২ দিন পার হয়ে যাচ্ছে অথচ জামালপুরের ইসলামপুর উপজেলার একটি আবাসিক মাদ্রাসা থেকে নিখোঁজ তিন ছাত্রীর এখনো সন্ধান পাওয়া যায়নি। গত রবিবার (১২ সেপ্টেম্বর) ভোর রাতে মাদ্রাসা থেকে তারা নিখোঁজ হয়। এ ব্যাপারে সোমবার (১৩ সেপ্টেম্বর) বিকালে নিখোঁজ শিক্ষার্থীদের উদ্ধারে মাদ্রাসার মুহতামিম ইসলামপুর থানায় সাধারণ ডায়েরি (জিডি) করেছেন। এ ঘটনায় জিজ্ঞাসাবাদের জন্য ওই মাদ্রাসার চার শিক্ষককে আটক করে পুলিশ। গতকাল সোমবার দিবাগত রাত দেড়টায় পুলিশ ওই শিক্ষকদের আটক করে। একই সঙ্গে মাদ্রাসাটি আপাতত বন্ধ করে দেয় পুলিশ।
নিখোঁজ শিক্ষার্থীরা হলো— উপজেলার গাইবান্ধা ইউনিয়নের পোড়ারচর সরদারপাড়া গ্রামের মাফেজ শেখের মেয়ে মীম আক্তার (৯), গোয়ালেরচর ইউনিয়নের সভুকুড়া মোল্লাপাড়া গ্রামের মনোয়ার হোসেনের মেয়ে মনিরা (১১) এবং সভুকুড়া গ্রামের সুরুজ্জামানের মেয়ে সূর্যবানু (১০)।
ইসলামপুর থানা সূত্রে জানা যায়, নিখোঁজ ওই তিন শিশু দারুত তাক্বওয়া মহিলা ক্বওমী মাদ্রাসার দ্বিতীয় শ্রেণির ছাত্রী। মাদ্রাসাটির অবস্থান গোয়ালেরচর ইউনিয়নের মেজর জেনারেল খালেদ মোশাররফ বীরউত্তম সেতুর পুর্বপাড়ের বাংলা বাজার এলাকায়।
জিডি ও পুলিশ সূত্রে জানা গেছে, ওই তিন ছাত্রী মাদ্রাসার একটি কক্ষে থাকে। রোববার রাতে তারা ওই কক্ষেই ঘুমিয়ে পড়ে অন্য আবাসিক শিক্ষার্থীদের সঙ্গে। সোমবার ফজরের নামাজ পড়ার জন্য ঘুম থেকে সব শিক্ষার্থীকে জাগিয়ে দেওয়া হয়। অন্যান্য শিক্ষার্থীর মতো ওই তিনজনও নামাজ পড়ার প্রস্তুতি নেয়। নামাজের পর তাদের তিনজনকে খুঁজে পাওয়া যাচ্ছিল না। পরে তাদের পরিবারকে বিষয়টি জানানো হয়। পরিবার ও মাদ্রাসা কর্তৃপক্ষ বিভিন্ন জায়গায় খোঁজাখুজি করেছে। তবে তাদের কোনো সন্ধান পাওয়া যায়নি। বিকেলে ইসলামপুর থানায় জিডি করা হয়।
মাদ্রাসার মুহতামিম মাওলানা মো. আসাদুজ্জামান বলেন, ‘মাদ্রাসা আবাসিক হওয়ায় শিক্ষার্থীরা রাতে মাদ্রাসা কক্ষেই থাকে। ঘটনার দিন ভোর রাতে শিক্ষার্থীদের ফজরের নামাজ পড়ার জন্য ঘুম থেকে জাগানো হয়। অন্যান্য ছাত্রীর মতোই দ্বিতীয় শ্রেণির ওই তিন ছাত্রীও নামাজের প্রস্তুতি নেয়। নামাজের পর থেকে তাদের আর খুঁজে পাওয়া যাচ্ছে না। তাদের উদ্ধারে থানায় জিডি করেছি।’
ওই তিন ছাত্রী মাদ্রাসার একটি কক্ষে থাকে। রোববার রাতে তারা ওই কক্ষেই ঘুমিয়ে পড়ে অন্য আবাসিক শিক্ষার্থীদের সঙ্গে। সোমবার ফজরের নামাজ পড়ার জন্য ঘুম থেকে সব শিক্ষার্থীকে জাগিয়ে দেওয়া হয়। অন্যান্য শিক্ষার্থীর মতো ওই তিনজনও নামাজ পড়ার প্রস্তুতি নেয়। নামাজের পর তাদের তিনজনকে খুঁজে পাওয়া যাচ্ছিল না।
গোয়ালেরচর ইউনিয়ন বিট পুলিশের তদারকি কর্মকর্তা ও ইসলামপুর থানার সেকেন্ড অফিসার এসআই মাহমুদুল হাসান মোড়ল বলেন, ‘তিন ছাত্রী নিখোঁজের খবর পেয়ে তাৎক্ষণিক ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছি। নিখোঁজ ছাত্রীদের উদ্ধারে চেষ্টা চালাচ্ছি।’
নিখোঁজ মীম আক্তারের মা হাসিনা বেগম বলেন, ‘মীম আক্তার এক বছর ধরে এই মাদ্রাসায় পড়ে। ১৫ দিন আগে মীমকে মাদ্রাসায় রেখে আসি। রোববার দুপুরে মাদ্রাসার হুজুর মীমের নিখোঁজের খবর দেন। আজ থানায় জিডি করা হয়েছে।’
নিখোঁজ মনিরার বাবা মনোয়ার হোসেন বলেন, ‘৯ দিন আগে মেয়েকে মাদ্রাসায় রেখে এসেছি। কাল থেকে এখন পর্যন্ত মেয়ের সন্ধান পাইনি।’
নিখোঁজ সূর্যবানুর বাবা সুরুজ্জামান বলেন, ‘১৫ দিন আগে মেয়েকে মাদ্রাসায় রেখে আসি। বিভিন্ন জায়গায় খোঁজাখুঁজি করেও মেয়ের সন্ধান মিলছে না।’
ইসলামপুর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মাজেদুর রহমান জানান, গোয়ালেরচর ইউনিয়নের বাংলা বাজার এলাকায় দারুত তাক্বওয়া মহিলা ক্বওমী মাদ্রাসা থেকে রবিবার ভোরে গাইবান্ধা ইউনিয়নের পোড়ারচর সরদারপাড়া গ্রামের মাফেজ শেখের মেয়ে ৯ বছর বয়সী মীম আক্তার, গোয়ালেরচর ইউনিয়নের সভূকুড়া গ্রামের সুরুজ্জামানের মেয়ে ১০ বছর বয়সী সূর্যবানু ও মোল্লাপাড়া গ্রামের মনোয়ার হোসেনের মেয়ে ১১ বছর বয়সী মনিরা আক্তার নামের দ্বিতীয় শ্রেণির তিন শিক্ষার্থী রহস্যজনকভাবে নিখোঁজ হয়।
এ ঘটনায় সোমবার বিকেলে মাদ্রাসার মুহতামিম মাওলানা মো. আসাদুজ্জামান ইসলামপুর থানায় একটি সাধারণ ডায়েরি করেন।
পরে রাতে ইসলামপুর সার্কেলের এএসপি সুমন মিয়ার নেতৃত্বে পুলিশ মাদ্রাসার সকল শিক্ষার্থীদের অভিভাবকদের হাতে তুলে দিয়ে মাদ্রাসাটি বন্ধ করে দেয়।
এ সময় প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদের জন্য মাদ্রাসার মুহতামিম মাওলানা মো. আসাদুজ্জামান, মাদ্রাসা শিক্ষক ইলিয়াস হোসেন, রাবেয়া ও শুকরিয়াকে আটক করা হয়।
জামালপুরের সিনিয়র সহকারী পুলিশ সুপার (ইসলামপুর সার্কেল) মো. সুমন মিয়া বলেন, তিন ছাত্রী নিখোঁজের বিষয়ে পুলিশের তদন্ত শুরু হয়েছে। মাদ্রাসাটি আপাতত বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে। জিজ্ঞাসাবাদের জন্য চার শিক্ষককে আনা হয়েছে। তাদের জিজ্ঞাসাবাদ চলছে। তবে এখনো ওই ছাত্রীদের সন্ধান পাওয়া যায়নি। তবে দ্রুত সময়ের মধ্যেই উদ্ধারের চেষ্টা করা হচ্ছে।
সংশ্লিষ্ট বিশেষজ্ঞরা বলেন, আলিয়া মাদ্রাসা ছাড়া অন্য মাদ্রাসাগুলোতে সরকারের নিয়ন্ত্রণ বা তদারকি সেভাবে নেই। সেজন্য যৌন নির্যাতন বা শিশু শিক্ষার্থীদের ওপর নির্যাতনের সুযোগ থাকে। এছাড়া সেখানে পরিবেশ এমন যে, শিশু শিক্ষার্থীদের ওপর নির্যাতনের অভিযোগ অনেক সময় প্রকাশও হয় না। কওমি, এবতেদায়ী বা নূরানী-বিভিন্ন ধরনের মাদ্রাসা পরিচালনার জন্য বেসরকারি উদ্যোগে কর্তৃপক্ষ যারা রয়েছে, তাদের তদারকি বাড়ানো উচিত বলে মনে করেন তারা।
বিশেষজ্ঞরা বলেন, অনেকে মনে করেন এরা আদব কায়দা শিক্ষা দেন। নৈতিকতা শিক্ষা দেন। সে কারণে ধর্মীয় বিশ্বাস থেকে হোক বা নিরাপত্তার কথা ভেবে অনেকে ছেলেমেয়েদের মাদ্রাসায় পড়াতে দেন। কিন্তু বাস্তবতায় দেখা যাচ্ছে, যে নিরাপত্তার কথা ভেবে মাদ্রাসায় ছেলেমেয়েদের পড়াতে দেয়া হয় সেখানে আদৌ নিরাপদ নয়। দেখা যায় ছেলেরাও নিরাপদ নয় এসব তথাকথিত হুজুরদের কাছে। প্রায় প্রতিদিনই ছাত্র/ছাত্রী ধর্ষনের সংবাদ আসে। মাদ্রাসাগুলোতে ধর্ষণ উদ্বেগজনক হারে বড়ে গেছে৷ এমন পরিস্থিতিতে উক্ত মাদ্রাসা থেকে নিখোঁজ ছাত্রীদের বিষয়ে আশঙ্কা উড়িয়ে দেওয়া যায় না। মাদ্রাসা থেকে হঠাত তিন ছাত্রীর উধাও হয়ে যাওয়া নিশ্চয়ই আশঙ্কা ও আতঙ্কের বিষয়।
এসডব্লিউ/এমএন/কেএইচ/১৭৫২
আপনার মতামত জানানঃ