেদের পক্ষে টেনে নিতে পারবে। কিন্তু মেট্রিনকো যখন আফগানী ভাষায় কোনো আফগান প্রবীণের সাথে কথা বলতেন, তখন আফগানরা আমেরিকানদের উপলব্ধিগত অন্ধত্ব নিয়ে হাসিঠাট্টা করতো। আমেরিকানরা যে আফগানিস্তানকে বুঝতেই পারছে না এটা তাদের কাছে কৌতুকের বিষয় ছিল।
“এরকমটা আমরা পুরো যুদ্ধ জুড়েই দেখতে পেয়েছি। বুশ এবং বারাক ওবামা দুজনেরই সময়কালে কর্মরত ছিলেন লেফটেন্যান্ট জেনারেল ডগলাস লুউট। তিনি এক সাক্ষাৎকারে বলেছিলেন, আমাদের বিন্দু পরিমাণ ধারণা ছিল না আমরা আসলে কী করছি। আমরা আফগানিস্তানকে ভিত্তিগত দিক থেকে বোঝার ব্যাপারে বঞ্চিত ছিলাম। এভাবে ওখানে ২০ বছর থাকলেও আমাদের পক্ষে কখনোই দেশটাকে বোঝা সম্ভব হয়নি। ওখানকার যুদ্ধে হারার পেছনে এটা একটা বড় কারণ।”
সূত্র: Wbur
অনুবাদ: সাঈম শামস্
আপনার মতামত জানানঃ