করোনা মহামারি অসুস্থতা এবং মৃত্যুর হার বাড়ানোর পাশাপাশি আরও নানান আনুসাঙ্গিক বিষয়ের হারও বাড়াতে কিংবা কমাতে প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষভাবে ভূমিকা রেখে আসছে। এর মধ্যে অন্যতম একটি বিষয় হলো শিশু নির্যাতন। করোনায় মানসিক চাপের কারণে শিশু নির্যাতনের হার বেড়েছে।
করোনাভাইরাস মহামারি শুরুর প্রথম বছরে গুরুতর শিশু নির্যাতনের ঘটনা ২০ শতাংশ বেড়ে গেছে ইংল্যান্ডে। গার্ডিয়ান এক প্রতিবেদনে এ তথ্য জানিয়েছে।
গার্ডিয়ানের ওই প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, সে দেশে শিশু মৃত্যুর হার ২০ শতাংশ বেড়ে গেছে। জানা গেছে, গত এক বছরে ইংল্যান্ডে শিশু নির্যাতনের গুরুতর ঘটনা ঘটেছে ৫৩৬টি। আগের বছর এই সংখ্যা ছিল ৪৪৯টি। পাঁচ বছর আগের তুলনায় ইংল্যান্ডে শিশু নির্যাতনের গুরুতর ঘটনা বেড়েছে ৪১ শতাংশ। গত বছর শিশু নির্যাতনের যে ঘটনা সামনে এসেছে, তার মধ্যে ৩৬ শতাংশের বয়স এক বছরের কম।
স্থানীয় সরকার (এলজিএ) বলছে, শিশু নির্যাতন বেড়ে যাওয়ার এই ঘটনা দুঃখজনক এবং বেশ উদ্বেগের। করোনাভাইরাস মহামারির কারণে লকডাউনে থেকে পরিবারের লোকজন মানসিকভাবেও চাপে ছিল। সে কারণে এ ধরনের ঘটনা বেড়েছে বলে মনে করছে তারা।
২০০০ সালে স্কটল্যান্ড ইয়ার্ডের প্রকাশিত এক পরিসংখ্যান থেকে জানা যায়, যুক্তরাজ্যে প্রতি ২০০ প্রাপ্তবয়স্কের মধ্যে একজনের বেশি পেডোফিল৷ ২০১২-১৩-তে ইংল্যান্ড এবং ওয়েলস-এ ষোল বছরের কম বয়সি ১৮,৯১৫ শিশু যৌন হয়রানির শিকার হয়েছে৷
যুক্তরাষ্ট্রে বাবা-মায়ের সাথে সাক্ষাৎকারকালীন সময়ে তারা বলেন, যেসব নির্যাতনের অভিযোগ দায়ের করা হয়েছে তার তিনভাগের দু’ভাগই শিশুর আচরণ ঠিক করার জন্য শাস্তি দিতে গিয়ে হয়েছে। অন্য দিকে কানাডীয় একটি গবেষণায় দেখা গেছে তিন ভাগ কেসেই শারীরিক নির্যাতন হয়েছে শারীরিক শাস্তির জন্য।
অন্য গবেষণায় দেখা গেছে শিশু এবং বাচ্চারা যারা বড়দের একের অধিকবার পিটুনি খেয়েছে তাদের আঘাত মারাত্মক অথবা তারা এমন আঘাত পেয়েছে যার জন্য মেডিকেল সেবা নিতে হয়েছে। এমন দুব্যবহারের কারণ হিসেবে দেখা যায় শিশুদের অবাধ্যতা ও অনিচ্ছা বা না মেনে নেওয়ার মনোভাব।
সাধারণ শারীরিক শাস্তি হিসেবে যেসব শাস্তি পরে শিশু নির্যাতন হিসেবে গন্য করা হয়েছে তা বিশ্লেষণ করে দেখে গেছে বাবা-মায়েরা নিজেদের রাগ সামলাতে না পারায় অথবা নিজের শারীরিক শক্তি বুঝতে না পারা অথবা শিশুর শারীরিক অসুস্থতার কথা জানা না থাকায় তা মারাত্মক পর্যায়ে গড়ায়।
কিছু বিশেষজ্ঞ মতামত দেন যে সাংস্কৃতিক বিশ্বাসের ফলে শারীরিক শাস্তি প্রদান, শিশু নির্যাতনের আরেকটি কারণ এবং তা সমাধানে বিভিন্ন উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। যেসব শিশু অপরিকল্পিত গর্ভধারনের কারণে হয়েছে তারা বেশিরভাগ সময় নির্যাতন অথবা অবহেলার শিকার হয়। অধিকন্তু, অপরিকল্পিত গর্ভধারন নির্যাতনমুখি বা খারাপ সম্পর্ক স্থাপনের ফলে হয়ে থাকে এবং সেখানে গর্ভধারনের সময় শারীরিক হিংসাত্মক আচরণ সম্ভাবনা থাকে।
এসডব্লিউ/এমএন/ডব্লিউজেএ/১৮৫৫
আপনার মতামত জানানঃ