করোনা সংক্রমণ রোধে টিকার বিকল্প কোনো মাধ্যম নেই। যদিও মনে করা হতো শিশুরা করোনা সংক্রমণের কম ঝুঁকিতে আছে, তবে সম্প্রতি সে তথ্য ভুল প্রমাণিত হয়েছে। এজন্য যুক্তরাষ্ট্রসহ বেশ কয়েকটি দেশ ১২ বছর থেকে শিশুদের টিকার আওতাভুক্ত করে আসলেও প্রথমবারের মত কিউবা ২ বছরের শিশুদেরও করোনা টিকা দেয়া শুরু করেছে গতকাল সোমবার (৬ সেপ্টেম্বর) থেকে। খবর বাসস/এএফপি।
এর আগে গত শুক্রবার দেশটি নিজেদের তৈরি আবদালা এবং সোবরানা ভ্যাকসিন দিয়ে ১২ বছর বা তার বেশি বয়সের শিশুদের জন্য টিকা কার্যক্রম শুরু করে। তবে, এ টিকা বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার স্বীকৃতি পায়নি এখনও।
অপ্রাপ্তবয়স্কদের টিকার ক্লিনিকাল ট্রায়াল সম্পন্ন করার পর গতকাল সোমবার থেকে দেশটি তাদের কেন্দ্রীয় প্রদেশ সিয়েনফুয়েগোসে ২ থেকে ১১ বছর বয়সীদেরকে টিকা দেওয়া শুরু করেছে।
এছাড়াও সোমবার থেকে দেশটির স্কুলগুলোতেও নতুন শিক্ষাবর্ষ শুরু হয়েছে। কিন্তু কিউবার বেশিরভাগ বাড়িতে ইন্টারনেট সংযোগ না থাকায় টেলিভিশন প্রোগ্রামের মাধ্যমে শিক্ষা কার্যক্রম চলছে সেখানে। ২০২০ সালের মার্চ মাস থেকে বন্ধ থাকা স্কুলগুলো পুনরায় খোলার আগে সকল শিশুদের টিকা নিশ্চিত করার লক্ষ্য রয়েছে কিউবার। কম্যুনিস্ট এ দ্বীপে মোট ১১.২ মিলিয়ন লোকের বাস।
এদিকে চীন, সংযুক্ত আরব আমিরাত এবং ভেনেজুয়েলার মতো দেশগুলোও ঘোষণা করেছে যে তারা ছোট শিশুদেরকে টিকা দেওয়ার পরিকল্পনা করছে। এদিকে সোমবার ৬ থেকে ১২ বছরের শিশুদের জন্য চীনা সিনোভ্যাক টিকার অনুমোদন দিয়েছে চিলি।
বিশ্বের বেশ কয়েকটি দেশ ইতোমধ্যেই ১২ বছর বয়সীদেরকে টিকা দেওয়া শুরু করেছে, এবং কিছু দেশে ছোট শিশুদের উপরেও টিকা কার্যকারিতার পরীক্ষা চালানো হচ্ছে।
কিউবার টিকাগুলো ল্যাটিন আমেরিকায় তৈরী প্রথম টিকা
মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের নোভাভ্যাক্স এবং ফ্রান্সের সানোফি টিকার মতো রিকম্বিন্যান্ট প্রোটিন প্রযুক্তির উপর ভিত্তি করে টিকাগুলো তৈরি। তবে নোভাভ্যাক্স ও সানোফিও বর্তমানে ডব্লিউএইচও’র অনুমোদনের অপেক্ষায় রয়েছে। বর্তমানে ব্যবহৃত অন্যান্য টিকার মতো রিকম্বিন্যান্ট ভ্যাকসিন সংরক্ষণে তীব্র হিমায়নের প্রয়োজন পড়ে না।
করোনা মহামারি শুরুর পর থেকে দেশটিতে মৃত্যুবরণ করা ৫,৭০০ জনের মধ্যে প্রায় অর্ধেকের মৃত্যু হয়েছে গত মাসেই। এ সংখ্যাটি কিউবার মোট করোনাভাইরাস জনিত কেসের প্রায় এক- তৃতীয়াংশ।
দ্রুত স্কুল খোলার আহ্বান ইউনিসেফের
বিশ্বব্যাপী স্কুলগুলো যত তাড়াতাড়ি সম্ভব পুনরায় খোলার আহ্বান জানিয়েছে জাতিসংঘের শিশু তহবিল (ইউনিসেফ), কারণ “দীর্ঘমেয়াদী বন্ধের প্রভাব হবে তীব্র এবং এটি সমর্থন করা কঠিন।”
সাম্প্রতিক মাসগুলোতে করোনাভাইরাসের উচ্চ সংক্রমণ দেখা দিয়েছে কিউবায়। এর ফলে চাপ সৃষ্টি হয় দেশটির স্বাস্থ্য ব্যবস্থার উপর।
কিউবার বেশিরভাগ স্কুল বন্ধ রয়েছে ২০২০ সালের মার্চ থেকে। পরবর্তীতে গত বছরের শেষে কয়েক সপ্তাহের জন্য স্কুলগুলো খোলা হলেও জানুয়ারিতে আবার বন্ধ করে দেওয়া হয়।
এ বিষয়ে সরকার ঘোষণা করেছে যে, সকল শিশুকে টিকা দেওয়ার পর এ বছরের অক্টোবর এবং নভেম্বরে স্কুলগুলো ধীরে ধীরে পুনরায় চালু হবে।
বিশেষজ্ঞদের মতে, শিক্ষাজীবনের দিকটি বিবেচনা করে শিশুদেরও নিরাপদভাবে টিকার আওতায় আনা যায় কি না তা নিয়ে দ্রুত পদক্ষেপ দরকার। দীর্ঘদিন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধের ফলে প্রত্যেক শিশুর শিক্ষাজীবন থেকে শুরু করে মানসিক গঠন পর্যন্ত হুমকির মুখে পড়েছে।
এসডব্লিউ/এমএন/ডব্লিউজেএ/২৩৪২
আপনার মতামত জানানঃ