আফগানিস্তান থেকে সেনা প্রত্যাহারের ফলে তালিবানরা দখল করে নিতে সক্ষম হলো আফগান ভূমি। আফগানিস্তান থেকে সেনা সরানোর দায় যুক্তরাষ্ট্রের ঘাড়েই চাপালেন জার্মানির চ্যান্সেলর অ্যাঙ্গেলা মার্কেল। দলীয় নেতৃত্বের সঙ্গে বৈঠকে আফগানিস্তান পর্ব নিয়ে নিজের মত প্রকাশ করেছেন তিনি।
মার্কেলের মতে, ঘরোয়া রাজনৈতিক কারণেই আফগানিস্তান থেকে হাত উঠিয়ে নিয়েছে ওয়াশিংটন, যার জেরেই সে দেশে ক্ষমতায় ফিরেছে তালিবান।
তিনি বলেন, আফগানিস্তান থেকে মার্কিন সেনা প্রত্যাহারের সিদ্ধান্তের পর কেটে গেছে বেশ কয়েকটি দিন। কাবুলের পালাবদলও ঘটেছে। এই আবহে আফগানিস্তান নিয়ে জার্মানির চ্যান্সেলরের মন্তব্য তাৎপর্যপূর্ণ বলেই মনে করছে সংশ্লিষ্টরা।
মার্কেল আরও বলেন, আফগানিস্তানে সেনা নামানোর দুই দশক পরে সেখান থেকে ন্যাটোর সেনা প্রত্যাহারের চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত যুক্তরাষ্ট্রই নিয়েছে। আমরা সবসময় বলেছি, যুক্তরাষ্ট্র যদি থাকে তা হলে আমরাও থাকব। মার্কিন সেনা প্রত্যাহারের ফলেই তালেবান ক্ষমতায় ফিরে এসেছে।
ঘটনাপ্রবাহ দেখে মার্কিন বিশ্লেষকরাও এখন বলছেন, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের এ ‘পরাজয়’ আসলে আকস্মিক কিছু নয়, এটা ঘটেছে বহু বছর ধরে – একটু একটু করে।
মার্কিন সাংবাদিক ও বিশ্লেষক ফরিদ জাকারিয়া সিএনএন-এ এক অনুষ্ঠানে বলেছেন, তালিবানের এই পুনরুত্থান আকস্মিক নয়, বরং গত ১০-১৫ বছর ধরেই তালিবানের ধীরে ধীরে শক্তিবৃদ্ধি হচ্ছিল।
আফগানিস্তানে ২০০১ সালের অক্টোবর মাসে শুরু হওয়া মার্কিন বাহিনীর প্রচণ্ড আক্রমণে তালিবানের পতনের পর কাবুলে অনেক তরুণের দাড়ি কামিয়ে ফেলার দৃশ্য টিভির পর্দায় দেখানো হয়েছিল। কিন্তু আসলে তালিবান কখনোই সম্পূর্ণ পরাজিত হয়নি।
আফগানিস্তানে বিপুল পরিমাণ বিদেশি সৈন্যের উপস্থিতি সত্ত্বেও তালিবান আবারও সংগঠিত হয়ে ক্রমাগত তাদের শক্তি বাড়ায়, আফগানিস্তানের নানা অঞ্চলে আবার তাদের প্রভাব বিস্তার করে।
আফগানিস্তানের বিস্তীর্ণ অঞ্চলকে তারা বিপজ্জনক করে তুলেছিল এবং তাদের চোরাগোপ্তা বা আত্মঘাতী আক্রমণ, ঘরে তৈরি বোমা বিস্ফোরণ ও সহিংসতা বছরের পর বছর ধরে অব্যাহতভাবেই চলছিল। কাবুলে তারা বহু হামলা চালিয়েছে, এবং ২০১২ সালের সেপ্টেম্বরে তালিবান এমনকি নেটো জোটের ক্যাম্প বাস্টিয়ন ঘাঁটিতেও এক বিরাট দুঃসাহসিক অভিযান চালায়।
অন্যদিকে তালিবানের ওপর মার্কিন ও নেটো বাহিনীর অনেক বিমান হামলায় নিহত হয় অসংখ্য বেসামরিক আফগান – যা মার্কিন সামরিক প্রয়াস সম্পর্কে গুরুতর প্রশ্নের জন্ম দেয়।
ওয়াশিংটন পোস্ট দৈনিকের সাংবাদিক-বিশ্লেষক ইশান থারুর লিখেছেন, তালিবানের আক্রমণের মুখে আফগানিস্তান যেভাবে এত দ্রুতগতিতে ভেঙে পড়ছে – তা “যুক্তরাষ্ট্রের এক দীর্ঘ ও ধীরগতির পরাজয়।” তার মতে, ২০০১ সালে তালিবান যখন ক্ষমতাচ্যুত হয়েছিল – তার পরবর্তী ২০ বছরের মধ্যে এখনই তারা সবচেয়ে শক্তিশালী অবস্থানে আছে।
তিনি বলছেন, পরিস্থিতি যে এমন হতে পারে তার আভাস অনেক আগেই পাওয়া গিয়েছিল। আফগানিস্তানে মার্কিন সামরিক তৎপরতা এবং দেশ-গঠনের প্রক্রিয়া যে ব্যর্থ হচ্ছে – তা অনেক দিন ধরেই স্পষ্ট হয়ে গিয়েছিল। যুক্তরাষ্ট্রের মেরিল্যান্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের আন্তর্জাতিক সম্পর্কের শিক্ষক এবং আফগান রাজনীতি ও নিরাপত্তা বিশ্লেষক ড. আসিম ইউসুফজাই বিবিসিকে বলেছেন, আমেরিকানদের কৌশল ছিল আফগানিস্তানের প্রধান শহরগুলোকে কব্জায় রাখা। কিন্তু শহরের বাইরে গ্রাম-গঞ্জ তালিবানের নিয়ন্ত্রণে থেকে গিয়েছিল। কিন্তু মার্কিন রাজনৈতিক ও সামরিক নেতৃত্ব তা স্বীকার করতে চাননি।
এসডব্লিউ/এমএন/ডব্লিউজেএ/১৯৩১
আপনার মতামত জানানঃ