
ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে দায়ের করা মামলায় কার্টুনিস্ট আহমেদ কবির কিশোরসহ সাতজনের বিরুদ্ধে গুজব ছড়ানো এবং সরকার বিরোধী কর্মকাণ্ড চালানোর অভিযোগ গ্রহণ করেছে ঢাকার একটি ট্রাইব্যুনাল।
অন্য ছয় আসামি হলেন হাঙ্গেরি ভিত্তিক উদ্যোক্তা জুলকারনাইন সায়ের খান ওরফে সামি, সুইডিশ-বাংলাদেশি সাংবাদিক তাসনিম খলিল, বিএলই সিকিউরিটিজের ব্যবস্থাপনা পরিচালক ও ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের শেয়ারহোল্ডার-পরিচালক মিনহাজ মান্নান ইমন, রাজনৈতিক-নাগরিক সংগঠন রাষ্ট্রচিন্তার সদস্য দিদারুল ইসলাম, আশিক ইমরান এবং স্বপন ওয়াহেদ।
এই ছয় জনের মধ্যে কিশোর, মিনহাজ এবং দিদারুলকে এর আগে গ্রেপ্তার করা হয়েছিল এবং তারা এখন জামিনে আছেন। এছাড়া অন্যরা পলাতক আছেন।
আজ রোববার ঢাকা সাইবার ট্রাইব্যুনালের বিচারক মোহাম্মদ আশ সামস জগলুল হোসাইন মামলা ডকেট এবং অন্যান্য কাগজপত্র পর্যালোচনা পূর্বক এ অভিযোগ গ্রহণ করেন।
অভিযোগপত্রে সামি, তাসনিম, আশিক ও স্বপনকে ‘পলাতক’ দেখানোয় তাদের বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করেছে ট্রাইব্যুনাল।
বিচারক ৩০ সেপ্টেম্বর এই মামলায় আসামিদের বিরুদ্ধে চার্জ গঠনের শুনানির দিন ধার্য করেছেন।
এ বিষয়ে কার্টুনিস্ট আহমেদ কবির কিশোরের মতামত জানতে চাওয়া হলে তিনি স্টেটওয়াচকে বলেন,
“চার্জশিট দিলো আজ। সবচেয়ে মজা লেগেছে আদালত চিৎকার করে আসামী মুশতাক হাজির বলে ডাকছে। রাষ্ট্রতো জানেই না মুশতাক মারা গেছে। বাংলাদেশ রাষ্ট্র সাধারন মানুষের অভিভাবকত্ব হারিয়েছে বহু আগে। এই দেশটি গুটিকতেক ধনীর রাষ্ট্র।”
উল্লেখ্য যে, গত ২৫ ফেব্রুয়ারি কাশিমপুর হাই সিকিউরিটি কারাগারে মারা যাওয়ার কারণে লেখক মুসতাক আহমেদের নাম অভিযোগপত্র থেকে বাদ দেওয়া হয়।
ট্রাইব্যুনাল যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক সাংবাদিক শাহেদ আলমকেও অব্যাহতি দিয়েছেন। একইসঙ্গে জার্মানিভিত্তিক ব্লগার আসিফ মহিউদ্দিন এবং ফিলিপকে এই অভিযোগ থেকে বাদ দিয়েছেন তদন্ত কর্মকর্তা। কারণ তাদের এই ঘটনার সঙ্গে যোগসূত্র পাওয়া যায়নি।
কাউন্টার টেররিজম অ্যান্ড ট্রান্সন্যাশনাল ক্রাইম (সিটিটিসি) ইউনিটের সাব-ইন্সপেক্টর ও তদন্ত কর্মকর্তা মো. আফছার আহমেদ গত ১৩ জুন ঢাকার চিফ মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে সম্পূরক অভিযোগপত্র জমা দেন।
অভিযোগে যা উল্লেখ আছে
এজাহারের নথিতে বলা হয়েছে, কার্টুনিস্ট কিশোর তার ‘আমি কিশোর’ ফেসবুক অ্যাকাউন্টে দেশের করোনাভাইরাস পরিস্থিতিতে সরকারের ভূমিকা নিয়ে বিভিন্ন সমালোচনামূলক কার্টুন-পোস্টার পোস্ট করতেন। মুশতাক তার ফেসবুক অ্যাকাউন্টে কিশোরের সেসব পোস্টের কয়েকটি শেয়ার করেছেন।
এছাড়া আসামিরা ‘আই এম বাংলাদেশি’ নামে ফেসবুক পেজে রাষ্ট্রের ভাবমূর্তি বা সুনাম ক্ষুণ্ন করতে বা বিভ্রান্তি ছড়ানোর উদ্দেশে অপপ্রচার বা গুজবসহ বিভিন্ন ধরনের পোস্ট দিয়েছেন, যা জনমনে বিভ্রান্তি সৃষ্টি এবং আইনশৃঙ্খলার অবনতি ঘটায়।
এ ছাড়া হোয়াটসঅ্যাপ ও ফেসবুক মেসেঞ্জারে তাসনিম খলিল, শায়ের জুলকারনাইন, শাহেদ আলম, আসিফ মহিউদ্দিনের সঙ্গে রাষ্ট্রের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্রমূলক চ্যাটিংয়ের প্রমাণ পাওয়া গেছে।
২০২০ সালের ৫ মে র্যাব-৩-এর ওয়ারেন্ট অফিসার মো. আবু বকর সিদ্দিক রমনা থানায় কার্টুনিস্ট আহমেদ কবির কিশোর, মুশতাক আহমেদ, দিদারুল ইসলাম ভূঁইয়া, মিনহাজ মান্নানসহ ১১ জনের বিরুদ্ধে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে মামলা করেন।
মামলায় তাদের বিরুদ্ধে পরস্পর যোগসাজশে দীর্ঘদিন ধরে বিভিন্ন ফেসবুক অ্যাকাউন্ট ব্যবহার করে জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা, মুক্তিযুদ্ধ, মহামারি করোনাভাইরাস সম্পর্কে গুজব, রাষ্ট্র ও সরকারের ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ন করতে অপপ্রচার ও বিভ্রান্তি ছড়িয়ে রাষ্ট্রের জনগণের মধ্যে বিভ্রান্তি, অস্থিরতা ও বিশৃঙ্খলা সৃষ্টির অভিযোগ আনা হয়।
মামলার পর গ্রেপ্তার হয়ে ২০২০ সালের সেপ্টেম্বরে মিনহাজ মান্নান ও দিদারুল আলম ভূঁইয়া জামিনে মুক্তি পান। কার্টুনিস্ট কিশোর ও লেখক মুশতাক কারাগারে ছিলেন। এরপর গত ২৫ ফেব্রুয়ারি মুশতাক কাশিমপুর কারাগারে মারা যান।
এদিকে গত ৪ ফেব্রুয়ারি মামলার পূর্বের তদন্ত কর্মকর্তা রমনা থানার পুলিশের উপপরিদর্শক (এসআই) মহসীন সরদার আদালতে একটি চার্জশিট দাখিল করেন। সেখানে কার্টুনিস্ট কিশোর ও রাষ্ট্রচিন্তার দিদারুল এবং লেখক মুশতাককে অভিযুক্ত করা হয়েছিল। অন্যদিকে শায়ের জুলকারনাইন ওরফে সামি ও মিনহাজ মান্নান, আশিক মোহাম্মাদ ইমরান, তাসনীম খলিল, মো. ওয়াহিদুন্নবীসহ ৮ জনের অব্যাহতি চাওয়া হয়।
চার্জশিটে আল-জাজিরা টেলিভিশনে সাবেক সেনাপ্রধানকে নিয়ে প্রচারিত প্রতিবেদনের প্রধান চরিত্র হিসেবে সামিউল ইসলাম খান ওরফে শায়ের জুলকারনাইন ওরফে সামির অব্যাহতি পাওয়া নিয়ে সংবাদপত্রে আলোচনা-সমালোচনা হওয়ায় মামলাটি পরে অধিকতর তদন্তে পাঠানো হয়। অধিকতর তদন্ত শেষে এবার সাতজনকে অভিযুক্ত করে চার্জশিট দাখিল করা হলো।
এসডব্লিউ/এমএন/এসএস/১৮৪৪
আপনার মতামত জানানঃ